লটারির টাকা যেভাবে উড়ে যায়

মাইকেল ক্যারল, ২০০২ সালে লটারিতে জিতেছিলেন ১ কোটি পাউন্ড স্টারলিং! ছবি: সংগৃহীত
মাইকেল ক্যারল, ২০০২ সালে লটারিতে জিতেছিলেন ১ কোটি পাউন্ড স্টারলিং! ছবি: সংগৃহীত

মনোবিদেরা বলেন, যারা অনেক টাকা লটারিতে পায়, তারা ডানে-বাঁয়ে এমনভাবে টাকা ছড়াতে থাকে যে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের পকেট হয়ে যায় গড়ের মাঠ। সহজে টাকাটা পায় তো, তাই মনে করে এভাবেই টাকা থেকে যাবে জীবনের শেষ অবধি। কিন্তু এই ভাগ্যবানদের জীবনে কিছুদিনের মধ্যেই নেমে আসে সংকট। নিজেকে উজাড় করে টাকা খরচ করতে করতে একসময় তারা দেখে, ট্যাঁকে টান পড়েছে। খুব পছন্দ হয়েছে একটা বিলাসে ভরপুর বাড়ি কিংবা অত্যাধুনিক গাড়ি, কিন্তু সেটা কেনার মতো টাকা আর তখন পকেটে নেই। ভাগ্যবানদের কেউ কেউ আবার স্থাবর কিছু কিনে নেওয়ার আগেই শেষ করে ফেলে টাকা। পানির মতো খরচ হয়ে যায় লাখ লাখ টাকা। যেভাবে হঠাৎ টাকা এসে হাজির হয়েছিল, চোখের পলক ফেলতেই দেখা গেল, তা চলে গেছে।

লটারির টাকা যে স্রোতের টানে ভেসে যায়, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ তো রয়েছে হাতের কাছেই—ব্রিটেনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাইকেল ক্যারল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেই কাটছিল তাঁর জীবন। কিন্তু এই জীবনে একটা পরিবর্তন নিয়ে এল লটারি। ২০০২ সালে মাইকেল ক্যারল লটারিতে জিতলেন ১ কোটি পাউন্ড স্টারলিং! এরপর তাঁর জীবনটা আর জীবন থাকল না, হয়ে গেল রূপকথা। তবে এই টাকা খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল। এরপর তাঁর বউ চলে গেলেন। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে এলেন তাঁর আগের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জীবনে! মাইকেল ক্যারলের জীবনটা এতটাই চমকপ্রদ যে তাঁকে নিয়ে বিশ্বজুড়েই অনেক লেখালেখি হয়েছে। অন্যদের কথা বলে আমরা তাই আবার ফিরে আসব মাইকেলের কাছে। দেখব, কী করে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে কোটিপতি এবং কোটিপতি থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেন।

১৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক ক্যালি রজার্সও ২০০৩ সালে লটারিতে পেল বিশাল অঙ্কের অর্থ—১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ পাউন্ড স্টারলিং। সারা জীবনের জন্য এই টাকা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বন্ধুবান্ধব নিয়ে ইচ্ছেমতো লটারির টাকা উড়িয়ে ফেলল ক্যালি। টিকে যাওয়ার মতো একটা কাজই এই টাকা দিয়ে করতে পেরেছিল সে। প্লাস্টিক সার্জারি করে বদলে ফেলেছিল নিজের চেহারা। এখন মনে দুঃখ নিয়ে ক্যালি তার লটারি পাওয়ার কথা স্মরণ করে। স্বীকার করে, এতগুলো টাকা হাতে পাওয়ার মতো বয়সই তখন তার হয়নি। তাই জানত না, কীভাবে টাকা খরচ করতে হয়। এখন ক্যালি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে, কমবয়সীদের যেন লটারির টিকিট কিনতে দেওয়া না হয়।

ক্যালি রজার্স, এই ব্রিটিশ তরুণী ১৬ বছর বয়সে ২০০৩ সালে লটারিতে জিতেছিলেন ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ পাউন্ড স্টারলিং। ছবি: সংগৃহীত
ক্যালি রজার্স, এই ব্রিটিশ তরুণী ১৬ বছর বয়সে ২০০৩ সালে লটারিতে জিতেছিলেন ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ পাউন্ড স্টারলিং। ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক জেইন পার্কস লটারিতে পেয়েছিল ১০ লাখ ডলার। লটারির টাকা পাওয়ার চার বছর পর সে ঘোষণা করেছে, এই লটারি তার জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। সে এই টাকা দিয়ে কী করেছে, তার বর্ণনা দিয়েছে। একটা কুকুর নিয়েছে (পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট আকারের কুকুর, যাকে চিহুয়াহুয়া নামে ডাকা হয়), দুটো বাড়ি কিনেছে, তার স্তনের আকার বড় করেছে। সবকিছুই হয়েছে, শুধু জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেছে। আর হারিয়ে গেছে জীবনের অর্থ। তার কথায়, ‘মানুষ বুঝবে না, এই টাকার কারণে কী বাজে একটা জীবন কাটাতে হচ্ছে আমাকে! অর্থ-প্রতিপত্তি, গাড়ি-বাড়ি জীবনের সবকিছু নয়। জীবনে সুখই যদি না থাকল, তাহলে এগুলো দিয়ে কী হবে?’

