পেনিসিলিন আবিষ্কার

গবেষণাগারে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
গবেষণাগারে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)

‘১৯২৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে যখন আমার ঘুম ভাঙল, পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের কথা আমার চিন্তাতেও ছিল না। কিন্তু সেটিই করে বসলাম।’

এভাবেই এক চিঠিতে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পেছনের গল্পটা লিখে রেখে গেছেন নোবেলজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)। আজ থেকে ৯১ বছর আগের এই দিনে নিতান্তই দুর্ঘটনাবশত তাঁর ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন।

সেন্ট মেরিস হাসপাতালের জীবাণুবিদ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে যখন স্কটল্যান্ডে নিজের কর্মস্থলে ফেরেন, পুরো ল্যাবরেটরি তখন ধুলোভর্তি অবস্থায়। একটু পরিষ্কার করে কাজ শুরু করতে গিয়ে খেয়াল করলেন, তাঁর পেট্রি ডিশে (ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত একধরনের ছোট গোল স্বচ্ছ পাত্র) রাখা স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াগুলোতে পেনিসিলিয়াম নোটাটাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে।

কৌতূহলী বিজ্ঞানী ফ্লেমিং সংক্রমিত সেই পেট্রি ডিশকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখতেই খেয়াল করলেন, পেনিসিলিয়াম নোটাটাম ছত্রাকটি স্ট্যাফাইলোকক্কির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করছে।

আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে বেশ কিছু পেনিসিলিয়াম ছত্রাক জোগাড় করে পরীক্ষা করে দেখেন, পেনিসিলিয়ামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো শুধু ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই বাধা দেয় না, সংক্রামক অনেক রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।

পেনিসিলিয়াম ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পেছনে অবশ্য বিজ্ঞানী ফ্লেমিংয়ের চেয়ে জার্মান বংশোদ্ভূত ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ আর্নেস্ট চেইনের (১৯০৬-৭৯) কৃতিত্ব বেশি। এই বিজ্ঞানী ১৯৩৮ সাল থেকে চেষ্টা চালাতে থাকেন কীভাবে মানুষের শরীরের উপযোগী একটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যায়। চেষ্টার ফল মেলে ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা অ্যান মিলারের ওপর সফলভাবে পেনিসিলিন প্রয়োগ করা হয়। বেঁচে যান অ্যান মিলার। আর্নেস্ট চেইনের মতোই অস্ট্রেলীয় জীববিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরিও (১৮৯৮-১৯৬৮) পেনিসিলিনের অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। অবদান রেখেছেন বলেই তো ১৯৫৫ সালে এই তিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

হিস্ট্রি ডট কম এবং পিবিএস অবলম্বনে আকিব মো. সাতিল