যমজ আখ্যান ও দুই উমবের্তো

উমবের্তোর মতোই যমজদের নিয়ে দুনিয়াজুড়ে গল্পের শেষ নেই!
উমবের্তোর মতোই যমজদের নিয়ে দুনিয়াজুড়ে গল্পের শেষ নেই!

কেউ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই একই চেহারার একজন যমজ আছে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। যমজ হতে হলে একই মায়ের পেটের ভাই বা বোন হতে হবে এমন নয়। একই চেহারার দুই মানুষ হয়তো থাকতে পারেন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন পরিবেশে, এমনকি ভিন্ন সময়ে। আর এ জন্যই যমজদের নিয়ে গল্পের শেষ নেই। 

অনেকেই বলে থাকেন, রুশ জার প্রথম পিটার ও রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট জুলিয়াস সিজার নাকি দেখতে ছিলেন একেবারে একই রকম। আর ব্রিটিশ নাগরিক লিওনার্ড গিবসের কথা বলতে হলে তো লিখতে হবে পাতার পরে পাতা। ভদ্রলোকের চেহারার সঙ্গে অপূর্ব মিল ছিল বিটলসের পল ম্যাকার্টনির। ম্যাকার্টনির অন্ধ ভক্তদের পাল্লায় বারবার পড়তে হয়েছে গিবসকে। জান নিয়ে পালাতে হয়েছে ভক্তদের কাছ থেকে। 

রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাইয়ের সঙ্গে চেহারায় মিল ছিল ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের। অবশ্য এখানে সমস্যা একটু কম। তাঁদের দুজনের মধ্যে ছিল আত্মীয়তার বন্ধন। রক্তের সম্পর্ক ছিল তাঁদের। যখন তাঁরা যুবক, তখন আত্মীয়রাই চিনতে পারত না কে নিকোলাই আর কে জর্জ! তাঁদের বয়সের ব্যবধানও ছিল খুব কম, মাত্র তিন বছর। 

এবার আমরা যে গল্পটি বলব, যমজদের নিয়ে তার চেয়ে বিস্ময়কর কোনো গল্প হয়তো নেই আর। গত শতাব্দীর একেবারে শুরুর বছরের গল্প এটা। ১৯০০ সালের ২৮ জুলাই ইতালির রাজা প্রথম উমবের্তো মিলানের কাছেই মোনজা শহরে গিয়েছিলেন। খিদে পেলে সেখানকার এক রেস্তোরাঁয় গেলেন তিনি পারিষদদের নিয়ে। রাজা এসেছেন রেস্তোরাঁয়, তাই বেয়ারাদের পেছনে ফেলে অর্ডার নিতে এগিয়ে এলেন রেস্তোরাঁর মালিক। আর তখনই তাঁর দিকে চোখ আটকে গেল সবার। আরে! এ যে একেবারে রাজা উমবের্তো! একই লোক বসে আছেন চেয়ারে, একই লোক দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সামনে! একেবারে যমজ দুই ভাই! 

রাজা হকচকিয়ে গেলেন। ভাবলেন, তাঁর সামনে এক আয়নায় তিনি নিজেকেই দেখছেন। সংবিৎ ফিরে আসতেই তিনি রেস্তোরাঁর মালিককে বসতে বললেন সেই টেবিলেই। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কী?’ 

‘আমার নাম উমবের্তো।’

চমকে গেলেন রাজা। এবং এরপর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরে যা শুনলেন, তাতেও বারবার চমকই এল ফিরে ফিরে। 

‘তোমার জন্ম কত সালে?’

‘আমি জন্মেছি ১৮৪৪ সালের ১৪ মার্চ।’ 

রাজা উমবের্তোও সেই একই বছরের একই দিনে জন্মেছিলেন! এরপর জানা গেল দুই উমবের্তোর স্ত্রীদের নামও এক—মারগারিতা। দুজনেরই সংসারে এক ছেলে, নামও এক—ভিত্তোরিও। এরপর দেখা গেল, তাঁরা দুজনই সামরিক বাহিনীতে একই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা যুদ্ধের পদকও পেয়েছেন একই দিনে। যুদ্ধের পর দুজনই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে লেগে পড়েন। ১৮৭৮ সালের ৮ জানুয়ারি এক উমবের্তো হন ইতালির রাজা, অন্য উমবের্তো সেদিনই তাঁর নিজের রেস্তোরাঁ খোলেন মোনজা শহরে।

রাজা উমবের্তো খুবই আনন্দ পেলেন তাঁর ‘যমজ ভাই’য়ের সন্ধান পাওয়ায়। এই সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইলেন না তিনি। রেস্তোরাঁর মালিক উমবের্তোকে পরদিনই অ্যাথলেটিকস দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। রাজা মোনজা শহরে এসেছিলেন ওই প্রতিযোগিতা দেখতেই।

কিন্তু এরপর দুই উমবের্তোর আর দেখা হয়নি। রাজার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেননি রেস্তোরাঁর মালিক উমবের্তো। কেন আসেননি উমবের্তো? রাজা প্রশ্ন করলেন তাঁর পারিষদদের। খোঁজ নিয়ে তারা জানাল, ডাকাতের ছোড়া গুলিতে মারা গেছেন উমবের্তো। 

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজা উমবের্তো বললেন, ‘আমাদের জীবনে সবকিছুই এক রকম ছিল, শুধু মৃত্যু ছাড়া।’ ঠিক সে মুহূর্তেই একটি গুলি এসে লাগে রাজার শরীরে। গায়েতানো ব্রেশি নামের এক নৈরাজ্যবাদীর ছোড়া গুলিতে তখনই মৃত্যু হয় রাজার। 

এই গল্পের বয়স এক শ বছর ছাড়িয়ে গেছে। সত্যিই এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না, নাকি বহু পরে রাজাকে নিয়ে এমন গল্প তৈরি করা হয়েছে, সেটা এখন কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। কিন্তু লোকমুখে প্রচারিত এই গল্প অনেকেই বিশ্বাস করে। নেট ঘাঁটলেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়। এই যেমন, এখন থেকে বাংলা ভাষাতেও থাকবে গল্পটা! 

সূত্র: আই-ফ্যাক্ট ডটআরইউ ও ডিড ইউ নো দ্যাট ডটকম