ঈদ আনন্দে নতুন জামা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী উদ্যোগ নিয়েছিল নতুন পোশাক বিতরণের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী উদ্যোগ নিয়েছিল নতুন পোশাক বিতরণের

২০ মে সকালবেলা। ঘড়ির কাঁটা বেলা ১১টা ছোঁয়নি তখনো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় একটি অস্থায়ী দোকানের সামনে ভিড় করে আছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। তবে সেই ভিড় গাদাগাদি কিংবা এলোপাতাড়ি নয়। দুটি আলাদা সারিতে সুশৃঙ্খলভাবে অপেক্ষা করছে ছেলে ও মেয়েরা। ছেঁড়া, ময়লা জামা গায়ে জড়ানো কারও। কেউ এসেছে উদোম গায়ে। কিন্তু সেদিনের সেই সকালবেলায় আপাদমস্তক দুঃখ বয়ে বেড়ানো মুখগুলোতে ফুটে উঠেছিল স্নিগ্ধ আনন্দের ঝিলিক। অল্পে তুষ্ট শিশুরা সেদিন ঈদ উপলক্ষে পেতে যাচ্ছে নতুন পোশাক, রঙিন জামা।

আয়োজকেরা এসে পৌঁছাতেই হইহই করে উঠল সারিবদ্ধ শিশুরা। খুব স্বল্প পরিসরে হলেও স্বপ্নের মতো একটি সকালের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করতে যাচ্ছে সমাজের এই স্বপ্নহীন অংশ। আর এই স্বপ্নের সকালটি উপহার দিচ্ছে ‘স্বপ্নের দোকান’ নামের একটি উদ্যোগ। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ফর পিসের (সিডিপি) এই উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নে মূল ভূমিকায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আর্থিক সহায়তার মূল অংশটিও এসেছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই। বেশ কয়েকজন শিক্ষকও অর্থ-সহায়তা দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক সহায়তার পাশাপাশি সিডিপি কিছু আর্থিক প্রণোদনাও প্রদান করে।

সেই দোকানে প্রায় ২০০ নতুন পোশাক থরে থরে সাজানো। সারিবদ্ধ শিশুরা একে একে এসে জামা পছন্দ করছে। আয়োজকেরা অতি যত্নে গায়ে পরিয়ে দিচ্ছেন ওদের। এই আয়োজনের অন্যতম আয়োজক লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহ সাকিব সাদমান। ‘চাইল্ড লেবার ইন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস’ শিরোনামে একটি একাডেমিক অভিসন্দর্ভ তৈরি করতে গিয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন ওদের জীবনপ্রবাহের নানা দিক। তখন থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু একটা করার ভাবনা আসে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ে আসেন নিজ বিভাগের বন্ধু পল্লব রানা পারভেজ, সানজিদা ইসলাম, তৃষা হালদার, বৈশাখী, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ফাতেমা ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোশাক বিতরণের উদ্যোক্তা শাহ সাকিব সাদমান বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা ছিল নতুন কাপড় বিতরণের। সে লক্ষ্যেই কাজ করছিলাম। অর্থ সংগ্রহ করছিলাম। এমন সময় সিডিপির স্বপ্নের দোকানের ভাবনাটা ভালো লেগে যায়। ওদের সঙ্গে যুক্ত হই। সিডিপির সহায়তা পেয়ে আমাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে সুবিধা হয়েছে।’

আয়োজকদের ইচ্ছা, প্রতিবছরই আয়োজিত হবে স্বপ্ন বিক্রির এই ‘স্বপ্নের দোকান’। মুখে লেগে থাকা স্বর্গীয় হাসিটুকুর বিনিময় মূল্য হিসেবে আয়োজকদের ফিরিয়ে দিয়ে ফের কোলাহলে মিশে যাবে এই অসহায় শিশুরা।