পার্কস আদালতে মামলা করেছে, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যেন কাউকে লটারির টিকিট কিনতে দেওয়া না হয়।

এবার দেখা যাক কানাডায় বসবাসকারী কিরবি আর মেরি ফনটেইনের জীবনে কী ঘটেছিল। অকস্মাৎ তাঁরা লটারিতে জিতলেন ৫ কোটি ডলার। ব্যস, শুরু করে দিলেন মানবসেবা। দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন ফান্ডে দিতে থাকলেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। একসময় ফুরিয়ে গেল সেই ৫ কোটি ডলার। তাতে কি মন খারাপ হলো ফনটেইন দম্পতির? একেবারেই না। তাঁরা ঘোষণা করলেন, বহুদিন তো এই ৫ কোটি ডলার ছাড়াই তাদের জীবন চলে গেছে, সুতরাং আবার সেভাবেই চালিয়ে নেবেন জীবন।

ট্রাকচালক ডেভ ডায়াসের গল্পটা একটু অন্য রকম। শুধু অন্য রকম নয়, সুখকর। তিনি লটারিতে পেয়েছিলেন ১০ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড স্টারলিং। যেদিন এই টাকা হাতে এল, সেদিন ব্রিটেনের ধনীদের তালিকায় ৭০৩ নম্বরে দেখা গেল ডেভের নাম। এরপর সে নাম আর তালিকায় ছিল না। তাহলে এই টাকা দিয়ে কী করেছিলেন ডেভ? নিমেষে উড়িয়ে দিয়েছিলেন? একেবারেই না। ডেভ এই টাকা পেয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আরও ২০ জন মানুষকে কোটিপতি করতে চান। যাঁরা ডেভের জীবনের বিভিন্ন সময় নানাভাবে তাঁকে সাহায্য করেছেন, এমন ২০ জনকে কোটি কোটি ডলারের ভাগ দিলেন তিনি। ডেভ সেই ধরনের মানুষ, যিনি বিপদের সময় যাঁরা বন্ধু ছিলেন, তাঁদের মনে রেখেছেন।

জেইন পার্কস, ১৭ বছর বয়সে লটারিতে জিতেছিলেন ১০ লাখ ডলার। ছবি: সংগৃহীত
জেইন পার্কস, ১৭ বছর বয়সে লটারিতে জিতেছিলেন ১০ লাখ ডলার। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অধিবাসী গ্লোরিয়া ম্যাকেঞ্জি যখন লটারিতে ৬০ কোটি ডলার পেলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর। টাকা পেয়েই গ্লোরিয়ার মনে পড়ল তাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা, যেখানে তিনি পড়েছিলেন ৭৫ বছর আগে। ব্যস, আর কথা নেই। টাকা পেয়েই কয়েক মিলিয়ন ডলার তিনি পাঠিয়ে দিলেন সেই স্কুলের ঠিকানায়। বললেন, ‘ভালোভাবে পুনর্নির্মাণ করো স্কুলভবন।’

এক নদীতে দুবার স্নান করা যায় না—এ রকম প্রবাদ আছে আমাদের দেশে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এভেলিন অ্যাডামস এক নদীতে দুবার স্নান করেছেন। মানে তিনি পর পর দুবার জ্যাকপট পেয়েছেন। তাও আবার কাছাকাছি সময়ে—১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে। টাকার পরিমাণও কম নয়, ৫৫ লাখ ডলার। কিন্তু ওই যে লোভে পেয়ে বসল, সে লোভ ছাড়ল না তাঁকে। একের পর এক জুয়া খেলে তিনি তাঁর সব টাকাই খোয়ালেন।

