ছোট ছোট স্মারকে বাংলাদেশ

শাফাত কাদির (বাঁয়ে) তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন হাতবাক্স। ছবি: সংগৃহীত
শাফাত কাদির (বাঁয়ে) তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন হাতবাক্স। ছবি: সংগৃহীত

অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করতেই ছোটেন চাকরির খোঁজে। অনেকে আবার চাকরির পরীক্ষার জন্য নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেন পড়ার টেবিলে। কিন্তু শাফাত কাদির অন্যদের থেকে ছিলেন আলাদা। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই কিছু করার পরিকল্পনা করেন, তখনো তিনি ছাত্র। সঙ্গে তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা। সেই স্বপ্ন থেকেই গড়ে তোলেন ‘হাতবাক্স’ নামের একটি হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও সংস্কৃতি হস্তশিল্পের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনার মিনিয়েচার (খুদে প্রতিকৃতি) তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় হাতবাক্সের। পরে ফ্রিজ ম্যাগনেট, ওয়াল ফ্রেম, বুকমার্ক, ক্যালেন্ডার, কলমদানি, কার্ড হোল্ডার, পেপার ওয়েট ইত্যাদি যুক্ত হয় শিল্পকর্মের ভান্ডারে।

জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আহসান মঞ্জিল, অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল ও লালবাগ কেল্লার মতো দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ভাস্কর্যের মিনিয়েচার তৈরি করেছে তারা। হাতবাক্সের শিল্পীদের ছোঁয়ায় কক্সবাজার, সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক নিদর্শন ফ্রিজ ম্যাগনেট ও বিভিন্ন ফ্রেমের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব শিল্পকর্মের দামও হাতের নাগালে। দিন দিন তাদের এসব পণ্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

শাফাত কাদির বলেন, স্মারকচিহ্ন হিসেবে হাতবাক্সের বিভিন্ন পণ্যের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দেশি ক্রেতার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক ও প্রবাসীদের কাছেও বাড়ছে। পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আজকাল ক্রেস্টের পরিবর্তে মিনিয়েচার বেছে নিচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, অবকাশযাপন কেন্দ্রসহ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো হাতবাক্সের পণ্যের নিয়মিত ক্রেতা।

হাতবাক্সের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনার খুদে প্রতিকৃতি
হাতবাক্সের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনার খুদে প্রতিকৃতি

হাতবাক্সের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ধারণাটি শাফাত কাদিরের মাথায় আসে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে পড়াকালে। এই বিষয়ে পরামর্শ নিতে তখন তিনি এক শিক্ষকের কাছে যান। ওই শিক্ষক তাঁকে মিনিয়েচার তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী রবিউল হোসাইনের খোঁজ দেন। রবিউলকে হাতবাক্সের প্রধান নকশাকার ও সৃজনশীল শাখার প্রধান হিসেবে যুক্ত করে যাত্রা শুরু হয় হাতবাক্সের। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম মিনিয়েচার আহসান মঞ্জিলের। ‘এক টুকরো ছোট্ট বাংলাদেশ’ মূলমন্ত্রে হাতবাক্স এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কথা হলো হাতবাক্সের নিয়মিত গ্রাহক মাহিয়া মনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বোনের জন্য হাতবাক্স থেকে আমি কিছু ফ্রিজ ম্যাগনেট নিয়েছিলাম। সুদূর প্রবাসেও এগুলো চোখের সামনে তুলে ধরে এক টুকরো বাংলাদেশ।’

ফ্রিজ ম্যাগনেটে নানাভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ
ফ্রিজ ম্যাগনেটে নানাভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ

হাতবাক্সের আরেক ক্রেতা চিকিৎসক সেগুফতা আফরিন। তিনি বলেন, ‘বিদেশে রাস্তায় যখন মিনিয়েচার বা ফ্রিজ ম্যাগনেটের মতো স্মারক দেখতাম, তখন খারাপ লাগত। আমাদের তো এমন কিছু নেই। এটা থাকলে আমাদের দেশের ঐতিহ্য প্রকাশ পেত। এরই মধ্যে অনলাইনে হাতবাক্সের খোঁজ পেলাম। দেখলাম পতাকার আদলে কোট পিন। অর্ডার দিলাম। হাতবাক্স থেকে একে একে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, কক্সবাজার, সুন্দরবনের ফ্রিজ ম্যাগনেট এবং মিনিয়েচারগুলোও সংগ্রহ করি। সব কটিই অসম্ভব সুন্দর।’

প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার বিষয়ে রাজধানীর আজিমপুরে হাতবাক্সের অফিসে বসেই কথা হচ্ছিল শাফাত কাদিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে যখন আমরা ঘুরতে যাই, তখন আমরা সেসব দেশ থেকে স্মৃতিস্বরূপ তাদের বিভিন্ন নিদর্শনের স্মৃতিস্মারক মিনিয়েচার বা ফ্রিজ ম্যাগনেট সংগ্রহ করি। সব দেশেই এটা নিয়ে কাজ হয়। হাতবাক্স সেটাই করছে।’

শাফাতের স্বপ্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে হাতবাক্সের পণ্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। এ জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি।