প্রতিবেশী উৎসব

গ্রামের মানুষের কাছে উৎসবটি হয়ে উঠেছিল মিলনমেলা। ছবি: ছুটির দিনে
গ্রামের মানুষের কাছে উৎসবটি হয়ে উঠেছিল মিলনমেলা। ছবি: ছুটির দিনে

মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার নূরপুর এলাকার মেয়ে আরবিদা। শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার সঙ্গে দেখা একটা পিঠার দোকানে। আরবিদার সঙ্গেই বসে ছিলেন গ্রামের ৮–১০ জন তরুণী। কত–কী পিঠা তাঁদের সামনে! ভাপা, মালপোয়া, ফুল পিঠা, নকশি পিঠা, পাটিসাপটা, দুধচিতই, রাজদৌলা—কমপক্ষে ১৫ রকম তো হবেই। দাম কত? আরবিদা জানাল, পিঠার জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। গ্রামের যে কেউ টোকেনের মাধ্যমে বিনে পয়সায় পিঠা খেতে পারে।

বছরের শেষ দিন, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নুরপূর গ্রামে পা রেখে হকচকিয়ে গেছেন অনেকেই। ছোট্ট গ্রামটা সাজানো হয়েছে রঙিন কাগজ আর কাপড় দিয়ে। একদিকে পিঠার স্টল, অন্যদিকে পুকুরের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটা বড় শাপলা। গ্রামের মানুষের জন্য রাখা হয়েছে সাদা বোর্ড। সেখানে যে যাঁর নাম লিখেছেন। আছে চটপটি–ফুচকা, বাচ্চাদের খেলনার স্টলও। মেলা ভাবলে ভুল হবে। এ আয়োজনের নাম ‘প্রতিবেশী উৎসব’। প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়াতে এ আয়োজন করেছিল আদর্শ নূরপুর বাস্তবায়ন পরিষদ নামের একটি সংগঠন। গ্রামের নানা বাড়ি থেকে পিঠা এসেছে। নূরপুরের কিশোর–তরুণেরা মিলেই সাজিয়েছেন নিজেদের গ্রাম। একসঙ্গে একটি দিন কাটাতে চেয়েছেন তাঁরা।

পাশের গ্রাম কালন্দিপাড়ার বাসিন্দা সম্পা বেগম জানালেন, নূরপুর তাঁর বাবার বাড়ি। প্রতিবেশীদের নিয়ে উৎসব হচ্ছে। খবর পেয়ে তিনি চলে এসেছেন। ছোটবেলায় এখানেই বড় হয়েছেন। কারও সঙ্গে স্কুলে গেছেন, কেউ হয়তো ছিল বিকেলবেলার খেলার সাথি। অনেক দিন পর এ আয়োজনের সুবাদে সবার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

গ্রামবাসীর জন্যই পিঠা–পুলির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তরুণেরা।
গ্রামবাসীর জন্যই পিঠা–পুলির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তরুণেরা।

আদর্শ নূরপুর বাস্তবায়ন পরিষদ গড়ে উঠেছে এ গ্রামেরই ফ্রান্সপ্রবাসী তরুণ, কাজল রহমানের উদ্যোগে। সংগঠনটির সদস্য মো. সৌরভ আহম্মেদ জানালেন, তাঁদের এলাকায় প্রায় ৮০০ ভোটার আছেন। পরিবার আছে সাড়ে তিন শর বেশি। এলাকায় নানা শ্রেণির মানুষ আছে। কেউ ধনী, কেউ গরিব। সবার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতেই এ সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের অনেকে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামের পুকুর ও রাস্তাঘাট সংস্কার, সড়কবাতি স্থাপনসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। অসচ্ছল প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। 

আদর্শ নূরপুর বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘এবারই প্রথম আমরা প্রতিবেশী উৎসব আয়োজন করলাম। এ রকম আয়োজনের মাধ্যমেই তো পরস্পরের সম্পর্কটা আরও মধুর হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারব, আমাদের সমাজটাকে সুন্দর করতে পারব।’