মানুষ কেন খুনি হয়

সুনামগঞ্জে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন মিয়াকে ২০ অক্টোবের রাতের কোনো এক সময় হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এ ঘটনায় নিহত তুহিনের বাবা–চাচা জড়িত। ফাইল ছবি
সুনামগঞ্জে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন মিয়াকে ২০ অক্টোবের রাতের কোনো এক সময় হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এ ঘটনায় নিহত তুহিনের বাবা–চাচা জড়িত। ফাইল ছবি

ছোট্ট শিশু। নাম তুহিন মিয়া। বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। রাতে বাবার কোল ছুঁয়ে ঘুমিয়েছিল সে। কিন্তু সকালের দিকে দেখা গেল, কদমগাছের ডালে ঝুলছে তার নিথর দেহ। দুই কান কাটা। পেটে ঢোকানো দুটি ছুরি। নির্মমতার এখানেই শেষ নয়। তার যৌনাঙ্গটিও কেটে নেওয়া হয়েছে। নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে। তুহিনের বাবা আবদুল বাছির একজন কৃষক। সন্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন নিষ্ঠুরতায় পাগলপ্রায় অবস্থা বাবা আবদুল বাছির ও মা মনিরা বেগমের। (১৪ অক্টোবর ২০১৯, প্রথম আলো)

এ ঘটনায় তুহিনের বাবা আবদুল বাছির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় তুহিনের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাই জড়িত। পরে তিনজনকেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। (১৮ অক্টোবর ২০১৯, প্রথম আলো)।

ধারণা করা হচ্ছে, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের আদরের ধন ছোট্ট তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তুহিনের বাবাকে। বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন, কাজেই বলা যাবে না যে বাবাই তাঁর ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। 

তবে বিচার শেষে বাবা যদি দায়ী হন, তবে বলতে হবে যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাবার কোলও আর নিরাপদ নয়। তবে খুনি যে-ই হোক, সে অপরাধী।

আপনজনের দ্বারা যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটে, এর কারণ অনুসন্ধান করে অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব খুনের পেছনের হিসেবে রয়েছে পরকীয়া, জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও মাদকের অর্থ জোগাড়। আরও রয়েছে ইন্টারনেটের অপব্যবহার, ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাহলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ক্ষেত্রে কোন কারণ দায়ী?

গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুর আগে পানি চেয়েছিলেন আবরার ফাহাদ। কক্ষে উপস্থিত কেউ কেউ পানি দিতেও চেয়েছিলেন। নিথর হওয়ার আগে হাসপাতালেও নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠদের চাপে তাঁরা কিছু করতে পারেননি। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকারীরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। আর নিহত আবরার একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। তাহলে কোন ক্ষোভে, কোন বিরোধে এমন নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করা হলো?

দেশে খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘যুগান্তর’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬ হাজার ৯৭৪টি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে বিভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৯ জন। ২০১৬ সালে ৮৭৯ জন, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৫২৩ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন খুন হয়েছেন। এ ছাড়া গত ৫ বছরে রাজধানীতে খুন হয়েছে ১ হাজার ১২ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ২১৮ জন, ২০১৬ সালে ৪৮ জন, ২০১৫ সালে ২৩৯ জন, ২০১৪ সালে ২৬২ জন, ২০১৩ সালে ২৪৫ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই বীভৎস ও রোমহর্ষক।

ইতালির চিকিৎসক সিজার লোমব্রোসোকে বৈজ্ঞানিক অপরাধবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি ১৮৭০-সালে ইতালির তুরিন শহরের কারাবন্দী অপরাধীদের ওপর গবেষণা করেন। গবেষণায় তিনি বলেছিলেন, ‘যারা অপরাধী বা হত্যাকারী তাদের কান সাধারণ মানুষের চেয়ে লম্বা হয়। নাক বোঁচা হতে পারে।’

