কেনার সামর্থ্য যাদের নেই

তানজিল আহম্মেদ খান
তানজিল আহম্মেদ খান

‘কেনার সামর্থ্য যাদের নাই, তাদের জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ।’ বাক্যটি কাচঘেরা পোশাকের দোকানটির তিনটি অংশে সাঁটানো। ঈদের সময় এলেই তা ঝুলতে থাকে। শহরের অসহায় শিশুরা এসেও ঢুঁ মারে, পছন্দমতো পোশাক নিয়ে যায়। অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অনন্য উদ্যোগটি মাদারীপুরের শিবচরের তানজিল আহম্মেদ খানের। ২০১৭ সাল থেকে এভাবেই অসহায় শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে নতুন পোশাক বিতরণ করছেন তিনি।

তানজিল আহম্মেদ শিবচর পৌর এলাকার বাসিন্দা। পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালে শিবচর খলিফা পট্টি মার্কেটে এই পোশাক বিক্রির দোকান দেন, যার নাম দেন ‘কিডস ক্লাব’। পোশাক বিতরণের গল্প শোনাচ্ছিলেন তানজিল, ‘প্রথম বছরের কথা। ঈদের আগে আগে আমার দোকানে এক পথশিশু আসে। সে দোকানের সামনে টাঙানো একটি নতুন জামা হাতে নিয়ে দেখছিল। বুঝতে পারি, তার সেটা পছন্দ হয়েছে। আমি শিশুটাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে নতুন একটি জামা পরিয়ে দিই। নতুন কাপড় পেয়ে ওই শিশুর হাসি আমাকে আত্মহারা করেছিল।’ এরপর থেকেই তানজিল আহম্মেদ ঈদে অসহায় শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

২৮ মে কিডস ক্লাব নামের ওই দোকানে গিয়ে দেখা গেল মানুষের ভিড়। শিবচর আবাসিক এলাকায় মানুষের বাসায় কাজ করেন পলি বেগম। তিনি কুষ্টিয়া থেকে গত ছয় মাস আগে শিবচরে কাজের সন্ধানে এসেছেন। তাঁর স্বামী অসুস্থ। ছোট ছোট দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে তিনি এসেছেন কিডস ক্লাবে। ছেলেমেয়েদের জন্য পছন্দের পোশাকটি নিতে পেরে খুশি পলি বেগম। তিনি বলেন, ‘কোনো কালেই পোলা-মাইয়াগো ঈদ আইলে নতুন জামা কিইনা দিতে পারি না। নতুন জামা ফিনদা ওরা কহনোই ঈদ করে নাই। এখানে আইয়া দেহি নতুন জামাকাপড় দেয়। পরে ওগের জন্য চাইলে তারা আমার পোলা-মাইয়াগো জামা ফিনদিয়া দেয়।’

তানজিলের দোকানের পোশাক বিনা মূল্যে পান অসহায় মানুষেরা
তানজিলের দোকানের পোশাক বিনা মূল্যে পান অসহায় মানুষেরা

অসহায় মানুষের পাশাপাশি দোকানটিতে ঈদের কেনাকাটা করতেও সাধারণ ক্রেতারা এসেছেন। দোকানির এই অনন্য উদ্যোগ তাঁদেরও নজর কেড়েছে। আবুল খায়ের খান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি দোকানে ঢুকতেই দেখি লেখটি, যা দেখে রীতিমতো আমি অবাক হয়ে যাই। পরে ওই দোকানিকে তাঁর মহতী উদ্যোগের জন্য স্বাগত জানাই।’

অসহায় শিশুদের জন্য অনন্য এই উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে কিডস ক্লাবের স্বত্বাধিকারী তানজিল আহম্মেদ খান বলেন, ‘ঈদে নতুন পোশাক পেয়ে অসহায় শিশুদের মুখে যে হাসি, তা আমি এই দোকান না দিলে বুঝতেই পারতাম না। আমি প্রতিবছর ব্যবসার যা লাভ হয়, তার একটি বড় অংশের টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে শিশুদের জন্য পোশাক কিনে আনি। এ বছর তিন লাখ টাকার মতো পোশাক তুলেছি অসহায় শিশুদের জন্য। ওরা হাসলে যেন আমি ঈদের খুশি খুঁজে পাই।’