হাই হিল: যুদ্ধের ময়দান থেকে ফ্যাশনজগতে

হাই হিল: নারী ফ্যাশন জগতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুষঙ্গ। ছবি: সংগৃহীত
হাই হিল: নারী ফ্যাশন জগতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুষঙ্গ। ছবি: সংগৃহীত

নারীদের ফ্যাশনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হাই হিল। প্রতিদিনের ব্যবহারের পাশাপাশি নারীদের ফ্যাশন হিসেবে উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে হাই হিল ব্যবহারের প্রবণতা চলে আসছে। অন্তত ফ্যাশন জগতের ইতিহাস দেখলে সেটাই মনে হয় এবং এর প্রত্যক্ষ কিছু প্রমাণও রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্যাশন জগতের ডাকসাইটে সুন্দরীদের হাই হিল ব্যবহার করতে দেখা যায়। শুধু ফ্যাশন জগৎই নয়, প্রতিদিনের ব্যবহারেও হাই হিলের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে নারীদের জীবনে।

‘গিভ আ গার্ল দ্য রাইট পেয়ার অব শুজ অ্যান্ড সি উইল কনকয়ার দ্য ওয়ার্ল্ড’—বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো তাঁর খ্যাতির চূড়ান্ত সময়ে এ কথাই বলেছিলেন। মনে করা হয়, সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে মনরোর এই ‘দ্য রাইট পেয়ার অব শুজ’ হলো হাই হিল। যুদ্ধের ময়দানে বীরত্ব-রক্ত-মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাই হিলের যাত্রা শুরু হলেও এটি পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয়তা পায় মূলত ফ্যাশনের রঙিন ভুবনে এসে।

হাই হিল প্রেমিক ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই। লাল রঙের হাই হিল ব্যবহার করতেন তিনি। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস
হাই হিল প্রেমিক ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই। লাল রঙের হাই হিল ব্যবহার করতেন তিনি। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

গল্পের শুরু এবং ইউরোপের পথে হাই হিল
ধারণা করা হয়, হাই হিল প্রচলনের গল্প দশম শতকের। মূলত হাই হিল যুক্ত জুতা ব্যবহার করত পুরুষ সৈনিকেরা। নারীরা সেটা ব্যবহার শুরু করে অনেক পরে। এর ইতিহাস প্রাচীন পারস্যের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করেন গবেষকেরা। প্রাচীন পারস্যের ঘোড়সওয়ার তিরন্দাজ সৈনিকেরা উঁচু হিল যুক্ত জুতা পরত ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ করার সুবিধার জন্য। এতে চলন্ত অবস্থায় ঘোড়ার পিঠ থেকে তির ছোড়ার সুবিধা পাওয়া যায়। পদাতিক বা অন্যান্য বাহিনীর সৈন্যরা এ ধরনের জুতার ব্যবহার করত না। পরবর্তীকালে বারো শতকে হাই হিলের মতো জুতা দেখা যায় ভারতের রামাপ্পা মন্দিরের গায়ে নির্মাণ করা মূর্তিতে। ফলে ধারণা করা যায়, শুধু পারস্যেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই হাই হিলের মতো জুতার অস্তিত্ব ছিল। মধ্যযুগে ইউরোপের নারী ও পুরুষ উভয়ে প্ল্যাটফর্ম শু ব্যবহার করত মূলত রাস্তার ময়লা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য।

সতেরো শতকের গোড়ায় পারস্যের পঞ্চম সাফাবিদ রাজা শাহ আব্বাস দ্য গ্রেট ইউরোপে তাঁর দূতাবাস খোলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার সুবিধার জন্য। ইউরোপ ও পার্সিয়ানদের রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়তে থাকলে পারসিয়ান ঘোড়সওয়ার তিরন্দাজদের হাই হিল ইউরোপে চলে যায়। অভিজাত শ্রেণির মানুষদের মধ্যে, মূলত যাদের মাঠঘাটে কাজ করতে হতো না, হাই হিল ব্যবহারের হিড়িক পড়ে যায়। ব্যাপারটা এ রকম ছিল যে যার জুতার হিল যত উঁচু, তিনি তত অভিজাত! উল্লেখ করা প্রয়োজন, চপিনস নামে যে প্ল্যাটফর্ম জুতা ছিল, তার সোলের উচ্চতা ছিল ৩০ ইঞ্চি। পরবর্তীকালে ইতালির ভেনেটিয়ান আইনে বলা হয়, জুতার উচ্চতা তিন ইঞ্চির বেশি হওয়া চলবে না। ইউরোপে একপর্যায়ে ব্যাপারটা এ রকম দাঁড়াল যে সামাজিক পদমর্যাদার ক্রম অনুসারে জুতার হিল কতখানি উঁচু হবে, তা নির্ধারণ করে দিতে হলো। এ সময় ক্লাউস কার্ল নামে একজন লেখক ‘শুজ’ নামে একখানি বই লিখলেন, তাতে সমাজের কোন পদমর্যাদার মানুষের কত ইঞ্চি উঁচু জুতার হিল থাকবে, তা নির্দিষ্ট হলো। এই বইয়ে বলা হলো, সাধারণ মানুষের জুতার হিল হবে আধা ইঞ্চি উঁচু, মধ্যবিত্তদের এক ইঞ্চি, নাইটের দেড় ইঞ্চি, সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য দুই ইঞ্চি এবং যুবরাজের জন্য আড়াই ইঞ্চি উঁচু। অভিজাত সম্প্রদায়ের দেখাদেখি এ ফ্যাশন তখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে গেছে। আর সেকালে যেহেতু নারী ও পুরুষ একই ধরনের জিনিসপত্র ব্যবহার করত, ফ্যাশনের জন্য তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও হাই হিল যুক্ত জুতা ব্যবহার করতে শুরু করেন। শুধু তা–ই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি এ ধরনের জুতা শিশুরাও ব্যবহার করতে শুরু করে।

উনিশ শতকের শুরুর দিকে আঁকা ইউরোপিয়ান ছবিতে হাই হিল পরিহিত নারী। ছবি: সংগৃহীত
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আঁকা ইউরোপিয়ান ছবিতে হাই হিল পরিহিত নারী। ছবি: সংগৃহীত

হাই হিল প্রেমিক এক সম্রাটের গল্প
ইমেলদা মার্কোসের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ফিলিপাইনের এই সাবেক ফার্স্ট লেডি প্রায় এক হাজার জোড়া জুতা সংগ্রহে রাখার জন্য তাঁর রাষ্ট্রপতি স্বামী ফার্দিনান্দ মার্কোসের চেয়েও আলোচিত হয়েছিলেন পৃথিবীতে। ইমেলদার এই জুতার বহরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হাই হিল ছিল বলে শোনা যায়। ইমেলদা নারী, তাঁর হাই হিল থাকতেই পারে। কিন্তু যদি আপনি শোনেন যে একজন পুরুষ সম্রাট হাই হিল যুক্ত জুতা ব্যবহার করতেন, এবং এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা কোনো অংশে মনরো, ইমেলদা কিংবা নায়িকা পরীমনির চেয়ে কম নয়, তাহলে খানিক অবাক হবেন নিশ্চয়ই। এই হাই হিলপ্রেমী সম্রাটের নাম চতুর্দশ লুই (৫ সেপ্টেম্বর ১৬৩৮-১ সেপ্টেম্বর ১৭১৫)। তিনি জাতে ফরাসি।

চতুর্দশ লুই সেই সম্রাট, যিনি পাঁচ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করে একটানা ৭২ বছর ১১০ দিন ফ্রান্সের শাসক ছিলেন এবং এটিই এখন পর্যন্ত কোনো সম্রাটের একটানা শাসনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড। দীর্ঘ সময় শাসনের রেকর্ড থাকলেও সম্রাট চতুর্দশ লুই বর্তমানের বাঙালি জাতির গড় উচ্চতার চেয়ে খাটো ছিলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। ফ্রান্সের মতো একটি দেশের সম্রাটের জন্য এ উচ্চতা নিতান্তই লজ্জাজনক। তাই তিনি তাঁর মোট উচ্চতাকে আরও চার ইঞ্চি বাড়িয়ে নিতেন—চার ইঞ্চি উচ্চতার হিলওয়ালা জুতা পরে। তাঁর জুতার হিল এবং সোলের রং ছিল লাল আর জুতার ওপরের অংশের রং ধাতব। শুধু তা–ই নয়। সম্রাট চতুর্দশ লুই এক ফরমান জারি করেছিলেন ১৬৭০–এর দশকে। এই ফরমানে বলা হয়েছিল, শুধু তাঁর দরবারের উজির-নাজির বাদে ফ্রান্সের আর কেউ লাল রঙের হিলওয়ালা জুতা ব্যবহার করতে পারবে না।

সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের এই ফ্যাশনের কথা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপে ফরাসিদের কদর ছিল বরাবরই বেশি, অন্যান্য দেশের চেয়ে। এ কারণে ফরাসিদের ফ্যাশনও ছিল প্রভাবশালী। ইংল্যান্ডে পৌঁছে গেল ফরাসি সম্রাটের হাই হিল প্রীতির কথা। ১৬৬১ সালে ব্রিটেনের চার্লস ২–এর রাজ্যাভিষেকের যে প্রতিকৃতি অঙ্কন করা হয়, তাতেও চার্লস ২-কে লাল রঙের বড়সড় ফরাসি স্টাইলের হাই হিল পরে থাকতে দেখা যায়। ইউরোপের অভিজাত সম্প্রদায়ের এই হিলপ্রীতির সূচনা সতেরো শতকের গোড়ায়।

উনিশ ও বিশ শতকের হাই হিলের নমুনা। ছবি: টি. ওয়াটসন গ্রেইগ এর লেখা ‘লেডিজ ড্রেসেস সুজ অব দ্য নাইনটিন সেঞ্চুরি’–এর অলংকরণ অবলম্বনে আরাফাত করিম।
উনিশ ও বিশ শতকের হাই হিলের নমুনা। ছবি: টি. ওয়াটসন গ্রেইগ এর লেখা ‘লেডিজ ড্রেসেস সুজ অব দ্য নাইনটিন সেঞ্চুরি’–এর অলংকরণ অবলম্বনে আরাফাত করিম।

এবং পরিবর্তন-পরিবর্ধনের পর্ব
ষোলো-সতেরো শতকে নারী ও পুরুষের ফ্যাশন অনুষঙ্গে লিঙ্গগত পার্থক্য ছিল না তেমন। পোশাক, অলংকারসহ প্রায় একই রকম ফ্যাশন অনুষঙ্গ ব্যবহার করত তারা। বিভিন্ন গবেষণায় ও লেখাপত্রে আঠারো শতক পর্যন্ত ফ্যাশন অনুষঙ্গকে ‘ইউনিসেক্স’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় নারী-পুরুষ উভয়ে ধূমপান করতেন বিশেষ ধরনের পাইপে, তাঁদের জামার শোল্ডারে লাগানো থাকত আর্মি ব্যাচ ইত্যাদি উদাহরণের কথা প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ করা যায়। জুতার ক্ষেত্রেও তাই ছিল। তবে নারীদের জুতার হিল ছিল পুরুষদের জুতার হিলের চেয়ে কিছুটা সরু (তবে এখনকার মতো পেনসিল নয়) আর পুরুষদের ছিল মোটা হিল। জুতার হিলের এই চিরাচরিত আকৃতিগত ধারণার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে সতেরো শতকে। এ সময় পুরুষেরা চৌকো, মজবুত ও অনুচ্চ এবং নারীরা সরু, লম্বা ও বাঁকযুক্ত হিল ব্যবহার শুরু করে। এখানে উল্লেখ করা উচিত, সতেরো শতকে ইউরোপে এনলাইটেনমেন্টের ধারণা প্রবর্তিত হয়। এর ফলে শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-কৃৎকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। ফ্যাশনও তার বাইরে ছিল না। এ সময় অলংকারের ব্যবহার, কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক উজ্জ্বল রঙের ধোপদুরস্ত পোশাকসহ অযাচিত ফ্যাশন অনুষঙ্গ ত্যাগ করা শুরু করে পুরুষেরা। এ সময় নারী ও পুরুষ উভয়ের ফ্যাশন পরিশীলিত ও মার্জিত রূপ ধারণ করে। ধারণা করা হয়, ১৭৪০ সালের দিকে পুরুষেরা পুরোপুরি হাই হিল যুক্ত জুতার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। কারণ, পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক অবস্থার উত্থানপতনের জন্য এ সময় নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাইকে আগের চেয়ে বেশি সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হয় কাজের জন্য। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে হাই হিল নারীদের পা থেকেও উধাও হয়ে যায় মূলত বাড়ির বাইরে কাজে যাওয়ার প্রয়োজনের জন্য। এরপর প্রায় পঞ্চাশ বছর হাই হিল মানুষের চোখের আড়ালে চলে যায়। এ সময় তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের বুট—বিশেষ করে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢাকা বুট। এই বুটগুলোর বেশির ভাগই ছিল নিচু হিলের।

উনিশ শতকের একটা উল্লেখযোগ্য সময় হাই হিলের পরিবর্তে রাজত্ব করেছে বুট জুতা। বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশনেবল বুট তৈরি হতে থাকে সে সময়। এসব বুটের হিল ছোট থেকে বড় হতে থাকে। এ সময় জুতা কোম্পানিগুলো নতুন ডিজাইনের দিকে নজর দেয়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপের নারী ফ্যাশনে হাই হিল আবার ফিরে আসে ব্যাপকভাবে। ১৮৬০–এর দশকে আড়াই ইঞ্চি হিলের প্রচলন হয়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ফটোগ্রাফির বিস্তার এবং উনিশ শতকের মধ্যভাগে চলচ্চিত্রের বিকাশ এই দুই ঘটনা হাই হিলকে পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয় করতে সহায়তা করে—বিশেষ করে উনিশ শতকের শেষের দিকে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, নারীদের ছবিসহ পণ্য বিক্রির জন্য তত দিনে পোস্টারের প্রচলন হয়ে গেছে। সেগুলো ছিল হাতে আঁকা। ফটোগ্রাফি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে পোস্টার তৈরির ধারাও শুরু হয়েছে। অন্যদিকে পর্নোগ্রাফাররা ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্রের মতো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ছিল অগ্রণী। তারা পোস্টকার্ডের জন্য নগ্ন নারীদের ছবি তুলতে শুরু করে এ সময়। ছবি তোলার সময় এই সব ফটোগ্রাফার ধ্রুপদি যুগের চিত্রশিল্প অথবা ভাস্কর্যের নগ্ন নারীদের ভঙ্গি অনুসরণ করে তাদের নারী মডেলদের ছবি তুলতে থাকেন। মডেলদের ভঙ্গিতে ধ্রুপদি ছোঁয়া থাকলেও সমকালীন এবং আরও আবেদনময়ী করার জন্য তাদের পড়ানো হতো আধুনিক হাই হিল। উনিশ শতকের শেষের দিকের ‘পিন-আপ’ ফটোগ্রাফিতে এর প্রচুর প্রমাণ পাওয়া যায়। এ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে পর্নো চলচ্চিত্রনির্মাতাদের মধ্যেও। তারাও একইভাবে হাই হিল পরা নারীদের ব্যবহার করতে শুরু করে। হাই হিল পরা এসব নগ্ন, অর্ধনগ্ন নারীদের ছবি এবং চলচ্চিত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে পৃথিবীজুড়ে। এরপর থেকেই মূলত ফ্যাশন জগতে হাই হিল তার আধিপত্য বিস্তার করে এবং নারীদের ফ্যাশন আইকনে পরিণত হয়।

পিন-আপ মডেল বেটি গ্রেবল, ১৯৪৪। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস
পিন-আপ মডেল বেটি গ্রেবল, ১৯৪৪। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

মনে করা অসংগত নয় যে দুটি প্রবণতা হাই হিলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। প্রথমটি হলো, বিভিন্ন মাধ্যমে, বিশেষত চিত্রশিল্প, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রশিল্পে ‘আরও বেশি’ আকর্ষণীয় করে নারীদের উপস্থাপন করা। দ্বিতীয়টি হলো, নারী ফ্যাশন আইকনরাও মনে করেন, হাই হিল তাঁদের ‘আরও বেশি’ আকর্ষণীয় করে তোলে। এই সাধারণ প্রবণতাটির জন্যই হয়তো মেরিলিন মনরো থেকে শুরু করে আমাদের নায়িকা পরীমনির পছন্দের তালিকায় হাই হিল জায়গা করে নিয়েছে।

‘হাইটস অব ফ্যাশন: আ হিস্টরি অব দ্য এলিভেটেড শু’ বইয়ের লেখিকা এলিজাবেথ সেমেলহ্যাক মনে করেন, উনিশ শতকের শেষের দিকে ফিরে আসা এই হাই হিল নারীদের জন্য ‘ইরোটিক ফুটওয়্যার’। শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে আমরা যতই আলোচনা করি না কেন, ফ্যাশন জগৎ তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলেছে এর পেছনে লগ্নি করা অর্থের জন্য। কাজেই নারী নাকি পুরুষ—কে আসলে পণ্য, সে নিয়ে এই জগতের বাসিন্দাদের মাথা ঘামানোর সময় নেই। ‘হাই হিল ব্যবহার স্বাস্থ্যসম্মত নয়’ বলে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রচারণা। কিন্তু তাতেও ভাটা পড়েনি নারীদের ফ্যাশন জগতের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুষঙ্গটির—ভাটা পড়ার সম্ভাবনাও আপাতত নেই।

সূত্র:
১. ‘হোয়াই ডিড মেন স্টপ অয়্যারিং হাই হিলস?’, উইলিয়াম ক্রেমার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৩, বিবিসি অনলাইন।
২. ‘ফ্রম ম্যানলি টু সেক্সি: হিস্টরি অব দ্য হাই হিল’, ড. লিসা ওয়েড, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, দ্য সোসাইটি পেজেস।
৩. বিভিন্ন ওয়েবসাইট।