স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু : ৯০ হাজার মানুষের ভোগান্তি কমল

সরিষাবাড়ীতে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হয়েছে এই কাঠের সেতু। ছবি: ছুটির দিনে
সরিষাবাড়ীতে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হয়েছে এই কাঠের সেতু। ছবি: ছুটির দিনে

যমুনার শাখানদীটা যেন চর সরিষাবাড়ীর মতো কয়েকটি গ্রামের বিচ্ছেদরেখা। এই নদীর কারণে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে এলাকাটি বিচ্ছিন্ন ছিল। এ জন্য কত দুর্ভোগের সাক্ষীই না চরবাসী। এসব দুর্ভোগ অনেকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। তবে গত ২৭ মার্চ স্বপ্না বেগমের করুণ পরিণতি আবেগাপ্লুত করেছিল গ্রামবাসীকে। যখন মুহূর্তে খবরটা ছড়িয়ে পড়ল, তাঁদেরই গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে স্বপ্না বেগম প্রসববেদনায় কাতর হয়েছিলেন, শুধু পারাপারের অসুবিধার কারণে তাঁকে দ্রুত উপজেলা সদরের হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। নদীর এ পারেই মারা যান তিনি।

স্বপ্নার মৃত্যুশোক ছুঁয়ে যায় গ্রামের মানুষকে। ছুঁয়ে যায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর কবিরকেও। অনেকে এসে তাঁকে বললেন, এভাবে আর চলতে পারে না, কিছু একটা করা দরকার। তিনি তৈরিই ছিলেন, অন্যদের কথায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে উদ্যোগী হলেন। গ্রামবাসীকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকলেন। সেই বৈঠকেই আলমগীর কবির প্রস্তাব করলেন নদীর ওপর কাঠের সেতু নির্মাণের। গ্রামবাসীও স্বাগত জানালেন তাঁর উদ্যোগকে।

এ জন্য চর সরিষাবাড়ী গ্রামের নারী-পুরুষ সরকারি সহায়তার অপেক্ষা করলেন না, নিজেরাই সেতু নির্মাণ করার জন্য গাছ ও টাকা সংগ্রহ করতে থাকলেন। আটঘাট বেঁধে গ্রামবাসী নেমে পড়লেন সেতু নির্মাণে। কেউ পাইলিং করলেন, কেউবা তার মধ্যে ২৫ ফুট কাঠের গোলাই পোঁতার কাজটি করলেন। কেউ কেউ তার ওপর কাঠের পাটাতন নির্মাণের কাজটিতে হাত লাগালেন। নিজেদের শ্রম আর অর্থায়নে উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর সরিষাবাড়ী গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত যমুনার শাখানদীর ওপর গড়ে উঠতে থাকল কাঠের সেতু। সম্মিলিত শ্রমের সে উদ্যোগেই শামিল হলেন প্রথম আলো সরিষাবাড়ী বন্ধুসভার সদস্যরা। গত ২৬ এপ্রিল গ্রামবাসীর সঙ্গে বন্ধুসভার বন্ধুরা সেতুর সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করে দিলেন।

সব কাজ শেষে ৪ জুন ঈদুল ফিতরের আগের দিন সেতুটি যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আলমগীর কবির বলেন, এই ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ প্রস্থের কাঠের সেতুটি দুই ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ৯০ হাজার মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়েছে। উপজেলা সদরে যেতে তাদের এখন কষ্ট পোহাতে হয় না।