নীল পারুলের দেখা

ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর কংক্রিটের ভিড়ে একটি লতানো গাছভর্তি বেগুনি বা নীল রঙের ফুল দেখে থমকে যেতে হয়। দালান বেয়ে বেয়ে সেই লতা উঠে গেছে ওপরে। গ্রিন রোডের একটি বাসায় দুই বছর ধরে এই লতায় ফোটে নীল ফুল। শীত আসার আগে আগে হেমন্তের এই শেষ সময়টায় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় পুরো গাছ। নীলচে বেগুনি ফুল আর কলিতে চোখ জুড়িয়ে যায়।
এই ফুলের ছবি তুলে প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক মোকারম হোসেনকে দেখালে তিনি জানান, এটির নাম ‘রসুন্দি’ বা নীল লতা পারুল। হেমন্ত এলেই এই লতাজাতীয় উদ্ভিদ যেন ভরা যৌবন পায়। ফুলের আড়ালে ঢাকা পড়ে লতাপাতা। পাতা থেকে রসুনের গন্ধ পাওয়া যায় বলে ইংরেজি নাম ‘গার্লিক ভাইন’। কেউ কেউ আবার লতা পারুল নামেও ডাকে। তিনি জানান, গাছ লতানো, চিরসবুজ, শক্ত, দীর্ঘ ও ঝোপালো। যৌগপত্র দুই বা তিন পক্ষল, পত্রিকা ভল্লাকার বা আয়তাকার, মসৃণ, চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা।

ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে। ছবি: প্রথম আলো

শীর্ষ পাতাটিই মূলত আকর্ষীতে রূপান্তরিত হয়। হেমন্ত ছাড়া বছরে আরও দু-একবার ফুল ফোটে। ফুলের অগ্রভাগ ঈষৎ বেগুনি, নলাকার অংশটি ক্রিম-সাদা। দল ফানেলের মতো, মুখ চার সেন্টিমিটার চওড়া, তাতে পাঁচটি মুক্ত পাপড়ি আছে, সেগুলো গোলাকার ও ছড়ানো। বংশবৃদ্ধি কলম ও শেকড় থেকে গজানো চারায়। এরা ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। আমাদের মৌসুমি ফুলের বাগান প্রস্তুত করে নেওয়ার কাজ যখন শুরু হয়, তখন নীল পারুলও নিজেকে নতুনভাবে সাজিয়ে নিতে শুরু করে। প্রায় নিষ্প্রাণ গাছে নতুন করে সঞ্চারিত হয় প্রাণ। কাঁচা সবুজ পাতায় ভরে ওঠে গাছ। হেমন্তের প্রায় পুষ্পহীন প্রকৃতিতে ওরাই যেন একমাত্র সম্রাজ্ঞী।

ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
ফুটেছে নীল লতা পারুল। গত সোমবার গ্রিন রোডে। ছবি: প্রথম আলো

গ্রিন রোডের এই ফুলগাছ লাগিয়েছেন সায়কা রিজওয়ানা। তিনি জানান, চার বছর আগে তাঁর ছয়তলা বাড়ির সামনের অংশে এটি লাগিয়েছেন। অল্প যত্নেই গাছ তরতর করে ওপরে উঠে গেছে। দুই বছর ধরে এই ফুল ফুটছে। এবার ফুটেছে গতবারের থেকে বেশি। এই ফুলে এসে মধু খাচ্ছে মৌটুসি পাখি ও মৌমাছিরা। তিনি জানান, রমনা ও
ঢাকা ক্লাবের প্রাচীরসংলগ্ন এলাকা থেকে ডাল নিয়ে এসে এই গাছের চারা করেছেন। তাঁর ছাদের টবেও একটি গাছ আছে। সেখানেও এই ফুল ফুটেছে, তবে কম। এই ফুল আরও দুই সপ্তাহ দেখা যাবে। এরপর ফুল ফ্যাকাশে হয়ে ঝরে যাবে। গত বছর তাঁর এই গাছে তিনবার ফুল ফুটেছে। হেমন্ত ছাড়াও
বর্ষায় দুবার ফুটেছে। একটু বৃষ্টি পেলেই এই গাছ ফুল দেয়।
রাজধানীর রমনা উদ্যান, বলধা গার্ডেন, শিশু একাডেমি, মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানসহ অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহেও নীল পারুল দেখা যায়। কেউ কেউ শখ করে বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে লাগিয়ে রেখেছেন। বিশেষত ঢাকার পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার মধ্যে উত্তরা, বনানী ও ধানমন্ডিতে সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য।