ভিতু কবি

অলংকরণ : মাসুক হেলাল
অলংকরণ : মাসুক হেলাল

আমি কবিতা লিখতাম। নিলা ছিল আমার কবিতার প্রেরণা। সেই নিলাকে দীর্ঘ ১২ বছর পর খুঁজে পেয়েছি। খুঁজে পাওয়ার এ কৃতিত্ব পুরাটাই ফেসবুকের। তাকে শেষ দেখেছিলাম যখন, তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। হলুদ শাড়িতে তাকে বেশ লাগত। হলুদ শাড়ির কথা বলছি কারণ, তাকে শেষ যখন দেখেছিলাম; তখন তার পরনে ছিল হলুদ শাড়ি। সেই থেকে আমার প্রিয় রং হয়ে গিয়েছিল হলুদ। আবার আমার বেদনার রংও নীল থেকে হলুদ হয়ে গিয়েছিল! তার গায়েহলুদের রাতে আমি তাকে দূর থেকে এক পলক দেখে চলে এসেছিলাম। আমি জানতাম এ দেখা ছিল আমার শেষ দেখা।

তার চেহারার মায়াবী রাজ্যে দুনিয়ার সব মায়া বাস করত। সেই রাজ্যে আমি বারবার হারিয়ে যেতাম। কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলা হয়নি। শুধুই তাকে নিয়ে কবিতা লিখতাম। তার সামনে গেলে ভয়ে কাতর হয়ে যেতাম। অনেকবার তাকে কবিতা শোনাতে গিয়েও শোনানো হয়নি। কবিতার খাতা হাতে নির্বাক ফিরে এসেছি। সে শুধু আমার হাতের খাতার দিকে চেয়ে থাকত। সেই কবিতার খাতা তার বিয়েতে উপহার পাঠিয়েছিলাম। যার মাধ্যমে পাঠিয়েছিলাম, তাকে বলেছিলাম খাতাটি সরাসরি নিলার হাতে দিতে। জানি না কবিতাগুলো পেয়ে সে কী ভেবেছিল!

আজ এত দিন পর আচমকা ফেসবুকে নিলার দেখা পেলাম। ১২ বছর পরও নিলার চেহারায় একই মায়া। তার আইডিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। আনমনেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। আরও পরে একটা মেসেজও। মেসেজে লিখলাম, ‘চিনতে পারা যায় কি না দেখবেন?’ কিছুক্ষণ পর আমাকে অবাক করে দিয়ে উত্তর দিল, ‘চিনতে পেরেছি। আপনি একজন ভিতু কবি।’ তার উত্তর দেখে আমি নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম।

জানতে চাইলাম, ‘আমাকে ভিতু কবি কেন বললে?’

 ‘বিয়ের আগে যে কবিতা শোনাতে পারে না, কিন্তু বিয়েতে কবিতার খাতা উপহার পাঠায়, তাকে ভিতু কবি না বলে কী বলব?’

তার রিপ্লাই দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। আর মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলাম, ‘আসলেই আমি একজন ভিতু কবি!’

ছাগলনাইয়া, ফেনী।