এর অর্থ দাঁড়ায়, বড় কোনো অপরাধী বা হত্যাকারী হুট করে হত্যাকারী হয়ে যান না। জন্মগতভাবেই তাঁরা হত্যাকারী। তাঁদের ভেতরে হয়তো এই প্রবৃত্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় তা প্রকাশ পায়। আর তখনই ওই ব্যক্তি হত্যাকারী হয়ে ওঠেন।

বৈজ্ঞানিক অপরাধবিজ্ঞানের জনক হলেও লোমব্রোসোর এই তত্ত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ এই তত্ত্বই মানুষকে হত্যাকারী হয়ে উঠতে প্ররোচনা দিতে পারে। সে রসদ এই তত্ত্বে আছে। এ বিষয়ে ইউজেনিক্স ধারণার কথা বলা যেতে পারে। জেনেটিক্সের সাহায্যে কোনো জনগোষ্ঠীকে ‘উন্নত’ করার প্রক্রিয়া হলো ইউজেনিক্স। ধনাত্মক ইউজেনিক্স কিছু নির্দিষ্ট জেনোটাইপ বা শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে প্রজননকে উৎসাহিত করে। আর ঋণাত্মক ইউজেনিক্স কৃষ্ণাঙ্গ, সমকামী বা শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধীদের জোর করে প্রজননক্ষমতা কেড়ে নেয় বা গর্ভপাত করতে বাধ্য করে।

ইউজেনিক্সের ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন ফ্রান্সিস গ্যালটন। প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে এই ধারণা বাস্তবে চালু হয়েছিল। উন্নত জনগোষ্ঠী তৈরির নামে ১৯১০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত অন্তত এক লাখ মানুষ বীজাণুমুক্তকরণের শিকার হয়েছে। সুইডেন ৬০ হাজার মানুষকে বীজাণুমুক্ত করেছিল, কানাডা, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ডও বীজাণুমুক্তকরণ সংক্রান্ত আইন পাস করেছিল। জার্মানি প্রথমে চার লাখ মানুষকে বীজাণুমুক্ত করেছিল, পরে তাদের অনেককেই হত্যা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাসপাতালের শয্যা খালি করার জন্য মাত্র ১৮ মাসে ৭০ হাজার বীজাণুমুক্ত করা জার্মান মানসিক রোগীকে গ্যাস চেম্বারে রেখে হত্যা করা হয়েছিল। পরে আন্দোলনের মাধ্যমে এই ধারণা বাতিল করা হয়।

লোমব্রোসোর তত্ত্ব অনুযায়ী, কারও লম্বা কান বা নাক বোঁচা হলে তাঁকে অপরাধী বা হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হতে পারে। আর অপরাধী বা হত্যাকারী সন্দেহে আগেই ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলা হতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে এই তত্ত্বটিই মানুষকে হত্যাকারী হয়ে উঠতে প্ররোচনাও দিতে পারে বলে মনে হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, লোমব্রোসের গবেষণার প্রায় ১১০ বছর পর ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো হত্যাকারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে গবেষণা শুরু করেন ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট অধ্যাপক আদ্রিয়ান রেইনে। নৃশংস হত্যাকারীদের ওপর ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি এই গবেষণা করেন।

গবেষণায় আদ্রিয়ান রেইনে ও তাঁর দল হত্যাকারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখেছেন, তাদের সবার মস্তিষ্কের একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় এবং একইভাবে সাড়া দেয়। হত্যাকারীদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং মস্তিষ্কের ‘অ্যামিগডালা’ নামের একটি অঞ্চল অতিরিক্ত কাজ করে ফেলে। প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর মস্তিষ্কের ছোট্ট একটা অংশ, বড়জোর একটা বাদামের মতোন বড় অ্যামিগডালা। কিন্তু যেকোনো একটা স্টিমুলেশন পেলে ওই অ্যামিগডালাই মুহূর্তের মধ্যে আবেগকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আর তখনই কেউ ভয় পায়, খুশি হয়, কারও ক্ষোভ জাগে, খুনি হয়।

