বাংলাদেশের কত সম্পদ কত টাকা?

>

টাকা ছাড়া নাকি দুনিয়া অচল! সংস্কৃত ‘টঙ্ক’ শব্দটিই বহু যুগ আগে মুদ্রা অর্থে বাংলার মানুষের কাছে হয়ে গেছে—টাকা। এবারের ছুটির দিনের পুরোটা জুড়েই থাকছে সেই টাকার কথা। বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে টাঁকশাল, টাকার নকশাকার, টাকার ব্যবহার, টাকা নিয়ে মজার তথ্য, টাকার জাদুঘরসহ নানা বিষয়।

দেশের এই যে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, হাজার কোটি টাকার সম্পদ তাদের। আবার অনেকে হয়তো করছেন ছোট চাকরি বা মুদি দোকানদারি। টাকার পেছনেই তো সবার ছুটে চলা। যাঁদের কেউ আবার বৈধ বা অবৈধভাবে অঢেল সম্পদ গড়ছেন, কেউ আবার দুবেলা দুমুঠো খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

তারপরও বাংলাদেশের সম্পদ তো আছে! কিন্তু তার পরিমাণ কত?

ছবি: সুমন ইউসুফ
ছবি: সুমন ইউসুফ

টাকার আগে সম্পদের হিসাব

কেউ কি ধারণা করতে পারেন গোটা বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ কত? সাদামাটাভাবে বলতে গেলে কারও চিন্তায় তা আসার কথা নয়। সাধারণ ক্যালকুলেটরে হিসাবটি করা যায় না। ঠিক এক বছর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক একটি হিসাব প্রকাশ করেছিল। ‘দ্য চেঞ্জিং ওয়েলথ অব নেশন-২০১৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশের মোট সম্পদের একটা ধারণা পাওয়া যায়।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৭১৪ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ৭৯০ টাকা। আর দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরা হলে মোট সম্পদের পরিমাণ হয় ১ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৪০ কোটি কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মাথাপিছু সম্পদের মধ্যে উৎপাদিত সম্পদের বাজারমূল্য ৩ হাজার ৪৩৪ ডলার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য ২ হাজার ২৩৪ ডলার। এ ছাড়া বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাষযোগ্য জমি রয়েছে, তার মাথাপিছু আর্থিক মূল্য ১ হাজার ৫০১ ডলার ও মানবসম্পদের মূল্য মাথাপিছু ৭ হাজার ১৭০ ডলার। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪১টি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ, উৎপাদিত সম্পদ ও বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক এই প্রতিবেদন তৈরি করে।

তাহলে টাকা কত

এ তো গেল সম্পদের দিক। বাংলাদেশে তাহলে মুদ্রা আকারে মোট কত টাকা আছে? ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে, কারখানা চলছে, আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে, চাল-ডাল কেনা হচ্ছে, মানুষ ঘুরছে-ফিরছে, টাকা খরচ করছে। টাকা তাহলে কত আছে? এ হিসাব অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রয়েছে। দেশের মুদ্রা চলাচলের তথ্য নিয়ে সপ্তাহ ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত সপ্তাহে তৈরি সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৯ শতাংশই ৫০০ ও এক হাজার কাগুজে নোট। বাকিগুলো ১০০, ৫০, ২০ ও ১০ টাকার কাগুজে নোট এবং পাঁচ টাকা, দুই টাকা ও এক টাকার কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা। ৫০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ৫ পয়সা ও ১ পয়সার মুদ্রার হিসাবও এর মধ্যেই রয়েছে।

বাজারে ১, ৫ ও ১০ পয়সার যে ধাতব মুদ্রা চালু রয়েছে, সরকার এগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেনি। ২৫ ও ৫০ পয়সার ধাতব মুদ্রাও আজকাল তেমন দেখা যায় না। এমনকি ধাতব মুদ্রা থাকলেও এক টাকার নোট দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে।

মুদ্রা আবার দুই ধরনের। ব্যাংক নোট বা মুদ্রা ও সরকারি মুদ্রা। ১০ থেকে এক হাজার টাকার নোটগুলোকে বলা হয় ব্যাংক মুদ্রা। এগুলো বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। আর ১ পয়সা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত নোট ও ধাতব মুদ্রাকে বলা হয় সরকারি মুদ্রা। এগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় বের করে এবং নোটগুলোতে স্বাক্ষর থাকে অর্থসচিবের।

পাঁচ টাকাকে ব্যাংক মুদ্রা থেকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তরের সময় ২০১৫ সালে একটা বিতর্ক উঠেছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করার ঘোষণা দেন। ওই বছরই তা হয়। ‘দুই টাকায় চকলেট পাওয়া যায় নাকি’ বলে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই সময়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, দেশে ৯৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলিত ছিল। সে হিসেবে চার বছরে মুদ্রার পরিমাণ বেড়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারি মুদ্রা সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক। আর ৪০ বছর আগের এক টাকার ক্রয়ক্ষমতা বর্তমানে ১২ টাকা ৪৫ পয়সার সমান অর্থাৎ এখনকার এক টাকা ওই সময়ের ৮ পয়সার সমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমানের কাছে প্রশ্ন ছিল, ব্যাংকগুলো ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণই দিয়েছে, তাহলে ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকার মুদ্রা থাকলে তা কম হয়ে যায় কি না। তিনি জানান, না। কম হয় না। মানুষ তো ঋণের পুরো টাকা একবারে খরচ করে ফেলে না। ঋণ নিয়েও মানুষকে তা ব্যাংকেই রাখতে হয়। ১০০ টাকা ১ হাজার টাকার সমান কাজে দেয়। বিশ্বজুড়েই চর্চাটি এ রকম।