নিজাম বাউলের দোতারা

বাউল নিজাম উদ্দীন
বাউল নিজাম উদ্দীন

দোতারা হাতে পল্লিগীতির সুর তুলেছিলেন তিনি। সেই সুরে চকিত থামলেন পথচলতি মানুষ, মনোযোগ হারালেন পাশেই সান্ধ্য আড্ডায় জড়ো হওয়া অনেকে। একসময় দোতারার বাজনা থামলে গায়ককে জিজ্ঞেস করেছিলাম পরিচয়।

 ‘আমি নিজাম বাউল।’

নিজের সম্পর্কে এটুকু বলেই আবারও দোতারায় আঙুল ছোঁয়ালেন—টুংটাং। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার আগ্রহ দেখে নিজেই জানালেন, নাম নিজাম উদ্দীন। বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। কৃষিকাজ করেন। মাঠে যখন কাজ থাকে না, প্রিয় দোতারাটি সঙ্গী করে তখন চলে আসেন ঢাকায়।

কর্মহীন বলেই এলাকা ছেড়ে এখন এসেছেন ঢাকায়। সেদিনের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে তাঁর দেখা মেলে প্রায় সন্ধ্যায়। কখনো থাকেন হয়তো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রেও। যেখানেই বসেন না কেন, দরদমাখা কণ্ঠে ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি গাইতে থাকেন। গান শুনে খুশি হয়ে অনেকেই টাকা দেন। এতেই দিন চলে নিজাম বাউলের।

নিজাম বাউল বলছিলেন, এই সময়টাতে জমিতে তেমন কাজ থাকে না। রোজগারও বন্ধ থাকে। তাই মানুষকে গান শোনাতে রাজধানীতে ছুটে আসেন।

গাইবান্ধা জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় জন্ম নিজাম বাউলের। ১০ বছর বয়সে ওস্তাদ ফখরুল ইসলামের হাতে দোতারার তালিম নেন। তাঁর কাছেই শেখেন ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি আর দরবারি গান। বছরখানেক গান শেখার পরই গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে ওস্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন নিজাম। ওস্তাদের বাড়ির বিভিন্ন ফুটফরমাশ খাটার বিনিময়ে গান শিখলেও পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর।

শুনে শুনে গান মুখস্থ করতেন। কখনো সহযোগিতা নিতেন ওস্তাদ আর বন্ধুদের। তিনি বলছিলেন, ‘আমার দাদা গেন্দু শেখ জারি-সারিগান করতেন। ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তাঁর গান শুনতাম। তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন ছিল যে বড় হয়ে শিল্পী হব।’

বড় শিল্পী হতে পারেননি নিজাম। তবে স্বপ্নটা এখনো লালন করেন। লালন করেন বলেই ঢাকায় ছুটে আসেন। ঢাকায় যখন থাকেন, তখন পুরোটা সময়ই তিনি নিজের মতো করে গান নিয়ে থাকেন। তাঁর পছন্দের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল আলীম ও বারী সিদ্দিকী। নিজের লেখা ও সুর করা গানও রয়েছে দুটি। একটি গান লিখেছেন তিনি নিজেকে নিয়ে আর অপর গানটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে।

ঢাকার দিনগুলোতে সকালে রমনা পার্কে আর সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। রাত কাটে বঙ্গবন্ধু হলের সামনের এক দোকানের বারান্দায়। এখানে থাকতে কোনো অর্থ লাগে না বলে কিছুটা টাকা সঞ্চয় হয়। খাওয়া খরচ বাদে বাকি টাকাটা পাঠিয়ে দেন গ্রামে, পরিবারের ঠিকানায়।

ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও এখনো স্বপ্নের পেছনে ছুটছেন তিনি। গানের মাধ্যমেই দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান নিজাম বাউল।