ষড়্ভুজাকার প্রকৃতি

মৌচাকের ছক দেখবেন সব সময় ষড়্‌ভুজাকার। এতে জায়গা ও উপাদানের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হয়। খুবই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। তবে মানুষ বহু বছর ধরে যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে এসেছে, মৌমাছিরা কি তা আগেই জানত?

ষড়্‌ভুজাকারে ছক সাজিয়ে মৌচাক গড়ে তোলার পেছনে কিন্তু মৌমাছির ভূমিকা নেই। এত সময় কই তাদের? যতটা দ্রুত সম্ভব, একের পর এক বৃত্তাকার ঘর বানিয়ে যায় তারা। আর মৌচাকের উষ্ণতায় সে মোম নরম হয়ে ঘরগুলোকে নিখুঁত ষড়্‌ভুজাকৃতি দেয়। এতে কম মোম ব্যবহারে বড় মৌচাক গড়ে তুলতে পারে মৌমাছি। অর্থাৎ মৌচাকের ষড়্‌ভুজাকার ঘরের বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দেয় প্রকৃতি। আর এমন উদাহরণ প্রকৃতিতে অনেক আছে।

সালার দে ইউনি
সালার দে ইউনি

সালার দে ইউনি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় লবণ সমভূমি সালার দে ইউনির অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম বলিভিয়ায়। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে এখানে লবণ চাষ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ত ভূমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তবে আমাদের এদিকে খরার সময় ফাটা মাটির আকৃতিতে যেমন কোনো মিল থাকে না। সালার দে ইউনির তেমন নয়। সেখানে ভূমি ফেটে যায় ষড়্‌ভুজাকারে। আকারে মিল থাকে না ঠিক, তবে আকৃতিতে থাকে। বিস্তৃত অঞ্চল একসঙ্গে দেখলে মৌচাকের আকৃতি খুঁজে পাবেন।

পুঞ্জাক্ষি
পুঞ্জাক্ষি

পুঞ্জাক্ষি

প্রকৃতির এক বিস্ময় হলো পুঞ্জাক্ষি। খুদে খুদে হাজারো চোখের সমন্বয়ে আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীরা ৩৬০ ডিগ্রি—মানে চারপাশটা একসঙ্গে দেখতে পায়। পুঞ্জাক্ষির আরেকটা সুবিধা হলো দ্রুত নড়াচড়া দেখার ক্ষমতাও দেয়। এই চোখগুলো চমৎকার ষড়্‌ভুজাকৃতিতে সাজানো থাকে। পতঙ্গের ছোট্ট মাথায় যতটা বেশি সম্ভব চোখের জায়গা করে দিতেই এমন ব্যবস্থা।

জায়ান্টস কজওয়ে
জায়ান্টস কজওয়ে

জায়ান্টস কজওয়ে

জায়ান্টস কজওয়ের ছবিটি দেখুন। মনে হবে মানুষের তৈরি। তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের অ্যানট্রিম সমুদ্রতীরে পাথরের এমন বিন্যাস পুরোপুরি প্রাকৃতিক। প্রায় ছয় কোটি বছর আগে গলিত লাভা জমে এমন আকৃতি পায়। বিশেষ করে দ্রুত শীতল হতে শুরু করলে পাথুরে লাভা ফেটে ষড়্‌ভুজাকার কলামের আকৃতি পায়। এর নাম জায়ান্টস কজওয়ে। প্রায় ৪০ হাজার এমন কলাম রয়েছে। এর একদিকটা ঢালু হয়ে গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে।

গ্রিন সি টার্টল
গ্রিন সি টার্টল

গ্রিন সি টার্টল

গ্রিন সি টার্টলের রং কিন্তু মোটেই সবুজ না। বাদামি বলা যেতে পারে। এ জাতের কচ্ছপের শক্ত ষড়্‌ভুজাকার খোলের নিচে জমে থাকা চর্বির স্তরে বরং সবুজাভ ব্যাপারটা আছে। কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপগুলো পুরোপুরি উদ্ভিদভোজী।

গ্রন্থনা: মেহেদী হাসান, সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট