জহুর হোসেন চৌধুরী: সাংবাদিকতার অনন্য ব্যক্তিত্ব যিনি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জহুর হোসেন চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রবাদতুল্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী। ২৭ জুন ২০২২ তাঁর শততম জন্মদিন। তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে অধিকারবঞ্চিত বাঙালিদের স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন–সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন স্পষ্টবক্তা ও দৃঢ়চেতা মানুষটি। রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। যৌবনে বামধারার রাজনীতির সঙ্গে ছিল যুক্ততা, প্রীতিধন্য ছিলেন বিশ্ববিশ্রুত রাজনীতিক এম এন রায়ের। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ৬৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেসক্লাবেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন (১৯৫৪-৫৬) তিনি।

জহুর হোসেন চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস ছিল ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর গ্রামে। বাবা সাদাত হোসেন চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মাত্র দুই বছর বয়সে তাঁর মাতৃবিয়োগ ঘটে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। মারাত্মক অসুস্থতার কারণে এমএ পরীক্ষা দিতে পারেননি। সাংবাদিকতাজীবনের সূচনা কলকাতায়, খালাতো ভাই নজরুল-সুহৃদ হবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত বুলবুল-এ। কলকাতার স্টেটসম্যান, কমরেড, স্টার অব ইন্ডিয়ায় কাজ করেছেন। দেশভাগের আগে কিছুদিন সরকারি চাকরি করেন। তিনি ১৯৪৭ সালের পর স্থায়ীভাবে চলে আসেন ঢাকায়, কাজ করেন সরকারের জনসংযোগ দপ্তরে। এরপর তাঁর আবার সাংবাদিকতা পেশায় প্রত্যাবর্তন। উপাত্ত, পাকিস্তান অবজারভার—এরপর যোগ দেন দৈনিক সংবাদ–এ। দীর্ঘ ১৭ বছর সংবাদের সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার পর কাউন্টার পয়েন্ট নামের একটি ইংরেজি সাময়িকী সম্পাদনা করেন। জহুর হোসেন আমৃত্যু ছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর একজন পরিচালক।

সমাজবদল ও প্রগতির আন্দোলনে তীক্ষ্ণধার লেখালেখির পাশাপাশি জহুর হোসেন সংগঠনেও ব্যাপৃত থেকেছেন। সদস্য ছিলেন মুসলিম ছাত্রলীগ, রেডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে। ’৫০–এর দশকের শেষভাগে ন্যাপ প্রাদেশিক কমিটির সদস্য ছিলেন। ’৫০ ও ’৬০–এর দশকে তিনি আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের কর্মসূচির সমন্বয়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অন্যতম অগ্রসেনানী ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোর। জহুর হোসেন ছিলেন পাক-চীন মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

কিংবদন্তি সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর লেখা ছিল প্রাঞ্জল, সহজবোধ্য, ব্যঙ্গবিদ্রুপে শাণিত, সব সময় সরস ও উপভোগ্য। তাঁর প্রজ্ঞা, অসাধারণ বিশ্লেষণী ক্ষমতা, গল্পচ্ছলে সুকঠিন সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রতিভা, পারঙ্গমতা ও সিদ্ধি এককথায় তুলনারহিত। অনেক লেখাই আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। তাঁর বিখ্যাত কলামের নাম ‘দরবার-ই-জহুর’। ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রয়াণের বেশ কয়েক বছর পর ১৯৮৫ সালে লালন প্রকাশনী বের করে তাঁর কলামের নির্বাচিত সংকলন দরবার-ই-জহুর। এবার জন্মশতবর্ষে আবিষ্কার প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত হলো আরও বর্ধিত কলেবরের একটি গ্রন্থ দরবার-ই-জহুর কলাম।

১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা সম্পর্কে জহুর হোসেন তাঁর কলামে বিশদ লিখেছেন। সেই লেখা থেকে আংশিক উদ্ধৃতি এখানে—
একুশে ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে সকাল ৯টায় দেখলাম, ছাত্ররা দলে দলে বিভক্ত হয়ে দোকান বন্ধ করার জন্য মালিকদের অতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছে, কিন্তু অধিকাংশ দোকানের মালিক পশ্চিমা হওয়ায় তারা সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করছে। যে দু–চারটি বাঙালির দোকান ছিল সেগুলো বন্ধই ছিল। যানবাহনও দেখলাম মোটামুটি চলছে। অফিসে গিয়ে শুনলাম ইসলামপুরে সব দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ। শহরের অন্যান্য অংশেও হরতাল আংশিকভাবে পালিত হচ্ছে। এগারোটার সময় টেলিফোনে শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিস্থিতি গরম হয়ে উঠেছে। ছাত্ররা পুলিশবেষ্টনী ভেঙে বার হওয়ার চেষ্টা করছে, পুলিশ বারবার লাঠিচার্জ করছে ও কাঁদানে গ্যাস বোমা ছুড়ছে। একজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রিকশাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হলাম। নাজিমুদ্দিন রোডের রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের ওপারে রিকশাওয়ালা যেতে রাজি না হওয়াতে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে হাজির হয়েই বুঝলাম, পরিস্থিতি সত্যই উত্তপ্ত। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া তখনো একটু একটু রয়েছে। রাস্তার এক পাশে ছাত্ররা চরম উত্তেজিতভাবে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ও নানা প্রকার সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েকজন আহত ছাত্রকে ধরাধরি করে মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজনের মাথায় পট্টি বাঁধাও দেখলাম। সিটি এসপি মাসুদকে দেখলাম ভীষণ উত্তেজিত, ছাত্রদের পাঞ্জাবি ভাষায় অশ্রাব্য গালিগালাজ করছে। ছাত্রদের যেমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখলাম, তাতে মনে হলো, পরিস্থিতি আরও গড়াবে। মেডিকেল কলেজের ফটক পর্যন্ত যেয়ে আবার নাজিমুদ্দিন রোডে ফিরে এসে রিকশায় করে অফিসে রওনা হলাম। সত্যি বলতে কি, আমার পরিষ্কার মনে হচ্ছিল যে কোনো সময় গুলি চলতে পারে। অফিসের দরজায় রিকশা থামার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো একজন সাইকেলে এসে খবর দিল, পুলিশ গুলি করেছে। অনেক ছাত্র মারা গিয়েছে।

মনটা প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও হৃৎপিণ্ডটা একমুহূর্তের জন্য থেমে গেল। অস্বীকার করব না, এই ঘটনার তাৎপর্য তখনো পুরো উপলব্ধি করিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর পেলাম, শহরের অবস্থা অন্য রকম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইদ্রিস ভাই এসে খবর দিয়েছেন, মেডিকেল কলেজে তিনটা লাশ তিনি দেখে এসেছেন। বরকতের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতির রং একেবারে বদলে গেল। এর আগে ঢাকার স্থানীয় অধিবাসীরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বিশেষ যোগ দেয়নি। তাদের অধিকাংশই উর্দুর সমর্থক ছিল।

রাস্তায় বেরিয়ে দেখি মোড়ে মোড়ে জটলা। স্থানীয় অধিবাসীদেরও মুখ কালো। সারা রাত অফিসে থেকে ভোরে ওয়ারীতে বাসায় গেলাম। ওই ভোরেও দেখলাম রাস্তায় জটলা। একটা রিকশাও চলছে না। দুই ঘণ্টা না ঘুমাতেই সরদার জয়েনউদদীন এসে খবর দিলেন, নবাবপুরের জনতার ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে এবং একটি ছেলে নিহত হয়েছে। তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় পরে আমি ও জনাব খায়রুল কবির বাসা থেকে বেরিয়েই পিটিআইয়ের বালনের কাছে শুনলাম, জনতা মর্নিং নিউজের অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ভদ্রলোক আমাদের সামনের বাসাতেই থাকতেন। আমরা তখন সেক্রেটারিয়েটের দিকে হেঁটে রওনা দিলাম, সরকারের মনোভাবটা কী বুঝতে পারি কি না দেখতে। অবশ্য গুলি চলার পর আগের দিন সন্ধ্যায় প্রাদেশিক আইন পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছিল। পরিষদে বিরোধী দলের সংখ্যা ছিল তখন মাত্র তিনজন। সেক্রেটারিয়েটে পৌঁছাবার আগেই বুঝলাম, সরকারের এ আত্মসমপর্ণে পরিস্থিতি শান্ত হলো না। সেক্রেটারিয়েটে পৌঁছে দেখি—কামরা সব খালি, কেবল কিছুসংখ্যক উচ্চপদস্থ অফিসার পায়ে হেঁটে অফিসে এসেছেন। ডাইরেক্টর অব পাবলিসিটি মাহমুদ হোসেন ভাইয়ের কামরায় যেয়ে দুই কাপ চা চাইলাম। তাঁর মুখ আমার চেয়েও সরেস ছিল। খিস্তি করে তিনি জবাব দিলেন, ‘চা খাওয়াবার উপায় রেখেছে এই সরকার। সারা অফিসে একটা পিয়নও আসেনি। বহু হরতাল দেখেছি বাবা, এমনটি দেখিনি। খাও দুটো ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। সিগারেট খেয়ে চায়ের সাধ মেটাও। সারা রাস্তা হেঁটে এলাম, একটা বিড়ির দোকানও খোলা দেখলাম না। এই সরকারের মরণ এসেছে। আজও সকালে গুলি চলেছে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বাছারা বুঝতে পারছে না।’ এমন সময় একজন দৌড়ে এসে খবর দিল, ছাত্ররা লাশ নিয়ে সেক্রেটারিয়েটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, হাইকোর্টের কোনায় পুলিশ শোভাযাত্রার গতি রোধ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেক্রেটারিয়েট থেকে বেরিয়ে আবদুল গনি রোডে পড়েই গুলির আওয়াজ পেলাম। পরে শুনলাম, ওইখানে হাইকোর্টের একজন কর্মচারী ও একজন রিকশাওয়ালা নিহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার রক্ত মিশে একাকার হয়ে রাখীবন্ধন রচনা করল। বন্দুকের অগ্নিঝলকে বাঙালি নিজেকে চিনল।

জহুর হোসেন চৌধুরীর বন্ধু ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম। মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন প্রিয়বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে একটি পত্র লিখেছিলেন তিনি। স্মৃতিবেদনায় মথিত সেই চিঠিতে রয়েছে কিংবদন্তিতুল্য মানুষটির অম্লমধুর চারিত্রবৈশিষ্ট্য, প্রখর রসবোধ, তাঁদের মৈত্রী, সখ্যের খুঁটিনাটি। মৃত্যুর কিছুকাল আগে বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী আতাউদ্দিন খানের করা মানহানি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জহুর হোসেন চৌধুরীকে। সেই প্রসঙ্গও উল্লিখিত হয়েছে পত্রে। ওই চিঠি থেকে একটুখানি উদ্ধৃতি—
সাম্প্রতিককালে মানহানির দায়ে তার গ্রেপ্তার ও পরে জামিনে মুক্তি সম্পর্কে দৈবক্রমে আমারও কিছু বক্তব্য রয়েছে। যেদিন রাতে এই ঘটনা ঘটে, তার পরদিন সকালে আমি তার বসতবাটির কোণের কামরাটিতে উপস্থিত তার সঙ্গে বিদায়সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। তখন দেখি, প্রাণোচ্ছল জহুর টেলিফোনে বোধ হয় ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদের সঙ্গে কথা বলছে। রসিয়ে রসিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার কথা বয়ান করছে সে। কোনো ক্ষোভ বা ভয়ভীতি, উৎকণ্ঠা, অপমানবোধ বা আত্মগ্লানির চিহ্ন সেদিন তার মধ্যে নজরে পড়েনি আমার।

