বোতলের মুখ খোলার যত কসরত

শুরুটা হয়তো কাজাখস্তানের তায়াকোন্ডো গুরু ফারাবি ডেভলেটচিনের, তবে জনপ্রিয় করেছেন হলিউড তারকা জ্যাসন স্টেথাম। এরপর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক তারকাই অংশ নিয়েছেন বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জে। ছবিতে (ওপরে বাঁ থেকে ডানে) জ্যাসন স্টেথাম, অক্ষয় কুমার, খিজির হায়াত, মারিয়া ক্যারি, (নিচে বাঁ থেকে ডানে) পরিণীতি চোপড়া, ফারাবি ডেভলেটচিন, জাস্টিন িববার ও জন মায়ার। ছবি: স্ক্রিনশট
শুরুটা হয়তো কাজাখস্তানের তায়াকোন্ডো গুরু ফারাবি ডেভলেটচিনের, তবে জনপ্রিয় করেছেন হলিউড তারকা জ্যাসন স্টেথাম। এরপর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক তারকাই অংশ নিয়েছেন বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জে। ছবিতে (ওপরে বাঁ থেকে ডানে) জ্যাসন স্টেথাম, অক্ষয় কুমার, খিজির হায়াত, মারিয়া ক্যারি, (নিচে বাঁ থেকে ডানে) পরিণীতি চোপড়া, ফারাবি ডেভলেটচিন, জাস্টিন িববার ও জন মায়ার। ছবি: স্ক্রিনশট

অবশেষে একটি নিরাপদ ‘চ্যালেঞ্জ’ পেলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। নাম ‘বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ’। এর জন্য আপনাকে ‘কিকি চ্যালেঞ্জ’-এর মতো গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নাচতে হবে না কিংবা ‘বার্ডবক্স চ্যালেঞ্জ’-এর মতো চোখে কাপড় বেঁধে রাস্তায় হাঁটতে হবে না। শুধু একটা বোতলের ছিপি বা মুখ খুলতে পারলেই চ্যালেঞ্জে জিতে যাবেন আপনি। তবে সেই বোতলের মুখ খোলায় থাকতে হবে অভিনবত্ব। এ মাসের শুরু থেকে বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ সাড়া ফেলেছে সবখানে। বিশেষ করে হলিউড তারকা জ্যাসন স্টেথাম ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরে এক লাথিতে যেভাবে বোতলের মুখ খুলেছেন, তা দেখে সবাই রীতিমতো এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাপক রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে।

যেভাবে শুরু

সুনির্দিষ্টভাবে এই বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সবচেয়ে পুরোনো যে ভিডিওটি দেখা যায়, সেটি হলো কাজাখস্তানের একটি তায়াকোন্ডো গুরুর, নাম ফারাবি ডেভলেটচিনের। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুন ফারাবি এক লাথিতে বোতলের মুখ খোলার ভিডিও পোস্ট করেন ইনস্টাগ্রামে। তাতে ফারাবি ‘ফারা কিক চ্যালেঞ্জ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে একই কসরত করার অনুরোধ করেন হলিউড তারকা জ্যাসন স্টেথাম, জ্যঁ-ক্লদ ভ্যান ডেম, জ্যাকি চ্যান ও মিক্সড মার্শাল আর্ট তারকা কনর ম্যাকগ্রেগরকে। তবে ফারাবির ভিডিও পোস্ট করার পরপরই কিন্তু রাতারাতি সাড়া ফেলেনি এই চ্যালেঞ্জ। বেশ সময় লেগেছে। ২৬ জুন এই চ্যালেঞ্জে অংশ নেন এরোলসন হিউ। তিনি তাঁর মার্শাল আর্ট মেধা দিয়ে চ্যালেঞ্জে সফল হয়ে নতুন করে এর জন্য বন্ধু মিক্সড মার্শাল আর্ট তারকা ম্যাক্স হলোওয়েকে মনোনীত করেন। ম্যাক্স ব্যর্থ হন এক লাথিতে বোতলের মুখ খুলতে। ম্যাক্স মনোনীত করেন সংগীতশিল্পী জন মায়ারকে। সেই থেকে ‘বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ’-এ তারকা-সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে।

