অসৎভাবে বেঁচে থাকায় আনন্দ নেই: খলিল ঢালী

খলিল ঢালী
খলিল ঢালী
>ঢাকার দোহার উপজেলার সিএনজি অটোরিকশাচালক খলিল ঢালী। ৩ আগস্ট তিনি রাস্তার পাশে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক লাখ টাকা, দামি মুঠোফোনসহ একটি ব্যাগ। সততার সঙ্গে মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। খলিল ঢালীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি কাজী সোহেল।

টাকাভর্তি ব্যাগটি কীভাবে পেয়েছিলেন?
৩ আগস্ট দুপুরে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। কেরানীগঞ্জের লাকিরচর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর ওপর তুলসীখালী সেতুর ঢালে এলে একটি ব্যাগ কুড়িয়ে পাই। ব্যাগটি পাওয়ার পর দেখি, ভেতরে অনেক টাকা এবং প্রয়োজনীয় বেশ কিছু কাগজপত্র, ব্যাংকের এটিএম কার্ড। পরে টাকা গুনে দেখি এক লাখ।

ব্যাগের মালিককে পরে খুঁজে বের করলেন?
ব্যাগে একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রও ছিল। সেই আইডি কার্ডের ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানলাম ব্যাগের মালিক জিয়াউল ইসলাম। তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলার ছাতিয়ার বাসিন্দা। পরিচিত হওয়ার পর জানলাম, তিনি কাতারপ্রবাসী। তাঁর বাসায় গিয়েই ব্যাগটি ফেরত দিয়েছি।

টাকাসহ কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে খলিল ঢালী গিয়েছিলেন জিয়াউল ইসলামের বাড়িতে।
টাকাসহ কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে খলিল ঢালী গিয়েছিলেন জিয়াউল ইসলামের বাড়িতে।

টাকাগুলো ফেরত দিলেন কেন?
আমি সিএনজি চালিয়ে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করি। মালিককে ব্যাগটি ফেরত দিতে পেরে আমি খুশি। অন্যের টাকার প্রতি আমার লোভ নেই। আমি এর আগেও যাত্রীদের টাকা ও স্বর্ণালংকার পেয়েছি। সব সময় তা ফেরত দিয়েছি। আল্লাহ আমাকে যেভাবে রেখেছেন, সেভাবেই খুশি। অসৎভাবে বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। আমি চাই যত দিন বাঁচব, সততা নিয়ে বাঁচব।
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
দোহারের মেঘুলা গ্রামে থাকি। পাঁচ বছর আগে পদ্মায় বসতভিটা হারিয়েছি। এখন এলাকার আলী আজগর মাঝির বাড়িতে ভাড়া থাকি। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে বসবাস করেছি। বাবা হোসেন ঢালী আমার জন্মের আগেই মারা যান। মা সূর্য বেগমও পরপারে চলে গেছেন ১২ বছর আগে। স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে আমার সংসার। মেয়ে নুরুন নাহারকে বিয়ে দিয়েছি এক বছর আগে। আর ছেলে রায়হান ঢালী স্কুলে পড়ে। একসময় রিকশা চালাতাম, ১০ বছর ধরে সিএনজি অটোরিকশা চালাই। জীবনটা আমার দুঃখ-কষ্টে কাটছে, কিন্তু কোনো দিন অসৎ পথে উপার্জনের চিন্তা করিনি।