মানসী-সাকিয়ার চোখে বাংলাদেশ

মানসী সাহা ও সাকিয়া হক
মানসী সাহা ও সাকিয়া হক

‘একই স্কুল, একই কলেজ, একই মেডিকেল কলেজ, একই ঘর, একই বিছানা আর এখন একই সঙ্গে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া।’ মানসী সাহা কথাগুলো লিখেছেন তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলের স্ট্যাটাসে। যাঁর উদ্দেশে এই লেখা, তিনি সাকিয়া হক। ৩০ এপ্রিল তাঁর এই স্ট্যাটাসের হেতু ছিল চিকিৎসকদের জন্য ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফল। তাঁরা দুজনই সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই আনন্দের খবর যখন তাঁরা পেয়েছেন, তখনো একই সঙ্গে খাগড়াছড়িতে। এমন অনেক ‘একই’ মিলেই দুই বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় গড়ে তুলেছেন ‘ট্রাভেলেটেস অব বাংলাদেশ’। নারীদের সংকোচহীন ভ্রমণে উৎসাহী করতে কাজ করে সংগঠনটি।

মানসীর সঙ্গে ২ মে যখন কথা হয়, তখন তিনি অবশ্য খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় চলে এসেছেন। ২০১৭ সালে স্কুটি চালিয়ে দেশ দর্শনের যে পথে নেমেছিলেন, তারই শেষ ধাপ ছিল এটি। তাঁরা সেই উদ্যোগের নাম দেন ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’। ক্লাস-পরীক্ষা থেকে ফুরসত পেলেই বেরিয়ে পড়েছেন দুজন। চালকের আসনে তাঁরা থাকলেও সঙ্গী হতেন ট্রাভেলেটেস অব বাংলাদেশের কোনো না কোনো সদস্য। তবে এই সদস্যদের সংখ্যাও হাতে গোনা। বিভিন্ন জেলায় অংশ নিয়েছেন শামসুন নাহার, নিঝুম রাইফা, নুসরাত জাহান, ফারিয়া ফেরদৌস, কাজী শান্তা ইসলাম, আছমা আক্তার, নাজমুন নাহার, জান্নাতুল ফেরদৌস, মুনতাহা রহমান ও সিলভী রহমান। তাঁরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কেউবা সদ্য স্নাতক।

মানসী সাহা বলছিলেন, ‘আমাদের স্বপ্নপূরণ সহজ করে দিয়েছিল কর্ণফুলী স্কুটি।’ দুজন ভ্রমণে মেয়েদের উৎসাহী করে তুলতে কাজ করেন, বেরোবেন ৬৪ জেলা ভ্রমণে—এমন পরিকল্পনা শুনেই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে আসে। তখনো অবশ্য দুজনের একজনও ঠিকমতো স্কুটি চালাতে পারতেন না। তবে দিন গড়াতেই মাঠ কিংবা ফাঁকা জায়গায় নির্ঝঞ্ঝাট চালাতে শিখলেন। একসময় রাজপথেও।

স্কুটি তো হলো। ভ্রমণের আনুষঙ্গিক খরচ? মানসী সাহা বলছিলেন, ‘নিজেদের টিউশনির টাকায় পুরো কাজটি আমাদের করতে হয়েছে।’ তবে একটা সময় এসে জ্বালানি সহায়তা পেয়েছেন দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ৩৬ জেলায় যাতায়াতের তেল খরচ দিয়েছে বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন সরকারের উপসচিব নূরুন আকতারসহ বিভিন্ন জেলায় পরিচিত ভ্রমণপিপাসুদের।

এই পরিচিত মানুষদের সহায়তাতেই স্কুল নির্বাচন করতেন। স্কুলের মেয়েদের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন। মতবিনিময়ের মধ্যে থাকত মহান মুক্তিযুদ্ধ, বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা ও পরিচ্ছন্নতা, বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান, আত্মরক্ষার কৌশল, বাল্যবিবাহসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়। এরপর স্কুটি হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াতেন সেই জেলার দর্শনীয় স্থান।

আগামীকাল ৫ মে ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ উদ্যোগের ৬৪তম জেলার আয়োজন। তবে দুই বন্ধু স্কুটিতে ৬৪ জেলা ঘোরার সেই মাইলফলক পেরিয়েছেন আরও আগেই। এবার তো দৃষ্টি বিশ্ব জয়ের।