৩০ জুন জন মায়ার ইনস্টাগ্রামে তাঁর বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জের ভিডিও পোস্ট করেন। এ পর্যন্ত ভিডিও প্রায় ৭১ লাখ ৫৮ হাজার দেখা হয়েছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওটি তখনো আসেনি। জন মায়ার বন্ধু ও অভিনেতা জ্যাসন স্টেথামকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। দেরি না করে ১ জুলাই জ্যাসন তাঁর ভিডিওটি পোস্ট করেন ইনস্টাগ্রামে। এ পর্যন্ত দুই কোটি বারের বেশি সেই ভিডিও দেখেছে বিশ্ববাসী। জ্যাসনের লাথি মেরে বোতলের ছিপি খুলে ফেলার ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়, সেই সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায় বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জও।

বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ কী? 

একটি বোতলের মুখ বা ছিপি হালকা করে খুলে বোতলটি একজন ধরে রাখবেন। সেই বোতল চ্যালেঞ্জের জন্য মনোনীত ব্যক্তি এক লাথিতে কিংবা বিশেষ কোনো কায়দায় খুলে দেখাবেন। ক্যামেরার স্লো মোশন অপশন ব্যবহার করে এটি ভিডিও করবেন একজন। এরপর সেই ভিডিও পোস্ট করতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বোতলের মুখ খুলতে সফল হলে (কিংবা ব্যর্থ হলেও) মনোনীত ব্যক্তি আরও একজন বা একাধিক জনকে এই চ্যালেঞ্জের জন্য মনোনীত করবেন।

আলোচিত বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ

শুধু লাথি মেরে নয়, মানুষ নানান অভিনব কায়দায় বোতলের ছিপি খোলার কসরতে মেতে উঠেছেন। কেউ স্যান্ডেল ছুড়ে মেরে খুলছেন বোতলের ঢাকনা, কেউ আবার স্পোর্টস কারের হুড দিয়ে খুলছেন ছিপি। আবার মার্কিন গায়িকা মারিয়া ক্যারি তাঁর ধারালো কণ্ঠ দিয়ে সুর তুলে বোতলের ছিপি খুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। তা ছাড়া কেন্ডেল জেনার, জাস্টিন বিবার, রায়ান রেনল্ডসও নিজ নিজ চ্যালেঞ্জের ভিডিও দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন। শুধু পশ্চিমেই নয়, উপমহাদেশেও এই বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ সাড়া ফেলেছে। জ্যাসন স্টেথামকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কোনো মনোনয়ন ছাড়াই বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছেন অক্ষয় কুমার। অক্ষয়কে ছাড়িয়ে গিয়ে চোখ বেঁধে এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছেন বলিউডের টাইগার শ্রফ। অভিনব কায়দা বোতলের ছিপি খোলার এই খেলায় অংশ নিয়েছেন পরিণীতি চোপড়া, কুনাল খেমুসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশেও অনেককে দেখা গেছে বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে। এদের মধ্যে রয়েছেন কার্ভ মাগা প্রশিক্ষক এডওয়ার্ড এফ গোমেজ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খানসহ শরীরচর্চাবিদ, মার্শাল আর্ট শিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও।

কতটা নিরাপদ?

অন্য অনেক আলোচিত-সমালোচিত চ্যালেঞ্জের চেয়ে এই বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ অনেকটাই নিরাপদ। তবে এরপর ঘটনার সঙ্গে দুর্ঘটনা তো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েই থাকে। এই যেমন বাংলাদেশে একজনের বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জের ভিডিওতে দেখা গেছে, বোতলে লাথি মারার পর তা উড়ে গিয়ে ভিডিও ধারণকারীর গায়ে লেগেছে। তিনি মজা করে সেই ভিডিও ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘আমি আমার ক্যামেরাম্যানকে প্রায় মেরেই ফেলতে নিয়েছিলাম।’ এমন ছোটখাটো অঘটন তো থাকেই। তবে যাঁরা একটু হলেও শরীরচর্চা করে থাকেন, তাঁদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ খুবই মজার। ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে লাথি মারার আগে একটু স্ট্রেচ করে নিলেই আর মাংসপেশিতে টান লাগার আশঙ্কা থাকে না।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, মিরর ইউকে