ছিনতাইকারীর খপ্পরে

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই সকাল শুরু হয়েছিল। চমৎকার রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের বিকেলটাও বেশ মনোরম। হালকা ঝিরঝির বাতাস বইছিল। এমন একটি দিনের শেষ ভাগে আমার সঙ্গে ভয়ানক কিছু ঘটবে, সেটা কে ভেবেছিল!

তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। উত্তরা পূর্ব থানার পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।‌‌ থানা থেকে সর্বোচ্চ এক শ গজ দূরত্ব হবে। এখানেই ঘটে সেই ঘটনা।

হঠাৎই একজন এসে আমাকে ধাক্কা দিল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ধাক্কা দিলি ক্যান? আমাকে চিনস। কোথায় যাচ্ছিস?’ ধাক্কা দিল সে নিজে, এখন উল্টো দায় চাপাচ্ছে আমার ওপর। মেজাজ বিগড়ে গেল। এক কথা, দুই কথায় তুমুল কথা-কাটাকাটি। এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় আমি আগে কখনোই পড়িনি।

পথ ধরি। সে আবার বলতে শুরু করে, ‘ওই, আবার কই যাস? বাবু ভাইয়ের এলাকায় থাইকা বাবু ভাইরে চিনস না? আমি বাবু ভাই।‌ যা হোক, ভুল করছিস।‌ অহন‌ কিছু খাওয়া।’

খাওয়াব মানে। এই নিয়ে শুরু হয় বিতণ্ডা। আমি হাঁটা শুরু করলে ধমক দিয়ে আমাকে দাঁড় করায়। তখন কী করব বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি, বিপদে পড়েছি। কীভাবে এখান থেকে মুক্তি পাব তাই ভাবছি।

ঘটনাস্থল থেকে বিশ কি পঁচিশ কদম দূরেই চায়ের দোকান। দোকানে বসা‌ লোকজন আমাদের দেখছে। তাদের দেখে মনে হলো, আমাদের বিতণ্ডা স্বাভাবিক ঘটনা। যথারীতি রিকশা, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যে বড় একটা খপ্পরে পড়েছি, সেটা তখন আমি বুঝতে শুরু করেছি।

একপর্যায়ে দেখি, আমার পেটের নিচে চাকু ধরা হলো। ভয়ে চিৎকার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না। পত্রিকার পাতায় এমন ঘটনা তো কতই ঘটে। মৃত্যুচিন্তা ভর করে। আমি চুপ করে রইলাম। ওরা প্রশ্ন করে, ‘সত্যি করে বল, তোর কাছে কয় টাকা আছে?’

সব মিলিয়ে ১৭০ টাকা দুই পকেট থেকে বের করে দিলাম। বললাম, ‘ভাই, আর কিছু নাই।’

আমার কাঁধে একটা ব্যাগ। আমি জানি, ব্যাগের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর আট হাজার টাকা আছে। এগুলো নিয়ে নিলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। ভয়ে আমি অসাড় হয়ে গেছি। যদি ব্যাগে হাত দেয়, তাহলে আমি শেষ! এমন সময় কী যেন ভেবে দিলাম দৌড়। দৌড়ে চলে আসি রাজলক্ষ্মী বাসস্ট্যান্ডে।

তারপর দুদিন ভয়ে বাসা থেকে বের হইনি। এখনো ওদিকে যেতে ভয় পাই।

মিজানুর রহমান

ঢাকা