ও নদী রে...

>‘নদীর কূল ছিল না/ জল ছিল না/ ছিল শুধু ঢেউ...’, গানের মতো সত্যিকার অর্থে এমন জল-কূলহীন নদীতে ঢেউ না থাকলেও দুনিয়াজোড়া কত যে অদ্ভুত আর বৈচিত্র্যময় নদী রয়েছে, তারই পাঁচটির হদিস রইল।

পঞ্চরঙা নদী
রঙিন শৈবালের ওপর ধীরগতিতে বয়ে চলা স্বচ্ছ জল সুন্দরতম নদীর আখ্যা পেয়েছে ক্রিস্টাল। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ নদীকে রিভার অব ফাইভ কালারস বা পঞ্চরঙা নদীও বলা হয়ে থাকে। মূলত শুকনো আর আর্দ্র মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যখন নদীর পানির প্রবাহের গতি ও উচ্চতা ম্যাকারেনিয়া ক্ল্যাভিজেরা নামক শৈবালজাতীয় উদ্ভিদের বর্ণ পরিবর্তনের জন্য যথাযথ হয়, তখন এরা সবুজ থেকে অনিন্দ্য সুন্দর রক্তলাল বর্ণ ধারণ করে। এ নদী মর্ত্যের বুকে সুন্দরতম অববাহিকা হিসেবেও পরিচিত।

শুদ্ধ-বিশুদ্ধের দোলাচলে
গঙ্গাই হয়তো একমাত্র নদী, যার জৈব বর্জ্য পদার্থ ভেঙে পানিকে পরিষ্কার রাখার ক্ষমতা আছে। এই নদীতে বসবাসরত এক প্রজাতির অণুজীবের কারণে এই অদ্ভুত শক্তি পেয়েছে গঙ্গা নদীর পানি। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই নদীকেই পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নদীর আখ্যাও মাথা পেতে নিতে হচ্ছে। গঙ্গায় ভারত সরকার নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি ফেসাল কলিফর্ম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়, যা মূলত নদী অববাহিকায় বিভিন্ন মনুষ্যঘটিত কর্মকাণ্ডের ফলে হয়ে থাকে। ২ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পরম পূজ্য এবং পুণ্য স্থানই নয়, বরং এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বের দাবিদার। গঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে নবাবগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে।

প্রবহমান নীল নদ
নীল নদের সঙ্গে মিশে আছে সভ্যতা আর প্রাচীন হাজারো উপাখ্যান। পৃথিবীর ১১টি দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ নদ শুধু ঐতিহাসিক কারণেই নয়, ধু ধু মরুভূমিতে প্রাণসঞ্চারণের একমাত্র উৎসও নীল নদ। পৃথিবীর যে অল্প কিছুসংখ্যক নদ–নদী দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বয়ে চলে, তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৮৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদ অন্যতম। প্রাচীন মিসরের অদ্ভুত আর আশ্চর্যজনক সব স্থাপনা এই নদের তীরেই গড়ে উঠেছিল। নীল নদের কুমির পৃথিবীর হিংস্রতম প্রাণীগুলোর একটি।

ছোট নদী
যুক্তরাষ্ট্রের রও নদীর দৈর্ঘ্য শুনে মনের কোণে ওই একটি প্রশ্নই উঁকি দেয়—এত ছোট নদীও হয় নাকি! ২০১ ফুট দৈর্ঘ্যের আর প্রায় ৮ ফুট গভীরতার এই নদীর কথা শুনলে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়া দোষের কিছু নয়। যুক্তরাজ্যের মনটানা রাজ্যের মনটানা জলপ্রপাতের কাছাকাছি জায়ান্ট স্প্রিং থেকে মিজৌরি নদীতে এসে ঠেকেছে রও। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাদের ছোট নদীর তালিকায় এই নদীর নামটিই রেখেছে।

শ্বাপদসংকুল তটিনী
একই সঙ্গে দীর্ঘতম এবং শ্বাপদসংকুল প্রাণের অভয়ারণ্য আমাজন নদী। এই আমাজনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে হিংস্র পিরানহা, অ্যানাকোন্ডা কিংবা বৈদ্যুতিক ইলের মতো দুর্ধর্ষ আর বিচিত্র সব প্রাণী। পৃথিবীর যত নদী অববাহিকার পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয়, তার ২০ শতাংশই যায় আমাজন থেকে। দক্ষিণ পেরুর আন্দিজ পর্বতের নেভেদো মিসমি থেকে আমাজনের উৎপত্তি। প্রায় ২০০ কোটি বছর বয়সী এই নদী বিশ্বের বয়স্ক নদীগুলোর তালিকাতে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। দীর্ঘতম নদীর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আমাজনের সঙ্গে নীল নদেরও নাম উচ্চারিত হয়।

ফোর্বস, নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে সামিহা আকবর