টেলিফোন ছেড়ে দিয়ে চায়ের জন্য ঢালাও হুকুম, চোখে কয়েক ফোঁটা ওষুধ দেওয়ার পর টপাটপ আধডজন বড়ি গিলে সে কাহিনি আমাকে সবিস্তারে শোনাল। বলল, মধ্যরাতের পর পুলিশের আগমনে তার কী রকম ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা। তাকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি গেল রাজনৈতিক নেতা অলি আহাদের বাড়ি। অলি আহাদ ঝানু রাজনীতিক, কারাগারের অভিজ্ঞতাও তাঁর পক্ষে নতুন নয়। তাই বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞজনের মতো তিনি পুলিশকে বসিয়ে রেখে ধীরেসুস্থে প্রাতঃকৃত্য ও নাশতাপানি সেরে যখন দীর্ঘকাল পরে বেরুলেন, তখন জহুরকে অপেক্ষমাণ দেখে লজ্জিত হলেন। থানায় পৌঁছাবার পর জহুরের স্ত্রী অটোরিকশায় চেপে সেখানে উপস্থিত। থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মচারী জহুরকে চিনতেন না, এখন স্ত্রীর সূত্রে পরিচিত হলেন। কারণ, পুলিশকর্তার দুই তনয়ারই তিনি প্রধান শিক্ষিকা। যা–ই হোক, জহুরজায়া এক লাখ টাকার জামিন হয়ে স্বামীকে নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আবির্ভাব। সেদিনের অভিজ্ঞতায় সে মুষড়ে তো পড়েইনি, বরং আড্ডায় বিঘ্নকারী টেলিফোনের ঘণ্টা যখনই বাজছিল, সে তার বন্ধু–শুভাকাঙ্ক্ষীদের বেশ উৎসাহের সঙ্গে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিল। সৎ মানসিকতার অধিকারী জহুর পুলিশ ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিটির সৌজন্যের কথাও সবাইকে বলছিল। যত রাগ তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও তার মামলার বাদীর বিরুদ্ধে।
যখন একটানা দুই ঘণ্টা টেলিফোনে এ ঘটনার চর্চা হয়েছে, তখন মরিয়া হয়ে আমি বললাম, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আল্লার কাছে শোকর যে বিদেশ যাচ্ছি, নইলে এ মুখরোচক বিবরণী শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হতো। তা ছাড়া রসনা সংযত করা প্রয়োজন। কারণ, বিচারসাপেক্ষ বিষয়ে উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্যের অপরাধে স্বনামধন্য কলামিস্ট আবার আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।’ ব্যস, যেই বলা অমনি মন্ত্রমুগ্ধ সাপের মতো জহুরের হাঁসফাঁস আস্ফালন সহসা স্তব্ধ। আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তনের জন্য তাকে বন–প্রবাসী কাজী আহমদ রফিকের প্রসঙ্গ তুললাম। জহুর আবার চাঙা হয়ে সে ব্যক্তির গোষ্ঠী উদ্ধারে প্রবৃত্ত হতে যাচ্ছে। আমি ধমক দিয়ে বললাম, ‘রফিক কোনো স্বনামখ্যাত ব্যক্তির অপমৃত্যু উপলক্ষে জোলটান জেলকের কবিতার তর্জমা করে পাঠিয়েছে।’ এখন যখন ঘটনাক্রমে নেতৃত্বের আলখাল্লা জহুরের ওপরও বর্তাচ্ছে, কবিতার শেষ স্তবক প্রাসঙ্গিক মনে হয়—
মানুষ আমি বেঁচে থাকি মানুষের মতো।
সাহসী কেমন করে হবো?
শুধু মরণকে তত ভয় নয়,
যত ভয় ঘৃণার্হ বাঁচার।
শুনেই জহুর আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে স্পেনিস গৃহযুদ্ধে নিহত গার্সিয়া লোরকার দু’ছত্র কবিতা আবৃত্তি করে শোনাল।

  • হাসান হাফিজ কবি, সিনিয়র সহসভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব