প্রেমের কৃষক কাদির

আবদুল কাদির এই ফসলি জমিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ভালোবাসার প্রকাশ।
আবদুল কাদির এই ফসলি জমিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ভালোবাসার প্রকাশ।

আবদুল কাদির পেশায় একজন কৃষক। গ্রামের আর দশজন কৃষিজীবীর মতোই জীবন তাঁর। তবে এখন তিনি এলাকায় পরিচিত ‘প্রেমের কৃষক’ নামে। কেন এমন খেতাব? খেতাবের কারণ, তাঁর আবাদি জমি। স্ত্রী মোকসেদা বেগমের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে সরিষাখেতে ফুটিয়ে তুলেছেন ভালোবাসার চিহ্ন, সেটাও তাঁর ফলানো ফসলেই।

৫৫ বছর বয়সী আবদুল কাদির ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াখালবলা গ্রামের বাসিন্দা। কাদিরের আবাদি জমিটি কৃষি বিভাগের একটি প্রদর্শনী প্লট। জমিতে বারি ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কাদির ওই জমিতে সরিষা চাষ করার পাশাপাশি মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, টমেটো ও লালশাক চাষ করেছেন। 

সরিষা আবাদের সময় ভালোবাসার নকশা ফুটিয়ে তোলার চিন্তা মাথায় আসে তাঁর। কেন এমন চিন্তা? আবদুল কাদির লাজুক হেসে বলেন, ‘কৃষকের কি প্রেম থাকতে নেই?’ তারপর জানালেন, ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেছেন তিনি। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসার নিদর্শন দেখানোর মতো সাধ্য নেই তাঁর। এবার কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনার সার-বীজ পেয়েছেন। নিজেও কিছু বীজ কিনেছেন। একান্তে ভেবে দেখলেন, জমিতে সরিষা আবাদের মাধ্যমেও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলা যায়। 

সরিষাগাছেই ফুটে উঠেছে ভালোবাসা চিহ্ন
সরিষাগাছেই ফুটে উঠেছে ভালোবাসা চিহ্ন

প্রথমে কাগজে নকশা এঁকে সেই নকশা অনুযায়ী জমিতে বীজ বপন করেন। কিছুদিন পর বীজের থেকে চারা। ধীরে ধীরে আকৃতি পেতে থাকে ভালোবাসার। জমিতে যখন চারা বড় হতে শুরু করে, তখন পাড়াখালবলা গ্রামে এক অভাবনীয় দৃশ্যের জন্ম নিল। আবাদি জমিতে কাদিরের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে শুরু করে। জমির মাঝখানের ভালোবাসা চিহ্নটি সবচেয়ে বড়। চার কোনায় আছে আরও চারটি ভালোবাসা চিহ্ন। তবে ভালোবাসা চিহ্নে স্ত্রীর নাম না লিখে নিজের নামই তিনি লিখেছেন। আবদুল কাদির বলেন, ‘নানা ধরনের নকশা করা ও নিজের নাম লেখার পর জমিতে আর জায়গা ছিল না। তাই স্ত্রীর নাম লিখতে পারিনি!’ আগামী বছর সেখানে স্ত্রীর নাম অবশ্যই লিখবেন বলে জানালেন কাদির।

 আবদুল কাদিরের ভালোবাসার নিদর্শন এই ফসলি জমির ছবি তুলেছিলেন কেউ একজন। তিনি পোস্ট করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। মুহূর্তেই সেটা ছড়িয়ে পড়ে। কৃষক আবদুল কাদির হয়ে যান ভালোবাসার নায়ক। লাজুক কাদিরের ভালোবাসার গল্প ধীরে ধীরে মানুষ জানতে পারে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে কাদিরের আশ্চর্য আবাদ দেখে ইতিবাচক মন্তব্য করেন।

খালবলা গ্রামের ‘পাড়াখালবলা বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাব’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্য মো. নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ক্লাব কৃষকদের সহায়তা করে থাকে। আবদুল কাদিরকেও আমরা সহায়তা করেছি। কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে যে প্রেম জমে আছে, তা প্রথমে আমাদের জানা ছিল না। বুঝতে পারলাম, স্ত্রীকে ভালোবেসে কেউ কেউ স্মৃতিময় স্থাপনা গড়েন। কিন্তু কৃষক আবদুল কাদির তাঁর কৃষিকাজের মধ্য দিয়ে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলেছেন। হয়তো কাদিরের দেখাদেখি পাড়াখালবলা গ্রামে আগামী মৌসুমে অনেক প্রেমিক কৃষকের দেখা মিলতে পারে।’