আদ্রিয়ান রেইনের গবেষণা বলছে, হত্যাকারীদের মস্তিষ্ক সাধারণের চেয়ে আলাদা, যার কারণে তারা নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে না। কারও হত্যাকারী হয়ে ওঠার পেছনের একটি কারণ হতে পারে শৈশবে নিপীড়নের শিকার হওয়া। ছোটবেলার নিপীড়ন শরীর থেকে মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে থাকে। বিশেষ করে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের চূড়ান্ত মাত্রায় ক্ষতি হয়।

ডোন্টা পেজ নামের একজন হত্যাকারীর মস্তিষ্ক স্ক্যান করেন আদ্রিয়ান রেইনে। ডোন্টা পেজ ২৪ বছর বয়সী এক নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ডোন্টার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ও তার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ছোটবেলায় ডোন্টা তাঁর মাকে চরম বিরক্ত করতেন। মা অতিষ্ঠ হয়ে বৈদ্যুতিক তার ও জুতা দিয়ে পেটাতেন। দিন দিন এই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল ডোন্টার। এতেই ডোন্টার মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে যায়, যা তাঁকে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে প্ররোচিত করেছিল। তবে আদ্রিয়ান রেইনে বায়োলজিক্যাল কারণের পাশাপাশি একজন মানুষের খুনি হওয়ার পেছনে সামাজিক কারণকেও দায়ী করেছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৩ সালে নেদারল্যান্ডসের একটি পরিবারের কথা জানা যায়, যার সব সদস্যের মাঝেই নৃশংস ঘটনা ঘটানোর ইতিহাস রয়েছে। কেন তাদের মাঝে এই প্রবণতা—এ নিয়ে ১৫ বছর ধরে গবেষণা চলে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ওই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের শরীরে একই ধরনের জিনের অভাব রয়েছে। এই জিন এমএওএ নামের এক ধরনের এনজাইম উৎপাদন করে, যা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই এনজাইমের ঘাটতি হলেই মানুষ সহিংস হয়ে উঠতে পারে।

গত ১৯ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা গেছে, মৎস্যজীবীর বেশে ঠান্ডা মাথায় একে একে ২০ জনকে খুন করেছেন বাবু শেখ নামের এক ব্যক্তি। চুরি ও লুট করার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণও করেছেন। তাঁর পছন্দের শিকার মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী। গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাটোরসহ চার জেলার আটটি চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তিনি।

বাবু শেখ ঠান্ডা মাথায় ২০ জনকে খুন করেছেন। চুরি ও লুট করার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণও করেছেন। তাঁর পছন্দের শিকার মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী। ফাইল ছবি
বাবু শেখ ঠান্ডা মাথায় ২০ জনকে খুন করেছেন। চুরি ও লুট করার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণও করেছেন। তাঁর পছন্দের শিকার মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী। ফাইল ছবি

পুলিশ জানায়, বাবু শেখ একসময় তাঁর নিজ এলাকায় চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তখন এলাকার লোকজন তাঁকে গ্রাম থেকে বের করে দেন। সেই থেকে তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে অপরাধ করতে থাকেন। খুন করা তাঁর নেশায় পরিণত হয়।

