আমাজন পুরো পৃথিবীর জন্য শীতলীকরণ যন্ত্র

ড্যান নেপস্ট্যাড
ড্যান নেপস্ট্যাড

ড্যান নেপস্ট্যাড একজন বাস্তুবিদ্যাবিদ। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আমাজন নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। আর্থ ইনোভেশন ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড্যান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর (এনপিআর) সাংবাদিক অডি কর্নিশকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমাজনে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে কথা বলেন। পাঠকদের জন্য রইল ওই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ—

অডি কর্নিশ: আমাজনে লাগা আগুন কতটুকু ভয়াবহ? 

ড্যান নেপস্ট্যাড: আমাজন বনে এমন অনেক স্থান আছে, যেখানে মানুষের পা পড়েনি। যদি চলতি বছর তুলনামূলক বেশি শুষ্ক হয় এবং আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। বনে আগুন লেগেছে কি না, তা ভালো বোঝা যায় ধোঁয়ার পরিমাণ দেখে। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত অবস্থা পরিমাপ করা সহজ নয়। গহিন বনের যেসব অঞ্চলে মানুষের পা পড়েনি, সেগুলো কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা কতটুকু অঞ্চলে আগুন
ছড়িয়ে পড়েছে—তা সঠিকভাবে জানা কঠিন।

চলতি বছর কেমন চিত্র দেখা যাচ্ছে? এ বছরের অগ্নিকাণ্ড গত বছরগুলোর তুলনায় কতটুকু ভিন্ন?

ড্যান: এ বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি। গত এক দশকের তুলনায় এই অগ্নিকাণ্ডের বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। আগুন এখন দীর্ঘস্থায়ী রূপে দেখা দিচ্ছে। এর অর্থ হলো বনে অনেক গাছ কেটে ফেলে রাখা আছে এবং সেই গাছগুলোতে আগুন জ্বলছে। হয়তো ফসলের চাষ বা অন্য কোনো কারণে গাছগুলো কেটে শুকানো হয়েছে। পরে তাতে আগুন লেগেছে। ধোঁয়া বেশি হওয়ার কারণ হলো, গাছের প্রচুর ‘বায়োমাস’ পুড়ছে। গাছের বায়োমাস হলো একটি গাছে থাকা সব ধরনের জীবসংশ্লিষ্ট পরিমাপ। অর্থাৎ এর মধ্যে গাছ, লতাপাতা, গাছকে আশ্রয় করে থাকা ছত্রাক, পোকামাকড় সব থাকে। বায়োমাসে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত থাকে। আর সে কারণেই আগুনে ধোঁয়া বেশি হচ্ছে এবং তা পুরো অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আগুনে পুড়ছে একটি বৃক্ষ। ছবি: এএফপি
আগুনে পুড়ছে একটি বৃক্ষ। ছবি: এএফপি

আমাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যদি আরও বেড়ে যায়, তখন কী হবে? 

ড্যান: এখন আগুন যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে বলা যায়, এর পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের বিস্তৃতি আরও বেশি হবে। সেটি বনের আরও গহিনে ঢুকে যেতে পারে। তাতে আরও বেশি পরিমাণে গাছ মারা যাবে, ঘাস নষ্ট হবে, ঝোপঝাড় ধ্বংস হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে আক্রান্ত বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলো প্রাণ বাঁচাতে বনের আরও গভীরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে বনের যে আদি গঠন, তা পরিবর্তিত হতে শুরু হবে। এ কারণে আগে আমাজনের একটি অঞ্চল যেমন ছিল, তা আর তেমন থাকবে না। আমার কাছে আমাজনের এই পরিস্থিতিই সবচেয়ে উদ্বেগের মনে হচ্ছে। 

এর সমাধান কী? ব্রাজিল সরকার আমাজনকে রক্ষা করতে কী পদক্ষেপ নিতে পারে? 

ড্যান: আমার মনে হয়, এই সমস্যার সমাধানের ঢের সুযোগ আছে। বিষয়টি এমন নয় যে, আগুন নেভাতে গ্যালন গ্যালন পানি জমাতে হবে। বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি একটি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আগুন লাগতে পারে, এমন ব্যবস্থা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। যেমন প্রচুর গবাদিপশু পালন বন্ধ করা প্রয়োজন। ভূমির মালিকেরা যেন ব্যবস্থাপনার কাজে আগুন ব্যবহারে উৎসাহী না হোন, সেটি নিশ্চিত করা দরকার। তাহলে ভূমির মালিকেরা আগুন প্রতিরোধে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে।

কিছুদিন ধরেই একটি কথা খুব শোনা যাচ্ছে। তা হলো আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস। আমাজন রক্ষায় এভাবে চিন্তা-ভাবনা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? 

ড্যান: এভাবে চিন্তা করা একটু ভুল। আমাজনে আকারে অনেক বড় ও বয়স্ক গাছ আছে। মানুষ যেমন শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজনে অক্সিজেন গ্রহণ করে, তেমনি গাছগুলোও করে। আমাজন মূলত পুরো পৃথিবীর জন্য একটি ‘শীতলীকরণ যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করে। যখনই গাছের একটি পাতায় এক ফোঁটা পানি পড়ে এবং  তা পরে বাষ্পে পরিণত হয়, তখন এই প্রক্রিয়া শক্তি শোষণ করে চারপাশের পরিবেশ শীতল করতে ভূমিকা রাখে। আমাজন আকারে এতটাই বিশাল যে যদি আমরা এটি হারিয়ে ফেলি, তবে পুরো পৃথিবীতে যে পদ্ধতিতে বাতাস ও শক্তি কাজ করে, সেটি বদলে যাবে। এর অর্থ হলো আমাদের জলবায়ু বদলে যাবে। আমার মনে হয়, এই একটি কারণেই আমাজন ঠিকঠাক থাকার সঙ্গে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

অনুবাদ: অর্ণব সান্যাল