চাঁদের পাথর

আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যে। আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটা ছিল কলোরাডোর রাজধানী ডেনভার থেকে কয়েক শ মাইল দূরে। জায়গাটার নাম ইলিভেন মাইল ক্যানিয়ন। পার্বতে ঘেরা এলাকা। মানুষজনও খুব কম। এখানে সন্ধ্যার পর কারও খুব একটা কাজ থাকে না। দলবেঁধে আমরা পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াই। টর্চ নিতে হতো না। চাঁদের আলোয় অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেত। রকি মাউন্টেন তখন চাঁদের আলোয় মাখামাখি। বরফে ঢাকা পর্বতের সাদা মাথাগুলো অ্যালুমিনিয়ামের থালার মতো ঝকঝক করত। পাহাড়ে বড় বিচিত্র এই জ্যোৎস্না।

প্রতি বৃহস্পতিবার সহকর্মী স্কট আর আমাকে পাশের পর্বত ব্লু মাউনটেইনে যেতে হতো। কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে আমরা রাত ১০টার দিকে রওনা দিতাম, ভোর থাকতে থাকতে পিকে পৌঁছে যেতাম। এখনে সূর্যোদয় দেখাতে তাদের নিয়ে আসতে হতো। এগুলো ছিল আমাদের বাড়তি দায়িত্ব। কিন্তু দুজনে খুব আগ্রহ নিয়ে যেতাম। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়লে আমরা রওনা দিতাম। একদিন স্কট বলল, ‘যদি
কখনো ওয়াশিংটন ডিসিতে যাও, চাঁদের পাথর দেখে এসো। এ যেনতেন দেখা না, ধরে দেখা যায়!’ স্কটের কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাকিটুকু দ্রুত জেনে নিলাম।

দুই বছর আগের সেই সফর শেষে দেশে ফেরার আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজির হয়েছি। সেখানে হোয়াইট হাউসসহ কত কিছু যে আছে দেখার! আমি প্রথমে গেলাম এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামে। বিশাল তাদের সংগ্রহ। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম উড়োজাহাজের মডেল থেকে আধুনিক মহাকাশযান (স্পেসশিপ)—কী নেই তাদের। কিন্তু আমি আটকে গেলাম একখণ্ড চাঁদের পাথরে! একেবারে সত্যিকারের চাঁদের পাথর! বিপুল বিস্ময় নিয়ে চাঁদের পাথর দেখলাম! কাচের মধ্য থেকে দেখা নয়। এই পাথরে হাত রাখা যায়! ছুঁয়ে দেখা যায়! নভোযান অ্যাপোলো যেখানে অবতরণ করেছিল, তার পার্শ্ববর্তী উপত্যকা থেকে তুলে আনা হয়েছিল এই পাথর। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলেছেন, এই পাথরের বয়স কম করে হলেও ৪০০ কোটি বছরের কাছাকাছি।

ঘোরের মধ্যে চাঁদের পাথরে হাত রাখলাম। বুকের ভেতরে কেন যেন হু হু করে উঠল! সুখ, দুঃখ, সাহসজাগানিয়া প্রিয় চাঁদটা আজ ছুঁয়ে দেখছি!

ঢাকা।