অতিমানবীয়

>বইয়ের পাতা কিংবা চলচ্চিত্রের রঙিন ভুবনেই কেবল দেখা মেলে এমন অতিমানবীয় ক্ষমতাবান চরিত্রের। তাঁরা কেউ দিনের পর দিন দৌড়ে পাড়ি দেন শত শত মাইল পথ, কেউবা গা বেয়ে অনায়াসে উঠে যান বিশ্বের সুউচ্চ ভবনের ছাদে। চলুন, পরিচিত হওয়া যাক পৃথিবীর এমন পাঁচজন মানুষের বিস্ময়কর কীর্তিকলাপের সঙ্গে। 
উইম হফ
উইম হফ

বরফমানব
শুধু একটা প্যান্ট এবং এক জোড়া জুতা পরে মাউন্ট এভারেস্টে হাঁটতে শুরু করেছিলেন উইম হফ। হেঁটে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার বরফাচ্ছন্ন পর্বতের ডেথ জোন। শুধু কি–তাই, ৬০ বছর বয়সী উইম হফ তুষার ম্যারাথনে অংশ নিয়ে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড, ছুটে বেড়িয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে শীতল অঞ্চলগুলোতে, এভাবে একে একে ভেঙেছেন ২৬টি বিশ্ব রেকর্ড। সে জন্য এই ডাচ অ্যাথলেট পরিচিতি পেয়েছেন বরফমানব হিসেবে। উদোম গায়ে বরফে চলা উইম হফের কাছে যে রীতিমতো ডাল-ভাত ব্যাপার। 

দশটা সুপারহিরোর গল্পের মতো উইম হফও একদম আকস্মিকভাবে নিজের এই বিশেষ ক্ষমতার কথা জানতে পারেন। এক শীতের সকালে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের এক বরফজমা হ্রদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ১৭ বছরের কিশোর উইম হফ। হঠাৎই তাঁর মনে হলো বরফের হ্রদে একটু সাঁতার কেটে নিলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। সাধারণ মানুষের জন্য যা রীতিমতো অসম্ভব, তা-ই সম্ভব করে দেখালেন তিনি। সেই তো শুরু! 

ম্যারিলু হেনার
ম্যারিলু হেনার

নারী প্রফেসর এক্স
এক্স-ম্যান কমিকসের সুপারহিরোদের গুরু প্রফেসর এক্সের আছে যেকোনো বিষয় মনে রাখার এবং অন্যের মন নিয়ন্ত্রণের অসামান্য ক্ষমতা। হলিউড অভিনেত্রী ম্যারিলু হেনার কারও মন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও একদম দিন-তারিখ-সময়সহ মনে রাখতে পারেন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তাই তাঁকে নারী প্রফেসর এক্স ডাকা হয়ে থাকে। 

৬৭ বছর বয়সী ম্যারিলু হেনার মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর এই বিশেষ সক্ষমতার ব্যাপারে জানতে পারেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বিষয়টিকে হাইলি সুপিরিয়র অটোবায়োগ্রাফিক্যাল মেমোরি (এইচএসএএম) বলা হয়। পৃথিবীতে এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক শ জনের কম। 

ভেরোনিকা সেইডার
ভেরোনিকা সেইডার

ভেরোনিকা দেখেন এক মাইল দূরের বস্তু
জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অব থ্রোনসের চরিত্র ব্রেন্ডন স্টার্কের মতো ভেরোনিকা সেইডারেরও আছে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরের বস্তু দেখার ক্ষমতা। ১৯৫১ সালে জন্ম নেওয়া এই জার্মান নারী তাঁর থেকে এক মাইল দূরে থাকা বস্তুও পরিষ্কার দেখতে পান।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় থাকা এই নারীর দৃষ্টিশক্তি যেকোনো সাধারণ মানুষের চেয়ে বিশ গুণ শক্তিশালী। শুধু তা–ই নয়, কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই কোনো বস্তু বা ব্যক্তি তাঁর থেকে কত দূরে, তা–ও বলে দিতে পারেন তিনি। 

ডিন কারনাজেস
ডিন কারনাজেস

সত্যিকারের ফ্ল্যাশ
যুক্তরাষ্ট্রের ডিসি কমিকসের চরিত্র ফ্ল্যাশের কথা হয়তো অনেকেই জানি। মাইলের পর মাইল খুব দ্রুত বেগে টানা দৌড়ানোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে ফ্ল্যাশের। ফ্ল্যাশের মতো বিদ্যুৎ বেগে না হলেও কোনো বিরতি না দিয়ে 

একটানা দিনের পর দিন, মাইলের পর মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬ বছর বয়সী ডিন কারনাজেসের। 

সর্বশেষ তিনি একটানা ৫৬৩ কিলোমিটার (৩৫০ মাইল) দৌড়ে পাড়ি দিয়েছেন মাত্র তিন দিনে। তিনি দৌড়ে বেড়িয়েছেন সমুদ্রতটের চেয়েও গভীর ডেথ ভ্যালিতে, এমনকি বরফ শীতল দক্ষিণ মেরুতেও। 

সাধারণ বিচারে একজন মানুষ যখন দৌড়ায়, তখন শরীর গ্লুকোজ ভেঙে ল্যাকটেট উৎপন্ন করে শক্তি জোগায়। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে দৌড়ালে একপর্যায়ে শরীর দ্রুত ল্যাকটেট উৎপাদন করতে পারে না, যা শরীরে ঝিম ভাব নিয়ে আসে। কিন্তু ডিন কারনাজেস প্রকৃতিগত কারণেই এই সমস্যার ঊর্ধ্বে। তাই তিনি চাইলে আজীবন বিরতিহীনভাবে দৌড়াতে পারবেন।

অলেইন রবার্ট
অলেইন রবার্ট

ফ্রান্সের স্পাইডারম্যান
অলেইন রবার্টকে অনেকে ডাকেন ফরাসি স্পাইডারম্যান বলে। কারণটা সহজেই অনুমেয়। দড়ি বা অন্য কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই সুউচ্চ সব দালান বেয়ে ওঠার সক্ষমতা আছে রবার্টের। এই অসাধ্য সাধনে তাঁর একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে চকের গুঁড়া।

এখন পর্যন্ত রবার্ট একে একে উঠেছেন ১৬০টি উঁচু ভবনে, যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন সংযুক্ত আরব-আমিরাতের বুর্জ খলিফা, তাইওয়ানের তাইপে ১০১ ভবন এবং লন্ডনের লয়েড ভবন।

অবশ্য এই পাগলামি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর। ২০১৮ সালে লন্ডনের ২১২ মিটার উচ্চতার সেলসফোর্স টাওয়ারে ওঠার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ। কিন্তু ফ্রান্সের এই ৫৭ বছর বয়সী স্পাইডারম্যান দমে যাওয়ার পাত্র নন। নিজের প্রতিবেশীদের বাড়ির দেয়াল বেয়ে এখনো অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।