মানুষ হলেও তাঁর পাখির মতো মন

স্যাম চুই যখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
স্যাম চুই যখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

বছরের অর্ধেক সময় কাটে আকাশে, বাকি অর্ধেক কাটান আকাশের কথা ভেবে। মানুষ হলেও তাঁর যেন পাখির মতো মন। স্যাম চুই পেশায় ‘এভিয়েশন ইউটিউবার’। মানে হলো তিনি ইউটিউবে বিমান চলাচল নিয়ে পর্যালোচনামূলক ভিডিও প্রকাশ করেন। একই বিষয়ে ব্লগও লেখেন। পাশাপাশি তিনি আলোকচিত্রী ও লেখক। বিমানে করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান আর বিভিন্ন বিমানসেবার কথা তুলে ধরেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ৪ মার্চ সিলেট হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন স্যাম। তিন দিন থেকে পরবর্তী গন্তব্যে ছুটে গেছেন। এরই মধ্যে ‘৫ হাজার ৮০০ সেলফি’ তুলেছেন, ভক্তদের চমকে দিয়েছেন, নিজে চমকেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন সেবা নিয়ে ভিডিও ধারণ করেছেন। বিমানের কার্যালয়ে ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন স্যাম চুই। সঙ্গে ছিলেন বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ। সম্মেলন শেষে নিজের পছন্দের বিমানসেবা, বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং আকাশপথে প্রতিবছর তিন লাখ মাইল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রথম আলোর কাছে।

আতিথেয়তায় মুগ্ধ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ‘পাঁচ তারকা সেবার আশা করা উচিত হবে না নিশ্চয়ই।’ অকপটে জানালেন স্যাম। বিমানের খাবার প্রস্তুত কক্ষ এবং রক্ষণাবেক্ষণ হ্যাঙ্গার দেখে তখন সদ্য ফিরেছেন। বললেন, ‘তবে আমি আতিথেয়তায় মুগ্ধ। কেবিন ক্রুরা আন্তরিকতার সঙ্গে যেকোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসে।’ বিশেষ করে বয়স্ক যাত্রীদের বেলায় বাংলাদেশিদের মতো এত আন্তরিক আর কাউকে হতে দেখেননি তিনি।
আর খাবার? একটা ‘তবে’ জুড়ে দিয়ে উত্তর দিলেন। ‘সেরা নয়।’ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশে এলেন স্যাম। এর আগে এসেছিলেন ২০১১ ও ২০১৩ সালে। তিনবারই মুরগির তরকারি খেয়েছেন। ‘বৈচিত্র্য কম। তবে আমার কিন্তু ভালোই লেগেছে।’
ইউটিউবে ৯ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক আছে স্যাম চুইয়ের। বাংলাদেশেও তাঁর ভক্তকুলের সংখ্যা একদম কম না। ৫ মার্চ সকালে তাঁদেরই একাংশের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিমানই আয়োজন করে দিয়েছিল। সেখানে অর্ণব নামের এক ভক্তের কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে যান স্যাম। বললেন, ‘তিনি ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এটা আমার জন্য নতুন।’

চার ভক্তের সঙ্গে চট্টগ্রামে
৬ মার্চ বিমানের সেবা পরখ করার জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যান স্যাম। সঙ্গে নেন চার ভক্তকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এই চারজনকে বাছাই করেছেন। মজার বিষয় হলো, এই চারজনের কেউ আগে বিমানে ভ্রমণ করেননি। তবু উড়োজাহাজে তাঁদের আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছেন। স্যামের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজের ককপিট পর্যন্ত দেখে এসেছেন সুরাইয়া রহমান, খালিদ হাসান, হাসিবুল হোসেন ও মোহাম্মদ লাবিব খান।

ঠিকানা আকাশে
স্যাম চুইয়ের জন্ম চীনের বেইজিংয়ে, বড় হয়েছেন হংকংয়ে, পড়াশোনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। কর্মজীবনে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছেন, আর এখন থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার দেশ কোনটি? স্যামের উত্তর, ‘আমি নিজেকে বৈশ্বিক নাগরিক মনে করি। ১০০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছি। বছরে কমবেশি ১৫০ দিন বিমান ভ্রমণ করি। এখন আকাশই আমার ঠিকানা।’ স্যামের বেলাতেই বোধ হয় ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো’ গানটি বেশি খাটে।