সিয়ামের সম্ভাবনা

সিয়াম আহমেদ। ছবি: কবির হোসেন
সিয়াম আহমেদ। ছবি: কবির হোসেন

২০১২ সালের মার্চ বা এপ্রিল মাসের ঘটনা। আমি তখন টুকটাক কাজ করছি, পরিচালক হিসেবে তখন নতুনই বলা যায়। ভালো কিছু করার, আলাদা করে গল্প বলার, নতুনদের নিয়ে কাজ করার একটা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। নতুন মুখ নিয়ে কাজ করতে আমার সব সময়ই একটু আলাদা ভালো লাগে, একটা অদ্ভুত সতেজতা পাই কাজে, না জেনেবুঝেই নতুনেরা একেকটা মুহূর্ত বের করে আনে শুটিং করতে গিয়ে, যেটা আলাদা করে ভেবে করা হয় না। পর্দায় সেটাই ম্যাজিক হয়ে যায়, চনমনে লাগে নিজের কাছেও।

মুঠোফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেলের প্রকল্পটাও এমনভাবেই শুরু হয়েছিল, গল্পটা মজার এবং একদম নতুন একটা ছেলে দরকার ছিল এটার জন্য। আমার দল আর আমি বসে পরিকল্পনা করলাম। দলের সদস্যদের ব্রিফ করা হয়েছিল, নতুন, সুন্দর একটা ছেলেকে খুঁজে বের করতে হবে এই প্রকল্পে। চরিত্রটা ছিল ‘গুটিবাজ বন্ধু’, তাই চটপটে, প্রাণবন্ত কিন্তু একদম হিরো ম্যাটেরিয়াল থাকতে হবে চেহারায়।

ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে সিয়াম ও তিশা
ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে সিয়াম ও তিশা

অনেকের অডিশন নেওয়া হয়েছে, কিন্তু স্ক্রিন টেস্টে সবার চোখেই আলাদা করে সিয়াম আহমেদকে ভালো লাগে। সিয়ামকে তখনই আমি প্রথমবার দেখেছি, ওর মধ্যে একটা কারিশমা, একটা চার্ম ছিল; আর ঠিক যেমন অ্যাটিটিউড দরকার ছিল আমাদের চরিত্রটার জন্য, সিয়াম ঠিক তেমনটাই। সিয়াম ক্যামেরার সামনে প্রচণ্ড সাবলীল, নতুন ছেলের মধ্যে এতটা আত্মবিশ্বাস দেখে আমার তাকে পছন্দ হয়। আমি আর আমার দল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে তাকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছি, ভালো লেগেছে প্রথম কাজটা করেই। এরপর থেকে তার সঙ্গে আরও কাজ করার সুযোগ আর ইচ্ছা দুটোই হয়। তাকে কাস্টিং করা যায়, এমন বেশ কিছু প্রকল্পে সে আমাদের সঙ্গে কাজ করে।

সিয়ামের অভিনয়ের প্রতি সিরিয়াস হওয়া উচিত, এটা আমার প্রথম থেকেই মনে হয়েছে। তাকে আমি বলেছিও মনে আছে। অনেকগুলো কাজ পরপর করায় সম্পর্কটাও অভিনেতা আর পরিচালকের থেকে আরেকটু বেশিই আপন হয়েছিল। বিশ্বাস ছিল, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আর চেষ্টা থাকলে সিয়াম অনেক ভালো করতে পারবে।

নির্মাতা হিসেবে আমাদের সব সময় ইচ্ছা আর স্বপ্ন দুটোই থাকে বড় কিছু করার, আরও ভালো গল্প বলার। সিয়ামের সঙ্গে কাজ করার সময়ই অনেকবার মনে মনে ভেবেছি যে আরও বড় কিছুতে, গল্পে তাকে নিয়ে কাজ করতে হবে, তার মধ্যে যে অভিনেতা সত্তাটা আছে, সেটা বড় একটা প্ল্যাটফর্ম আর গল্প দাবি করে। সময়, সুযোগ আর সবকিছু একসঙ্গে না মেলায় সেটা এখনো করা হয়ে ওঠেনি। সেটা আরও অনেক লম্বা গল্প, অন্য কোনো দিনের জন্য তুলে রাখলাম।

প্রথম যখন সিয়াম সিনেমার জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন একদিন ফোন করে আমাকে, জানতে চায় সিনেমা করার সিদ্ধান্তটা নেবে কি না। আমার যত দূর মনে আছে, তাকে বলেছিলাম যে বড় পর্দায় নিজেকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে ছোট পর্দার মায়া একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে।

সিয়ামকে এখন যখন দেখি, বড় প্ল্যাটফর্মে, মনে হয় আমার আইডিয়াটা ভুল ছিল না। ভালো অভিনয় করছে এবং ভালো ভালো কাজ বাছাই করছে। নিজের কাছে খুব ভালো লাগে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নতুন ধারার গল্প হচ্ছে, নির্মাতারা সবাই চেষ্টা করছে চলচ্চিত্র থেকে বিজ্ঞাপন সব জায়গায়ই আলাদা করে কিছু দেওয়ার। সিয়ামকে যখন আমি দেখি বড় পর্দায় বা তার যেকোনো কাজে, সিয়াম এখনো সেই প্রথম দিনের চার্ম ধরে রাখতে পেরেছে। পরিশ্রম আর প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে নিজেকে অন্য একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়, এটা সিয়াম প্রমাণ করেছে এবং আমার গর্ব হয় তাকে নিয়ে ঠিক এ জন্যই। বিজ্ঞাপন বানাতে গিয়ে আমি প্রচুর নতুন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। অনেকের মধ্যে সম্ভাবনা ছিল, এখনো আছে, তবে চেষ্টা আর মেধা দুটো একসঙ্গে পাওয়া কঠিন। সিয়ামের মধ্যে সেটা পেয়েছি এবং আমি বিশ্বাস করি, তাকে নিয়ে আরও অনেক দিন গর্ব করতে পারব, নিজেকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে সে তার কাজের মধ্যে দিয়ে।

আদনান আল রাজীব: নির্মাতা