কারুশিল্পী চন্দন

চন্দন বড়ুয়া। ছবি: ছুটির দিনে
চন্দন বড়ুয়া। ছবি: ছুটির দিনে

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি। সঙ্গী শুধু কাঠ, হাতুড়ি আর বাটালি। এগুলো দিয়েই কাঠের ওপর ফুটিয়ে তোলেন মানুষ, জীবজন্তুসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি। কাঠের আকার অনুযায়ী সময় নেন দুই থেকে তিন দিন। আর ভাস্কর্য হলে পাঁচ থেকে সাত দিন। কাঠের প্রতিকৃতি খোদাই ও ভাস্কর্যশিল্পী খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পশ্চিম কাঁঠালতলিপাড়ার চন্দন বড়ুয়া। কাঠের ওপর প্রতিকৃতি খোদাইয়ের নৈপুণ্য দেখে যে-কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। স্থানীয় লোকজন চাহিদামতো ফরমাশ করলে তবে কাজ করেন কারুশিল্পী চন্দন বড়ুয়া।

চন্দন বড়ুয়ার বাড়িতে গিয়েছিলাম আচমকা। বাড়ির উঠানেই তাঁর দেখা পাওয়া গেল। প্লাস্টিকের পাটি বিছিয়ে কাঠের ওপর ছবি খোদাই করছেন। কাদের ছবি কাঠখোদাই করছেন? চন্দন জানালেন, বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার উপসংরাজ ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দিরের অধ্যক্ষ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, থাইল্যান্ডের ধম্মাকায়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মহিপাল স্থবিরসহ বিভিন্নজনের ছবি। এ ধরনের আরও কয়েকটি ছবির ফরমাশ পেয়েছেন। সব বাড়ির উঠানে বসে খোদাই করছেন। কাঠের গুঁড়িতে সাতটি হাতির পালের খোদাই করা ভাস্কর্য, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য, একক হাতির ভাস্কর্য, হরিণের ভাস্কর্য ও কাঠে খোদাই করা বিভিন্ন ছবি।

কাঠে ছবি খোদাই করতে করতে চন্দন বড়ুয়া জানালেন, অভাবের সংসারের কারণে ১৯৯৮ সালে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কদলপুর ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। তখন আশ্রমের ফাদার লুই নামের এক ব্যক্তি তাঁকে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শিখতে অনুপ্রেরণা দেন। ফাদার লুইয়ের আর্থিক সাহায্যে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা নজু মিয়া লেনের রাধু বড়ুয়ার কাছে দুই বছর কাজ শেখেন। তিন বছরের প্রশিক্ষণের চুক্তির মধ্যে দুই বছরই কাজ রপ্ত করে ফেলেন চন্দন। এরপর চলে আসেন দীঘিনালায়। বাজারে কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন ভাস্কর্য তৈরির কাজ। একেকটি ভাস্কর্য, ছবি আকারভেদে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় পর্যন্ত খোদাই করেন। কাঠে ছবি খোদাই করতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময়, ভাস্কর্য তৈরি করতে সাত থেকে দশ দিন সময় লাগে।

চন্দন বড়ুয়া বলছিলেন, ‘কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি কাঠে ছবি খোদাই ও ভাস্কর্য তৈরি করে আমার সংসার ভালোই চলছে। তবে আমার সব কাজ কাঠমিস্ত্রির যন্ত্র দিয়ে করতে হয়। এখন কাঠের ভাস্কর্য তৈরির কাঠ কাটার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু আমার যন্ত্র কেনার টাকা নেই। যদি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র থাকত, তাহলে কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করতে আরও সহজ হতো।’