প্রতিবেদনটি আপাতদৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাবু শেখ শুরুতে চুরি করতেন। কেন করতেন? নিশ্চয়ই অর্থনৈতিক দুরবস্থা তাঁকে এই পথ দেখিয়েছে, যার কারণে অপরাধের শুরু। তারপর ধরা পড়ে গ্রামছাড়া হওয়ার ক্ষোভ ও অপমান হয়তো তাঁকে ক্রমিক খুনি করে তুলেছে। এর পেছনে তাঁর শারীরবৃত্তীয় কারণও থাকতে পারে, যা গবেষণা করলে পাওয়া যেতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক জিম ফ্যালন। তিনি দেখেন যে, তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একাধিক খুনি রয়েছে। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। শুরুতে নিজের আর সদস্যদের জিন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, অন্য সদস্যদের মতো তাঁর শরীরেও এমন ভয়ংকর জিনের আধিক্য রয়েছে, যার কারণে যেকোনো সময় তিনি সাইকোপ্যাথ হয়ে যেতে পারেন। এমনকি অন্য সদস্যদের মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন। তবে জিম হত্যাকারী হননি। তিনি হয়েছেন একজন সম্মানিত অধ্যাপক।

সাইকোপ্যাথ বা হত্যাকারী না হয়ে অধ্যাপক হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় জিম বলেছেন, তাঁর সুখকর শৈশব ছিল। ছোটবেলায় তাঁর পরিচর্যা হয়েছিল খুবই ভালো। তিনি বলেন, ‘যদি কারও ভয়ংকর জিনের আধিক্য থাকে এবং তিনি ছোটবেলায় নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে তাঁর নৃশংস হওয়ার বা হত্যাকারী হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। আর ভয়ংকর জিনের আধিক্য থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি ছোটবেলায় নিপীড়নের শিকার না হন, তাহলে তাঁর স্বাভাবিক মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

জিমের গবেষণায় বলা হয়, জেনেটিক প্রবণতাই একজন মানুষের হত্যাকারী হওয়ার জন্য দায়ী। এর সঙ্গে যদি ছোটবেলায় নিপীড়ন ও পারিবারিক অশিক্ষা থাকে, তাহলে তা আরও দ্রুত হয়। তিনি বলেছেন, একজন মানুষ জন্মগতভাবে যেমন হত্যাকারী হতে পারে, তেমনি একজন স্বাভাবিক মানুষও নানা আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে হত্যাকারী হতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, মানুষের মাঝে নৃশংস আচরণ দমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো পারিবারিক শিক্ষা। ইতিবাচক পারিবারিক শিক্ষা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এ ছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন মানুষের শৈশব। নিপীড়নমুক্ত শৈশব ভালো মানুষ হওয়ার অন্যতম শর্ত।

সাইকিয়াট্রি অ্যাডভাইজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের খুনি হয়ে ওঠার পেছনে জেনেটিক, সামাজিক পরিবেশ ও বাস্তবতার নিরিখে অপরাধীর আচরণ সমানভাবে দায়ী। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তা জিম ক্লেমেন্ট বলেছেন, মানুষের জেনেটিক কারণ বন্দুকটিকে লোড করে ফেলে, তাদের ব্যক্তিত্ব ও মানসিক কারণ শিকারকে তাক করে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ট্রিগারের চাপ দেয়। আর এভাবেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করে ফেলে।

ছোটবেলার নিপীড়ন বড়বেলায় কীভাবে হত্যাকারী বা অপরাধী হতে সহায়তা করে, সম্প্রতি তার একটি প্রতিবেদন যুক্তরাজ্যে উপস্থাপন করেছেন ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাবি মারোনো ও এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা জো নাভারো। তাঁরা ক্রমিক খুনিদের ওপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন, ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া নানা ধরনের নিপীড়ন কীভাবে বড়বেলায় প্রভাব ফেলে।

এই দুই গবেষক ক্রমিক খুনির চারটি ধরন করেছেন। এগুলো হলো ধর্ষণ, রাগ-ক্ষোভ, ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সাফল্য। শিশুদের নিপীড়নের তিনটি ধরনের কথা বলেছেন তাঁরা। এই তিনটি হলো মানসিক, যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নিপীড়ন।

