২৫ টাকারও নোট আছে, তবে...

ঢাকার শাহবাগের ফুটপাতে চায়ের দোকানি ২৫ টাকার নোট পেয়ে ‘জাল, জাল’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। আশপাশের মানুষ সন্দেহের চোখে পরীক্ষা করে দেখেন সে নোট। নোটে গভর্নরের স্বাক্ষর আছে, নিরাপত্তা সুতাও রয়েছে ঠিকই, আকারও ঠিক অন্য নোটের মতো। তাহলে সমস্যাটা কী! তাঁরা দেখতে পান, এতে ছোট করে ‘স্মারক নোট’ ও ‘বিনিময়যোগ্য নহে’ বিষয়টি উল্লেখ আছে। বিষয়টি জেনে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে বুঝিয়ে বলেন তাঁরা। এ বর্ণনা দেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন। ঘটনাটি ২০১৪ সালের।

টাকা ছাপাখানা নামে পরিচিত দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড বা টাঁকশালের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ২৫ টাকার স্মারক নোট ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। খামসহ এর দাম ধরা হয় ১০০ টাকা। এ সময় অনেকেই অপ্রচলিত এ নোট কেনেন।

শুধু ২৫ টাকা নয়, দেশের বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে এখন পর্যন্ত ৬ ধরনের স্মারক নোট তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর স্মারক কয়েন তৈরি করেছে ১২ ধরনের।

লেনদেনের জন্য এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মানের ৫২ ধরনের প্রচলিত নোট ও ১১ ধরনের কয়েন বাজারে ছাড়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে। নানা রঙের এসব নোট ও কয়েন অনেকেরই সংগ্রহে আছে। মিরপুরের টাকা জাদুঘরেও এসব কয়েন ও নোটের দেখা পাওয়া যায়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম নোট ছাপা হয়। ১৯৭২ সালের ২ জুন প্রথম বাজারে ছাড়া হয় ১০ টাকার নোট। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসে ১, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট। এর প্রায় সবই বাজারে আসে ১৯৭২-৭৬ সালের মধ্যে। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালে ২০ টাকার নোট ও ১৯৮৮ সালে ২ টাকার নোট ছাড়া হয়। ২০০৮ সালে প্রথম বাজারে আসে ১০০০ টাকার নোট। ওদিকে স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়া হয় ১, ৫, ১০, ২৫, ৫০ পয়সা ও ১, ২, ৫ টাকার কয়েন।

এখন পর্যন্ত ১ টাকার তিন ধরনের নকশার নোট বাজারে এসেছে। ২ টাকার নোটের নকশা পরিবর্তন হয়েছে দুবার। একইভাবে ৫ টাকার নোটের নকশা পরিবর্তন হয়েছে নয়বার, ১০ টাকার নোটের দুবার ও ২০ টাকার তিনবার। ৫০ টাকার নোট দুবার, ১০০ টাকার নয়বার, ৫০০ টাকার সাতবার ও ১০০০ টাকার নোটের দুবার নকশা পরিবর্তন হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার চার ধরনের নোট বাতিল করে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে।

টাকার নোটে বারবার নকশা পরিবর্তন হলেও কয়েনের নকশায় সেভাবে এত পরিবর্তন আসেনি। ৫০ পয়সার কয়েনের দুবার ও ১ টাকার কয়েনের তিনবার নকশা পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে সিলভার রঙের ১ টাকার কয়েন বাজারে ছাড়া হয়।

আর ১৯৯৬ সালে প্রথম ৪০ টাকার স্মারক নোট ছাড়া হয় স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে। ২০১২ সালে ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৬০ টাকার স্মারক নোট ছাড়া হয়। ২০১৩ সালে টাকা ছাপাখানার ২৫ বছর পূর্তি ও জাতীয় জাদুঘরের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১০০ টাকার স্মারক নোট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৮ সালের মার্চে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ শিরোনামে ৭০ টাকার স্মারক নোট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার সবই পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়।