সকালে ক্লাস, বিকেলে দোকানদারি

>গত মার্চ মাসে বৈকালিক খাবারদাবারের দোকান চালু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আবদুল আলীম। সকালে ক্লাস করেন। বিকেলে খুলে বসেন নিজেদের দোকান। মাস শেষে আয়ের একটা অংশ পাঠিয়ে দেন বাবার কাছে।
আবদুল আলীমের (ডানে) উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তাঁর বন্ধু মনির হোসেন (বাঁয়ে)। ছবি: ছুটির দিনে
আবদুল আলীমের (ডানে) উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তাঁর বন্ধু মনির হোসেন (বাঁয়ে)। ছবি: ছুটির দিনে

সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে বেশ খানিকটা হেলে পড়েছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে মায়াবী সন্ধ্যাকে। পাশের খেলার মাঠে তখনো কেউ খেলছে ফুটবল, কেউবা ক্রিকেট। এদিকে আবদুল আলীম ব্যস্ত মাঠের কোনায় ছোট্ট দুটি টেবিলে খাবার সাজাতে। কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর বন্ধু মনির হোসেন। মিনিট কয়েকের মধ্যে নানা ধরনের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দুজন। শুরু হয় বিক্রি, ভিড় বাড়তে থাকে খাবারসন্ধানীদের। তাঁরা কারও হাতে তুলে দিতে থাকেন ‘ঢাকাইয়া লাচ্ছি’ বা শরবত, কারও হাতে নুডলস, কারও হাতে ছোলা বুটের বাটি। সাজানো থাকে চিকেন ফ্রাইসহ আরও নানা পদের খাবারও। বিক্রেতারা পেশাদার দোকানি নন, দুজনেই কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা সকালে ক্লাস করেন, বিকেল থেকে শুরু করেন বৈকালিক খাবারের অস্থায়ী দোকান।

কাজের ফাঁকেই আলীম কথা বলেন আমাদের সঙ্গে। কথায় কথায় জানালেন তাঁর জীবনের গল্প। সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যান। ক্লাস শেষেই চলে আসেন ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে তাঁর ছোট্ট এই ‘ডিজিটাল শপে’। শুরু হয় ভিন্ন এক কর্মব্যস্ততা। বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ও নানান ধরনের শরবত নিজ হাতে তৈরি করেন। বিকেল থেকে রাত নয়টা অবধি চলে তাঁর ব্যস্ততা। জীবনযুদ্ধে লড়াই করা সৈনিক আলীমের প্রতিদিনের গল্পটা এমনই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই শুরু হয়নি তাঁর এই ক্ষুদ্র ব্যবসা। বাবা খোরশেদ আলী পেশায় একজন কৃষক। পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হতো তাঁকে। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা আলীম প্রথম বর্ষে কুষ্টিয়া শহরে টিউশনি করাতেন। তবে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতে প্রচুর সময় নষ্ট ও শারীরিক পরিশ্রম হতো তাঁর। বিকল্প হিসেবে এ বছর নতুন এই পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। নিজের রান্নার দক্ষতা আর বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করা মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে গত মার্চে শুরু করেন এই দোকান। প্রথম দিকে শুধু নানান ধরনের শরবত বানাতেন, এখন যুক্ত করেছেন হরেক পদের খাবার। কয়েক মাস পর তাঁর কাজে সঙ্গী হিসেবে পান তাঁর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বন্ধু মনির হোসেনকে।

সারা দিন এত ব্যস্ততার মধ্যেও পড়াশোনাতেও এগিয়ে আলীম। তিনি ইংরেজি বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। এখন অবধি বিভাগে প্রথম স্থানটা অটুট রেখেছেন। প্রতিদিন কাজের শেষে নিজ কক্ষে ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগ দেন।

পাশে দাঁড়ানো মনির হোসেন জানালেন, আলীম শুধু রান্নাই পারেন, তা কিন্তু নয়। তাঁর আরও নানা বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে। সেই দক্ষতার ফর্দ বলতে থাকেন তিনি, আলীম অবসরে কবিতা লেখেন। পারদর্শিতা আছে অভিনয়েও। শখের বশে চীনা, কোরীয়সহ সাতটি ভাষা রপ্ত করেছেন আলীম।

ছোট্ট দোকানের আয় থেকে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করেন আলীম। বগুড়ার ছেলে আলীম নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমি কারও অধীন হয়ে চাকরি করতে চাই না। আমি সফল উদ্যোক্তাদের কাতারে পৌঁছাতে চাই। আমার স্বপ্ন বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নিজ এলাকার অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা।’