গবেষণা প্রতিবেদনে অ্যাবি মারোনো ও জো নাভারো বলেছেন, ছোটবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি ক্ষোভ পুষে রাখেন। বড় হয়ে তাঁরা ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে পারেন। একই সঙ্গে তাঁরা নৃশংসভাবে কাউকে হত্যা করে শরীরের টুকরো অংশ নানা জায়গায় ফেলে দেন। মানসিক নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে পারেন। এ ছাড়া হত্যার আগে অমানুষিক নির্যাতন করারও প্রবণতা থাকে তাঁর। আর ছোটবেলায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি দ্রুত অপরাধ করে ফেলেন। মানুষকে হত্যা করার পর তিনি মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে অন্যত্র ফেলে রাখতে পারেন।

সাইকিয়াট্রিঅ্যাডভাইজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিস্ট্রি অ্যান্ড সাইকোপ্যাথলজি অব সিরিয়াল কিলার নিয়ে গবেষণা করা টরন্টোর পিটার ব্রংস্কি গত বছরের শেষের দিকে ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, মানুষ খুনি হয় কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, খুনিরা সব সময় জন্মগতভাবে খুনি নয়। পারিবারিক ও সামাজিক কারণেও অনেকে খুনি হতে পারে। তিনি বলেন, অনেক খুনির জীবন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তাদের অধিকাংশই শৈশবে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার, কারও রয়েছে ভেঙে যাওয়া পরিবার বা পারিবারিক কলহ, কারও মা-বাবা নেই বা মা-বাবার সঙ্গে মানসিক দূরত্ব রয়েছে। এটা একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশে আবরার ফাহাদ হত্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আবরার হত্যার আসামিদের অধিকাংশই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁরা মেধাবীও। তাঁদের একজন মো. আকাশ হোসেন। বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামে। পেশায় ভ্যানচালক হলেও বাবা আতিকুল ইসলাম স্বপ্ন দেখতেন ছেলে আকাশ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সংসারের হাল ধরবেন। পাঁচ সদস্যের অভাবের সংসারে ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে খেয়ে না-খেয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন বাবা। বিদ্যুতের অভাবে হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করা আকাশকে কলেজের শিক্ষকেরা বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়াতেন।

অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানীরা খুনি হওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথাও বলেছেন। আকাশের ক্ষেত্রে এমনটা ছিল, ধারণা করে নেওয়া যেতে পারে। আকাশ মেধাবী কিন্তু অভাবী ছিলেন। এটা ছোটবেলা থেকেই তাঁর পীড়ন হতে পারে।

কিন্তু ছেলে ছাত্রলীগ করেন, তা জানতেন না—এ কথা জানিয়ে আকাশের বাবা আতিকুল ইসলাম জানান, অভাবের সংসার হওয়ায় তাঁকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে নিষেধ করা হয়েছিল পরিবার থেকে। সে যদি শুনতে তাহলে এমন দশা হতো না। (১১ অক্টোবর, ২০১৯, ইত্তেফাক)।

এ ক্ষেত্রে আকাশের এই ঘটনার জন্য দেশের রাজনীতিকে দায়ী করছেন তাঁর বাবা। শুধু রাজনীতির কারণে মানুষ খুনি হতে পারে, এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপক জিম ফ্যালনও। তাহলে ক্ষমতা বা ক্ষমতার রাজনীতিও মানুষের খুনি হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষমতার অপব্যবহার বা ক্ষমতার রাজনীতির কারণে মানুষ হত্যা করার নজির বিশ্বে অসংখ্য। সেই গ্রিক বীর আলেকজান্ডার, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ও কলিঙ্গের যুদ্ধ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই নজির রয়েছে।

টেড বান্ডি নামের একজন ক্রমিক খুনি ছিলেন। তাঁর জীবন ঘেঁটে দেখা গেছে, শৈশবে তিনি কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হননি। তাহলে? এরও অনেক দিন পর জানা গেছে, টেড ছোটবেলা থেকে যাকে মা হিসেবে জেনে বড় হয়েছেন, তিনি আসলে তাঁর নিজের বোন। এই ঘটনা ছোটবেলা থেকে তাঁর মস্তিষ্কে আলোড়ন তোলে, যা নিপীড়নের পর্যায়েই পড়ে।