নাইজেরিয়ার রোজমেরি ওবিয়েকোর অবশ্য ঘটালেন একেবারে অন্য রকম ঘটনা। এতক্ষণ আমরা কোটি কোটি ডলার, পাউন্ড স্টারলিংয়ের কথা বলেছি। রোজমেরির অবশ্য অত বড় ভাগ্য ছিল না। কিন্তু যে অঙ্কটা জিতেছিলেন, সেটাও খুব কম নয়—১৬ হাজার ইউরো। যেদিন তাঁর হাতে এই অর্থ তুলে দেওয়া হলো, সেদিনই তিনি রাস্তায় নেমে প্রথম যে ভিখিরিকে দেখেছেন, তার হাতেই সে টাকা তুলে দিয়েছেন! যে ভিখিরি মুফতে এই টাকা পেয়েছেন, তিনি তো হতবাক। কিন্তু রোজমেরির ছিল দৃঢ় বিশ্বাস, সহজে যে টাকা আসে, পরিশ্রম ছাড়া যে টাকা আসে, তা মানুষের মনে শান্তি আনতে পারে না। বরং এই টাকা হয়ে উঠতে পারে দুঃখের কারণ। তাই লটারির মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা থেকে দূরে থাকলেন তিনি।

ফিরে আসি মাইকেল ক্যারলের গল্পে। এবার একটু বিশদে বলা যাক মাইকেল ক্যারলের কথা। আগেই বলেছি, ২০০২ সালে মাইকেলের জীবনে ঘটেছিল সেই অবিস্মরণীয় ঘটনা। ব্রিটেনের নরফোক কাউন্টির কিংস লিন শহরে আবর্জনা ফেলার কাজ করতেন ১৯ বছর বয়সী মাইকেল ক্যারল। ব্রিটেনের যেকোনো সাধারণ নাগরিকের মতোই মাইকেল রাষ্ট্রীয় লটারি ‘লোটো’র টিকিট কিনতেন। এবং বলা নেই কওয়া নেই, তার ভাগ্যেই নেমে এল জ্যাকপট। প্রায় ১ কোটি পাউন্ড স্টারলিংয়ের মালিক বনে গেলেন মাইকেল।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অধিবাসী গ্লোরিয়া ম্যাকেঞ্জি ৮৪ বছর বয়সে লটারিতে ৬০ কোটি ডলার জিতেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি নিজে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন সেটা পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অধিবাসী গ্লোরিয়া ম্যাকেঞ্জি ৮৪ বছর বয়সে লটারিতে ৬০ কোটি ডলার জিতেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি নিজে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন সেটা পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মাইকেলের নতুন জীবন শুরু হলো। শুধু কি তা-ই? নতুন জীবন উদযাপন উপলক্ষে হাতে টাকা পাওয়ার আগেই তিনি বন্ধুদের নিয়ে মদ গিললেন এবং তারই সুবাদে মারামারি করলেন শুঁড়িখানায়। বিচারক তাঁকে শাস্তি দিলেন।

টাকা হাতে পেয়েই কাজ থেকে ইস্তফা দিলেন মাইকেল। বউয়ের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন। কন্যাসন্তানকে নিয়ে স্ত্রী ঘর ছাড়লেন। মাইকেলের নতুন জীবনের সঙ্গী হলো মাদক, জুয়া, নারী এবং বন্ধুদের সঙ্গে বসে মাতলামি করা। রুটিন করে এই সব করে বেড়াতে লাগলেন মাইকেল এবং এই পথেই খুব দ্রুত তাঁর টাকাপয়সা শেষ হয়ে যেতে লাগল।

১ কোটি পাউন্ড স্টারলিং ব্রিটেনের মতো দেশে অনেক অনেক টাকা। যদি একটু বুদ্ধি করে চলা যায়, তাহলে এই টাকায় কাটিয়ে দেওয়া যায় একটি নয়, কয়েকটি জীবন। কিন্তু মাইকেলের জীবনে এই টাকা এক আজব ট্র্যাজিক নাটক ছাড়া কিছুই নয়। হাতের আঙুলের ফাঁক গলে বালি যেভাবে পড়ে যায়, তেমনি মাইকেলের টাকাপয়সাও পড়ে যেতে থাকল অন্ধকার জগতের মাটিতে। আচ্ছা, সত্যিই তো, এই টাকা কীভাবে খরচ করলেন মাইকেল? এত টাকাও খরচ করা যায়? একটা ছোট্ট হিসাব দিলেই বিষয়টা বেরিয়ে আসবে। বন্ধুদের সঙ্গে ‘ঘোরাঘুরি’ করে খরচ করেছেন ৫০ লাখ ডলার, ১০ লাখ পাউন্ড দিয়ে জুয়া খেলেছেন, ৪ লাখ পাউন্ডে কিনেছেন গাড়ি, ৩ লাখ পাউন্ড কিনেছেন বাড়ি, ২ লাখ ৩০ হাজার পাউন্ডের মাদক, ২ লাখ পাউন্ডে ব্রেসলেট জাতীয় পণ্য কিনেছেন। বাদবাকিটা খরচ হয়েছ ছোটখাটো কেনাকাটায়।

১ কোটি পাউন্ড পাওয়ার ৬ বছরের মাথায় তিনি পুরো টাকা তো শেষ করলেনই, যে অস্থাবর, স্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন, সেগুলোও বিক্রি করে দিয়ে সম্রাটের জীবন চালিয়ে যেতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে তার সব টাকাপয়সা শেষ হয়ে গেল তাঁর। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন মাইকেল ক্যারল। সে সময় প্রতি সপ্তাহে ৪২ পাউন্ড সরকারি ভাতা পাওয়া শুরু করলেন তিনি। কিন্তু এই টাকায় জীবন চালানো কঠিন বলে তিনি আবারও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে শুরু করলেন। তার আগেও আছে কিছু ঘটনা। সেটাও বলছি একটু পরে। তবে হ্যাঁ, যে টাকা ধার করেছিলেন, তার পুরোটাই শোধ করতে পেরেছিলেন মাইকেল।

লটারি জেতার পর মাইকেল ক্যারলের বিলাসবহুল জীবন। ছবি: সংগৃহীত
লটারি জেতার পর মাইকেল ক্যারলের বিলাসবহুল জীবন। ছবি: সংগৃহীত

এবং তারপর?
সত্যিই, আট বছরের সম্রাট-জীবনের শেষে একেবারে কপর্দকহীন হয়ে পড়ায় মাইকেলকে আক্ষরিক অর্থেই রাজপথে ঘুমাতে হয়েছে। ঘর নেই, চাকরি নেই, সে এক বিস্ময়কর পরিণতি! তখন মাইকেল চাকরি নিলেন এক বিস্কুট কারখানায়। সেখানে বেতন আসতে লাগল হাতে। আট বছরের রাজার জীবনযাপনের কথা ভুলে গিয়ে এই নতুন জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। হ্যাঁ, এ সময় তিনি তাঁর লাখ লাখ ডলার হাতের ডানে-বাঁয়ে ছড়াতে পারতেন না, কিন্তু এই জীবনটি তাঁর ভালোই লাগত। তখন তাঁর সাপ্তাহিক বেতন ২০৪ পাউন্ড।

মাইকেল তাঁর জীবনী লিখেছেন। সেখানে অনেক কিছু নিয়েই রসিকতা করেছেন। জীবনে আবার বাঁচার সুযোগ পেয়ে তিনি যারপরনাই সুখী। বন্ধুদের অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ১ কোটি ডলার কীভাবে খরচ করলে তুমি। এখন যদি পেতে, তাহলে কী করতে? মাইকেল তাঁদের বলেন, কম বয়সে এত বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়েছিলেন যে তিনি বুঝতেই পারেননি কী করে তা খরচ করতে হয়। ফলে বোকার মতো সব টাকাই উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর বয়সে যে কেউ এ রকম টাকা পেলে তাঁরই মতো উল্টোপাল্টা খরচ করতেন। সেই মাদক ও নারী সঙ্গময় সময়ের প্রতি এখন মাইকেলের কোনো ভালোবাসা নেই। আক্ষেপ নেই গাড়ি-বাড়ির জন্য। মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে মাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর মাইকেল এখন সাইকেলে করে কাজে যান।

এখনো লটারির টিকিট কিনে যাচ্ছেন মাইকেল। এ জন্য অনেকেই তাকে প্রশ্ন করেন, যদি আবার ১ কোটি পাউন্ড পান, তাহলে এবার কী করবেন তিনি? মাইকেল জানাচ্ছেন, যদি সে রকম কিছু ঘটেই যায়, এবার আর পাগলামি করবেন না তিনি। বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করবেন। এই টাকার একটা বড় অংশ তিনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দান করবেন। সেই সব প্রতিষ্ঠানেই দান করবেন, যারা শিশু ও কিশোরদের মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আরেকটা ইচ্ছে হলো, বাকি টাকা নিয়ে তিনি চলে যাবেন অস্ট্রেলিয়ায়, সেখানে কিনবেন অনেকগুলো বাড়ি এবং সে বাড়িগুলো ভাড়া দিয়ে কাটিয়ে দেবেন জীবনের শেষ দিনটা। তবে আগের মতো কিছু তাঁর জীবনে ঘটবে বলে বিশ্বাস করেন না মাইকেল ক্যারল।

বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে।