লুবনার সঙ্গে শেষ কথা

.
.

লুবনার সঙ্গে যোগাযোগ নেই তিন মাস। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। রাত তখন বারোটা ছুঁই ছুঁই। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ওর ফোনের আওয়াজে ঘুমটা ভাঙলে আমিই পরে ফোন করি। ওপাশের পরিচিত কণ্ঠটা মুহূর্তেই আমার অপরিচিত মনে হয়। লুবনা বলল, ‘আমি হাকিম চত্বরে। হলে যাইনি আজ। মনটা চাচ্ছে না। একটু আসবে?’
অত রাতে আমার যাওয়া সম্ভব ছিল না। ও জানত আমি চেষ্টা করলেও এত রাতে নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে বের হতে পারব না। তারপরেও লুবনার সেদিনের পাগলামিটা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। সেদিন লুবনার বলার ভঙ্গিটা আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছিল না। তাই আমি খানিকটা অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।
সারা রাত একটিবার চোখের পাতাটা মেলাতে পারিনি। ওকে বার কয়েক ফোন দিলাম, রিসিভ করল না। আরও বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। কী করব আমি, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। লুবনার খুব কাছের বন্ধু অবন্তীকে ফোন করি। তিনবার ফোন দেওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করে। আমি জানতে চাইলাম, ‘লুবনা কোথায়, জানো?’ অবন্তী বলল, ‘হুম, ওর সঙ্গে গতকাল শাহবাগ মোড়ে দেখা। আমাকে দেখেই বলল, “বাড়িতে যাচ্ছি, ভালো থাকিস, তোরা।” কেন কী হয়েছে?’
অবন্তীর কথা শুনে আমি হাউমাউ
করে কেঁদে ফেলি। অবন্তী জানতে চায়, ‘কী হয়েছে?’ আমি তাকে সব খুলে বলি। অবন্তী ফোনটা নিয়ে দ্রুত হাকিম চত্বরের দিকে দৌড়ায়। আমি তাকে বারবার ফোন দিতে থাকি, কিন্তু অবন্তীও আমার ফোন আর রিসিভ করে না।

ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে আমি ক্যাম্পাসের দিকে দৌড়াই। হাকিম চত্বরের উত্তর পাশের বেঞ্চটা, অধিকাংশ সময় আমরা যেখানে বসতাম, সেখানে গিয়ে দাঁড়াই। ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আমাকে চেপে ধরে।

লুবনার ফোনটা বন্ধ। অবন্তীও ফোনটা রিসিভ করে না। আমি তখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটু পরেই অবন্তী আর মীম আসে। আমি ওদের পেয়ে কেঁদে ফেলি। ওরা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি কিছুতেই নিজেকে স্থির করতে পারি না। খানিকবাদে অবন্তীর নম্বর থেকে একটা মেসেজ আসে, ‘আমি আর মেহেদি লুবনাদের বাড়িতে যাচ্ছি। তুমি একটু সাবধানে থেকো।’

সিয়াম বিন আহমাদ
কুষ্টিয়া।