তবে ছোটবেলা নিপীড়নের শিকার সবাই যে খুনি হবে, এমনটা বলছেন না পিটার ব্রংস্কি। তাঁর মতে, নিপীড়নের শিকার না হয়েও কেউ খুনি হতে পারেন। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কানাডা এয়ারফোর্সে একজন চৌকস কমান্ডার ছিলেন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ৪০ বছর বয়সে তিনি দুজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। এটা একটা রহস্য। কারণ তাঁর শৈশব সুখকর ছিল।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ফাইল ছবি
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হত্যাসংক্রান্ত প্রথম আলোর প্রতিবেদনে পাঠকদের মন্তব্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ পাঠকই খুনের পেছনে পারিবারিক অশিক্ষা, মূল্যবোধের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। মোটাদাগে তাঁরা বিচারহীনতার কথাই বারবার বলেন। এর উদাহরণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। সরকার অপরাধীদের ধরতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিলেও সাড়ে সাত বছরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ফাইল ছবি
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ফাইল ছবি

আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছিল। দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা ওই হত্যা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত। পরে তিন আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত তাঁদের তিনজনকে মামলা থেকে খালাস দেন। (০৭ নভেম্বর ২০১৭, প্রথম আলো)। এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক জিম ফ্যালনের তত্ত্ব অনুযায়ী, এখানে ক্ষমতার রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করেছে। যার কারণে ছাত্রলীগের কর্মীরাই আবার আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারতে উৎসাহ পেয়েছেন।

চলতি বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। (২৭ জুন ২০১৯, প্রথম আলো)। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। নিহত রিফাত সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে।

পরদিন রিফাতের বাবা বরগুনা সদর থানায় সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে গত ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন ছিলেন ​ছিঁচকে সন্ত্রাসী। আট বছর আগে ছোটখাটো ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়ান। কয়েক বছর আগে যোগাযোগ গড়ে ওঠে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক ও পুলিশের ​কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে। এই দুই শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ও ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে তোলেন অপরাধী চক্র ‘০০৭ গ্রুপ’। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তারা বরগুনা শহরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়। চক্রের প্রধান সাব্বির নাম ধারণ করেন ‘নয়ন বন্ড’।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নয়ন বন্ডের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ। তাঁর দুই চাচাতো শ্যালক শাওন তালুকদার ও অভিজিৎ তালুকদার ছিলেন নয়নের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গী।

এর বাইরে নয়ন স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন নয়ন। বরগুনা সদর থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অন্তত ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে নয়ন বন্ড হয়ে ওঠার আগেই পুলিশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। নয়ন পুলিশের কথিত সোর্স (তথ্যদাতা) ​ছিলেন। সেই সূত্রে শহরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশের সহায়তা পেতেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ায় পুরো জেলা শহর দাপিয়ে বেড়ায় নয়ন ও তাঁর বাহিনী। কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। (২৮ জুলাই ২০১৯, প্রথম আলো)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, রিফাত শরীফ হত্যার ক্ষেত্রেও জিম ফ্যালনের তত্ত্বের ক্ষমতার রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করেছে।

খুন যে কারণেই ঘটুক না কেন, সেটা চরম অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি হতে হবে। সেই সঙ্গে অপরাধীর কাউন্সেলিং করাতে হবে। কারণ আমরা সংবাদমাধ্যমে পড়েছি, অপরাধ করে কারাগারে আটক অপরাধী জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই অপরাধ করছেন। তাই অপরাধীর কাউন্সেলিং জরুরি। জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো এবং প্রতিটি পরিবারে প্রকৃত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে শিশুদের সুখকর শৈশব নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে একটি ভয়হীন সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে। আর রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারসহ এই দায়িত্ব সবার।