অনুশোচনা

আলতাফ হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয় এক প্রকাশকের সুবাদে। ওই প্রকাশক একদিন অনুরোধ করেছিলেন কিছু গল্প সংগ্রহের। তাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আগ্রহী লেখকদের কাছ থেকে গল্প চাইলাম। লেখালেখি করি বলে বন্ধুতালিকায় লেখকদের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে সপ্তাহখানেক চলে যায়। এরপর মেইল খুলে দেখি সব অপরিচিত লেখকের গল্প। বন্ধুতালিকার বাইরেরও অনেকে লেখা পাঠিয়েছেন। তাঁদেরই একজন আলতাফ হোসেন।

অপরিচিত মানুষের নাম শুনলে কল্পনায় তার চেহারা দাঁড় করানো আমার একধরনের অভ্যাস। আমার কল্পনার আলতাফ হোসেন একজন মোটাসোটা-বয়স্ক মানুষ। কিন্তু কিছুদিন পরই আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করলেন তিনি। ফেসবুকে অ্যাড হলেন। শুকনা-পাতলা মধ্যবয়সী একজন মানুষ। হতাশ হলাম।

আমাকে মেসেজ দিলেন,

 ‘ভাই, আমার লেখাটা ছাপাবেন?’

তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম, ‘হ্যাঁ, ছাপাব তো নিশ্চয়ই!’

 ‘আমি কি একটা কপি পাব পত্রিকার?

 ‘পাবেন, সামনের মাসের সংখ্যা ছাপা হলে কর্তৃপক্ষ পাঠিয়ে দেবে।’

আলতাফ সাহেব তাঁর ঠিকানা দিয়ে বলেন, ‘আপনি একটু দেখবেন ভাই।’ বললাম, ‘অবশ্যই দেখব।’

তারপর কথা না রাখা অসংখ্য মানুষের মতো আমিও আলতাফ হোসেনকে ভুলে যাই। ভুলে যাই আলতাফ হোসেনের পাঠানো গল্পের খোঁজ নিতে। কয়েক দিন পর এক রাতে আলতাফ সাহেবের মেসেজ আসে, ‘ভাই, আমার গল্পটা ছাপা হয়েছে?’

আমি স্মৃতির পাতা আওড়ে আলতাফ সাহেবকে মনে করি। অনুমাননির্ভর মিথ্যে বলি, ‘হয়েছে নিশ্চয়ই! আপনি শিগগিরই আপনার সংখ্যাটা পাবেন।’ আলতাফ সাহেব বলেন,

 ‘আমাকে একটু ছবি তুলে পাঠাবেন?’

 ‘কিসের ছবি?’

 ‘ম্যাগাজিনের, যেখানে আমার নামটা আছে?’

আমার কাছে পত্রিকার কোনো সংখ্যা ছিল না। আলতাফ সাহেবকে বলি, ‘কাল-পরশুর মধ্যে আপনি একটা সংখ্যা পেয়েই যাচ্ছেন, ছবির আর কী দরকার?’

নিজের ওপর খানিকটা রাগ হয়। প্রত্যেক লেখকের কাছেই তাঁর লেখা সন্তানের মতো। তাড়াতাড়ি ফোন দিই প্রকাশককে। আলতাফ সাহেবের গল্পটার খোঁজ করতেই প্রকাশক বললেন, ‘একজন ভালো লেখকের গল্প পেয়ে যাওয়ায় আলতাফ সাহেবের গল্পটা বাদ দেওয়া হয়েছে।’ আমি ‘ও আচ্ছা’ বলে ফোন রাখি।

আলতাফ সাহেবের মেসেজ আসে, ‘প্রথমবার ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে যাচ্ছি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।’ আমি অনুশোচনায় ভুগতে থাকি।

জাহিদ

উত্তরা, ঢাকা