রিকশাচালকদের জন্য বিনে পয়সায় জলযোগ

রিকশাচালকদের জন্যই পানি পানের ব্যবস্থা। ছবি: খালেদ সরকার
রিকশাচালকদের জন্যই পানি পানের ব্যবস্থা। ছবি: খালেদ সরকার

ঝুমবৃষ্টি ছিল বলে পানির পাত্রটা বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। অন্য সময় বাড়ির মূল ফটকের পাশে দেয়াল ঘেঁষেই রাখা হয়। তবে দেয়ালে নির্দেশনাটি আগের মতোই আছে—‘এখানে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি পানের ব্যবস্থা আছে’।

বিশুদ্ধ পানির এই সুব্যবস্থা করা হয়েছে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ১৪৭/এ ঠিকানার বাড়িতে। এই আবাসিক এলাকার রিকশাচালকদের প্রায় সবার অতিপরিচিত ঠিকানা। ৮ এপ্রিল রাশেদ হোসেন নামের রিকশাচালক যেমনটি সেখানে আমাদের নিয়ে এলেন মুখস্থ ঠিকানার মতো।

সেদিন আমাদের নামিয়ে রাশেদ বাড়ির ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও গেলাম। তিনি পানির পাত্রের কাছে গিয়ে গ্লাস হাতে তুলে নিতেই এক তরুণ এসে রাশেদের উদ্দেশে বলেন, ‘মামা, বিস্কুট নেন।’

আমরা কথা বলি বিস্কুট এগিয়ে দেওয়া তরুণের সঙ্গে। মো. কাওছার নামের ওই তরুণ আগত ব্যক্তিদের পানি ও বিস্কুট সরবরাহ করেন। কাওছার বলেন, ‘যে কেউ যখন-তখন এখান থেকে পানি পান করতে পারেন। আমার ওপর মালিকের নির্দেশ আছে, পানি পান করার সময় যেন আমি তাঁদের বিস্কুটও দিই।’

তিনি এখানে আছেন এ বছরের শুরু থেকেই। তবে এই উদ্যোগ আরও আগের বলে তিনি জানান। কত আগের, এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন পাশে দাঁড়ানো সাজু মিয়া। তিনি বাড়ির কর্তার গাড়িচালক। সাজু মিয়া বলেন, ‘গত বছর এক রিকশাচালক গেটে আইসা পানি চাইছিল। সে সময় ম্যাডাম (রেহানা খান) নিচে ছিলেন। তিনি তা দেখে ওই দিনই বাসার সামনে পানির জার বসান। এরপর বিস্কুটও রাখা হয়। এই বিস্কুট রাখার ব্যবস্থা করেন আমাদের স্যার।’

তাঁদের স্যারের পরিচয় জানা গেল। তিনি গোলাম নাসির উদ্দিন খান। পেশায় তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফুটপাতে চা-পানের দোকান নেই। তাই এই এলাকার রিকশাচালকেরা চাইলেই আবাসিক এলাকার ভেতরে চা-বিস্কুট খেতে পারেন না। সেই চিন্তা থেকে তাঁদের জন্য আমরা পানি পানের ব্যবস্থা করেছিলাম।’

মাস ছয়েক আগের কথা সেটা। তারও দিন কয়েক পর গোলাম নাসির উদ্দিন ভাবলেন, পানির সঙ্গে বিস্কুট খাওয়ালে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকেই ব্যবস্থা করলেন পানি-বিস্কুটের। সংরক্ষণের সুবিধার জন্য পরে টোস্ট বিস্কুট যুক্ত করলেন। প্রতিদিন তো টোস্ট কেনা সম্ভব নয়, এ জন্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে একসঙ্গে এক মাসের টোস্ট বিস্কুট কিনে এনে রাখেন। প্রায় ২০০ জন মানুষ প্রতিদিন পানি-বিস্কুট খান। অনেকে একাধিকবারও আসেন। আগত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই রিকশাচালক।

গোলাম নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা প্রচারের আশায় উদ্যোগটি নিইনি। নিছকই ভালো লাগা থেকে এই ব্যবস্থা। এখানে যাঁরা আসেন, অবাক করা ব্যাপার হলো, তাঁরা একসঙ্গে একটার বেশি বিস্কুট নেন না। এই সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি এই উদ্যোগটি চালিয়ে যেতে চাই।’