তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে

>
পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের বাড়ি
পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের বাড়ি

সড়কে, বাড়ির দেয়ালে, প্রচ্ছদ চিত্রকর্ম দিয়ে সুসজ্জিত অবস্থায় দেখে আপনার মনে হবে আপনি যেন কবির রচিত কাজের ভুবনে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন
গ্রামবাংলার প্রাণের কবি জসীমউদ্দীন শুয়ে আছেন ডালিমগাছের নিচে ফরিদপুর শহরতলির অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে।

ফরিদপুরে বেড়াতে এলে অনিবার্যভাবে যেসব দর্শনীয় জায়গায় পা ফেলতে হবে তার মধ্যে পল্লিকবির বাড়ি অন্যতম। এ বাড়িতে এলে গ্রামবাংলার শাশ্বত রূপ আপনাকে আকৃষ্ট না করে পারবে না।
১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি জসীমউদ্দীন। এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি সেই কবি, ছাত্রজীবনে যে কবির লেখা কবিতা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৭৩ বছর বয়সে।
জসীমউদ্দীনের বাড়িতে তাঁর নিজের এবং ভাইদের ঘর সেই সাবেক আকারেই রয়েছে। বাড়ির পূর্ব দিকে রয়েছে কবির বাসভবন—ভিত পাকা, চারদিকে টিনের বেড়া ও ওপরে চৌচালা টিনের চাল। দক্ষিণ দিকে রয়েছে কবির বড় ভাইয়ের ঘর—চৌচালা টিনের চাল, চারদিকে পাকা দেয়াল। পশ্চিম দিকে রয়েছে কবির সেজো ভাইয়ের ঘর—ভিত পাকা, চারদিকে টিনের বেড়া ও ওপরে চৌচালা টিনের চাল। উত্তরে একটি একতলা ভবন। এ ভবনে বাস করতেন কবির বাবা, মা ও ছোট ভাই।

জসীমউদ্‌দীন (১৯০৩–১৯৭৬)
জসীমউদ্‌দীন (১৯০৩–১৯৭৬)

বাড়ির চত্বরেই ‘মনিমালার মনিহার’ নামে একটি জাদুঘর রয়েছে। ২০০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি এ জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন কবির স্ত্রী মমতাজ জসীমউদ্দীন। এ জাদুঘরে কবির বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী রয়েছে।
বাড়ির প্রবেশপথেই রয়েছে পারিবারিক কবর। ওই কবরেই ডালিমগাছের নিচে শুয়ে আছেন কবি। কবির জন্ম ও মৃত্যুদিনে এই কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয় জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে।
এ ছাড়া প্রতিবছর কবির জন্মদিন থেকে মাসব্যাপী জসীম পল্লিমেলার আয়োজন করা হয় কবির বাড়িসংলগ্ন কুমার নদের পাড়ে জসীম উদ্যানে। ওই সময় প্রতিদিন জসীম উদ্যানসংলগ্ন স্থায়ী জসীম মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মাসব্যাপী।
কবির বাড়িতে এলে সড়কে, বাড়ির দেয়ালে, গাছের গুঁড়িতে আলপনাসহ কবির বিভিন্ন সময়ে রচিত কবিতা ও প্রকাশিত বইগুলোর প্রচ্ছদ চিত্রকর্ম দিয়ে সুসজ্জিত অবস্থায় দেখে আপনার মনে হবে আপনি যেন কবির রচিত কাজের ভুবনে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
পরিশেষে বলি, ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়/ গাছের ছায়ায়, লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়।...’ কবির এ ‘নিমন্ত্রণে’ সাড়া দিয়ে চলে আসুন ফরিদপুরের শহরতলির কুমার নদের পাড়ে কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমে।