কেউটের মুখোমুখি

>
আরাফাত শাহীন
আরাফাত শাহীন
জীবনের অনেক ঘটনাই রোমাঞ্চকর উপন্যাসকেও হার মানায়। আবার জীবনযাপনের কিছু ঘটনা ছুঁয়ে যায় হৃদয়, স্মৃতিতে গেঁথে থাকে আজীবন। বাস্তবের রুদ্ধশ্বাস কাহিনি ও জীবন যেমন বিভাগে ছুটির দিনে প্রতি সপ্তাহেই পাঠকের এ ধরনের লেখা তুলে ধরে। ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছুটির দিনের এ দুটি বিভাগে পাঠকের বিশেষ লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে প্রচুর লেখা পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। সেসব থেকে বাছাই করা লেখা নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ছুটির দিনে।

২০১২ সালের ঘটনা। আমি তখন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ি। ছোটবেলা থেকেই দুরন্তপনায় আমার জুড়ি মেলা ভার। রাস্তা দিয়ে চলার সময় লাফিয়ে লাফিয়ে চলতাম, চলার পথে পায়ের কাছে কিছু পড়লে ফুটবলের মতো লাথি কষিয়ে দূরে সরিয়ে দিতাম। মা অনেকবার এভাবে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

তখন সন্ধ্যাবেলা। আকাশে কালো মেঘ জমে একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি সন্ধ্যার আঁধার যেন আরও ঘনীভূত করে তুলেছে। আমি মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফিরছিলাম। মূল রাস্তা থেকে আমাদের বাড়ির রাস্তায় অন্ধকারের মাত্রা যেন আরও খানিকটা বেশি। সারিবদ্ধ আমগাছ থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে। হঠাৎ আমার মনে হলো, রাস্তার ওপর একটা শুকনো ডাল পড়ে রয়েছে। অভ্যাসমতো ডালটাকে ‘কিক’ মেরে সরিয়ে দিতে চাইলাম দূরে। কিন্তু যখন সেটার গায়ে আমার পা গিয়ে লাগল, আমি স্পষ্টত অনুভব করলাম ঠান্ডা কিছুতে লাথি মেরেছি। আমার লাথি খেয়ে চার-পাঁচ হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েছে। পরে দেখলাম সেটা ছিল একটা সাপ। বুকের ভেতর দিয়ে সাপের শরীরের মতো একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। আমি এক দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।

আমাকে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে ঢুকতে দেখে আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে। আমি সংক্ষেপে পুরো ঘটনা বর্ণনা করার পর আব্বা হেসে বললেন, ‘ঢোঁড়া সাপ হবে হয়তো। এই সাপটি কামড়ালে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, এদের শরীরে বিষ নেই।’ আমি আশ্বস্ত হয়ে পড়তে বসলাম।

আব্বা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বের হয়েই আমাকে জোরে ডাক দিয়ে বললেন, একটা লাঠি নিয়ে আয়। আমি বেশ বড়সড় একটা লাঠি নিয়ে দৌড়ে গেলাম। আব্বার কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তিনি একটা জায়গায় টর্চলাইটের আলো স্থিরভাবে ধরে রেখেছেন। আমি সেই জায়গাটিতে তাকিয়ে দেখলাম একটা সাপ আলোর বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করছে; কিন্তু পারছে না। সন্ধ্যার সাপের কথা মনে হতে আমার শরীর আবার ভয়ে জমে যেতে চাইল। আমার কেন যেন মনে হলো এটি সেই সাপই। সাপটা একবার ফণা তুলে স্থির হয়ে রইল। একদম পরিপূর্ণ কেউটে সাপ। কয়েক দিন হলো খোসা ছাড়িয়েছে। আমাদের বাড়ির আশপাশে অনেক সাপ থাকলেও এত বড় সাপ অনেক দিন ধরেই দেখা যায় না। আমি ভয়ে ভয়ে আব্বাকে বললাম, ‘সন্ধ্যায় যে সাপটিকে লাথি মেরেছিলাম সেটি নয়তো?’ আব্বা আমার মুখের দিকে শঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বললেন, হতেও পারে।

শিক্ষার্থী, মাগুরা।