অ্যালেক্সিয়ার বিচারক ইসমাইল

ইসমাইল ফেরদৌস
ইসমাইল ফেরদৌস
পেশাদার আলোকচিত্রী ও আলোকচিত্রের শিক্ষার্থীদের কাছে সম্মানজনক পুরস্কারগুলোর একটি হলো অ্যালেক্সিয়া ফাউন্ডেশন গ্রান্টস। বাংলাদেশের হাতে গোনা আলোকচিত্রী যুক্তরাষ্ট্রের এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। এবার সেই পুরস্কারের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ইসমাইল ফেরদৌস

ইসমাইল ফেরদৌস তখন কাজ করছিলেন সাতক্ষীরায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের গভীরতা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়েই ছিল সেই কাজ। তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে তিনি যে ছবি তুলেছিলেন, সেগুলোই জমা দিলেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য। ২০১২ সালে সেই কাজের জন্য তিনি পুরস্কারও পেলেন। পুরস্কারটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেক্সিয়া ফাউন্ডেশনের ‘অ্যালেক্সিয়া স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স গ্রান্টস’। ঠিক সাত বছর পর সেই সম্মানজনক পুরস্কারের বিচারকের চেয়ারেও বসলেন ইসমাইল।

ফেসবুক মেসেঞ্জারে যখন কথা হচ্ছিল, সেই অনুভূতির কথাই জানতে চাইলাম আগে। ‘এটা সত্যিই সম্মানের বিষয়। আমি রোমাঞ্চিত।’ এবার ছয় সদস্যের জুরিবোর্ডে ইসমাইল ফেরদৌস ছাড়া চারজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এবং একজন যুক্তরাজ্যের। 

৩০ বছর ধরে আলোকচিত্রীদের নিয়ে কাজ করছে অ্যালেক্সিয়া ফাউন্ডেশন। প্রতিবছরই শিক্ষার্থী ও পেশাদার আলোকচিত্রীদের দুটি আলাদা বিভাগে পুরস্কৃত করে থাকে। শিক্ষার্থী বিভাগে তিনজনকে মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারী সাইরাকুজ ইউনিভার্সিটিতে তিন সেমিস্টার বিনা খরচে পড়াশোনা করার সুবিধা পান। এ ছাড়া আর্থিক সম্মাননা হিসেবে এক হাজার ডলার পান। অন্যদিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনীত অন্য দুজনকে দেওয়া হয় ৫০০ ডলার আর্থিক পুরস্কার। এ ছাড়া তাঁরা একটি কর্মশালায় বিনা মূল্যে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। পেশাদার বিভাগে একজন আলোকচিত্রীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ২০ হাজার ডলার। ১৯ নভেম্বর এ বছরের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

ইসমাইল ফেরদৌস বলছিলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার বিচারকাজ হয় একটি খোলা মিলনায়তনে। তাই গোপনীয়তা ও কারচুপির সুযোগ নেই।’

বিচারক হিসেবে চেয়ারে ইসমাইল নতুন হলেও ক্যামেরা হাতে নাম কুড়িয়েছেন আগেই। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে ইসমাইলের ‘দ্য কস্ট অব ফ্যাশন’ বেশ আলোচিত হয়। রানা প্লাজা ধসের পরপরই তিনি ‘আফটার রানা প্লাজা’ শিরোনামে ফলোআপ তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। প্রকল্পটি পরবর্তী সময়ে ‘গেটি ইমেজ—ইনস্টাগ্রাম গ্রান্ট’ লাভ করে।

এ ছাড়া সিরিয়া, গুয়াতেমালা, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে প্রামাণ্য আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর ছবি নিউইয়র্ক টাইমস, ব্লুমবার্গ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসমাইল বর্তমানে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক–এর তালিকাভুক্ত প্রদায়ক আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছেন।

অথচ তিনি শখের বসে হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা। ইসমাইল নিজের ক্যামেরাটি কেনেন ২০০৯ সালে। তখন তিনি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ বিষয়ের সঙ্গে আলোকচিত্রের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। তবু যেহেতু ক্যামেরা আছে, তাই যোগ দিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি ক্লাবে। ছবি তোলার চর্চা ভালোই হতে শুরু করল। বিভিন্ন কর্মশালায়ও অংশ নিলেন। কখনো একা আবার কখনো বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়তেন।

শুধু প্রজাপতি কিংবা নীল আকাশের ছবি না তুলে ফ্রেমের মধ্যে একটি গল্প তুলে ধরতে শুরু করলেন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে টানা দুবার পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব থেকে ‘ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার। ক্লাবের সাংগঠনিক কাজেও দারুণ অংশগ্রহণ ছিল ইসমাইলের। সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন বেশ কয়েক মাস।

২০১১ সালে স্নাতক হলেন। ওই বছরই নরওয়েজীয় আলোকচিত্রী জোনাস বেনডিকসনের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ মিলল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি প্রকল্পে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করলেন তখন। ইসমাইল মনে করেন, এ কাজের মাধ্যমেই তাঁর জীবনের মোড় পাল্টে যায়। বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে জানাশোনা হয়। জোনাস বেনডিকসনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি নামকরা আলোকচিত্রীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। শুরু হয় পেশাদার আলোকচিত্রীজীবন। বর্তমানে তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ছবি তুলছেন। বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। প্রায়ই আসেন বাংলাদেশে। ক্যামেরায় তুলে নেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের গল্প।