ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবার বাংলাদেশের চার কন্যা

রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও আফসানা বেগম—বাংলাদেশের চার নারী এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য । ছবি: সংগৃহীত
রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও আফসানা বেগম—বাংলাদেশের চার নারী এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য । ছবি: সংগৃহীত
>যুক্তরাজ্যে গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিজয় পেয়েছেন বাংলাদেশের চার নারী। ২০১০ সালে রুশনারা আলীর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাঙালি এমপির যে অভিষেক, তাতে পরে যোগ হয় টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হকের নাম। এই তিনজনের সঙ্গে এবার যুক্ত হলেন আরেক বাঙালি নারী আফসানা বেগম। যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির এই চার রাজনীতিক বাংলাদেশের জন্য তৈরি করেছেন নতুন ইতিহাস। লিখেছেন তবারুকুল ইসলাম 

বাঙালি নারীদের মধ্যে বিশেষ কিছু আছে বলতেই হবে। না হলে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে সাফল্যের কেতন ওড়ানো বাংলাদেশিদের সবাই কেন নারী হবেন? গত ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি পরিবারের চার কন্যার বিশাল বিজয়ের পর ঘরোয়া আড্ডা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি এমন কৌতূহলী প্রশ্ন ছুড়েছেন অনেকেই।

‘মাদার অব পার্লামেন্ট’খ্যাত ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২০১০ সালে প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মেয়ে রুশনারা আলী। ২০১৫ সালে নির্বাচিত হন আরও দুই বাঙালি নারী—টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই তিনজনই পার্লামেন্টে নিজেদের আসন ধরে রাখেন। ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই তিনজনের সঙ্গে ব্রিটিশ এমপির তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আফসানা বেগম। এতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যা দাঁড়াল চার। চার কন্যাই যুক্তরাজ্যের লেবার দলীয় রাজনীতিক।

যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন হওয়ার নিয়ম। কিন্তু পাঁচ বছরের কম সময়ে এটি ছিল দেশটিতে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকর করা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণেই এমন পরিস্থিতি। এবারের নির্বাচনে ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভরা বিশাল জয় পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে। দলটির প্রাপ্ত আসন ৩৬৫, যা দলটিকে হাউস অব কমনসে ৮০ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দিয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ২০৩ আসন পাওয়া লেবার পার্টিকে টানা চতুর্থ মেয়াদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। দলটি ৫৯ আসন হারিয়েছে। এটি ১৯৩৫ সালের পর লেবার পার্টির সবচেয়ে খারাপ ফল। ব্রেক্সিট কার্যকর করা নিয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়াই লেবার দলের পরাজয়ের মূল কারণ, এমনই ধারণা বিশ্লেষকদের। দেশব্যাপী নিজ দলের এমন ভরাডুবির মধ্যে চার বাঙালি কন্যার বিজয় তাই বড় চমক। ৬৫০ আসনের হাউস অব কমনসে এবার বিভিন্ন দল থেকে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ৬৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের চার নারীর জায়গা করে নেওয়া কোনো ছোটখাটো ব্যাপার নয়। 

নির্বাচনী প্রচারণায় রুশনারা আলী। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনী প্রচারণায় রুশনারা আলী। ছবি: সংগৃহীত

টানা চারবারের এমপি রুশনারা আলী

রুশনারা আলী
রুশনারা আলী

মুঠোফোনে গলা শুনেই বোঝা গেল টানা চতুর্থ বিজয় পাওয়ায় বেশ খুশি রুশনারা আলী। প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘যে এলাকায় বড় হয়েছি, সংসদে সে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করা আমার জীবনের সবচেয়ে গর্বের বিষয়। এ জন্য ভোটারদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

তবে দেশব্যাপী নিজের রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির ফলাফলে হতাশ রুশনারা। তিনি মনে করেন, রক্ষণশীল সরকারের হাতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি কল্যাণসেবা ও অর্থনীতি—কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। এই সরকারের বেপরোয়া ব্রেক্সিটনীতির সবচেয়ে বড় শিকার হবে দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

রুশনারার জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথে। ৭ বছর বয়সে তিনি মা–বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তাঁদের বসতি পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা। তিনি বললেন, ‘প্রথমবার এমপি হয়েই আমি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও শিক্ষাবিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পাই। এটাও এক বড় প্রাপ্তি।’

ছায়া মন্ত্রী ছাড়াও পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেন রুশনারা আলী। সর্বশেষ কনজারভেটিভ সরকারের আমলে তিনি বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে কাজ করেন। 

২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের ‘বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো’ আসনে রুশনারা আলীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বাংলাদেশিদের অভিষেক ঘটেছিল। এবার একই আসন থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে বিজয় তুলে নিয়েছেন তিনি। যত দিন গেছে, রুশনারার জনপ্রিয়তা তত বেড়েছে। প্রথমবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে রুশনারার ভোটের পার্থক্য ছিল ১১ হাজার ৫৭৪। এবার তিনি কনজারভেটিভ দলের নিকোলাস স্টোভোল্টকে হারিয়েছেন ৩৭ হাজার ৫২৪ ভোটে। রুশনারা ভোট পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৫২টি। ভোটের ব্যবধান ধরলে এটি একটি রেকর্ড।

‘বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো’ পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের একটি আসন। এ এলাকার ৩৩ শতাংশ ভোটার বাংলাদেশি। অভিবাসী অধ্যুষিত এ আসন লেবার পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে এ আসনের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। রুশনারা আলী সংসদে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখেন।

লেবার দলকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হবে মনে করেন এই এমপি। রুশনারা বলেন, জনগণের সামনে বরিস জনসন এবং তাঁর রক্ষণশীল সরকারের বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে। 

এবারের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। ছবি: সংগৃহীত
এবারের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। ছবি: সংগৃহীত

টিউলিপ সিদ্দিকের হ্যাটট্রিক

টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের অভিজাত এলাকা হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টানা তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী হয়ে এমপি হিসেবে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। ২০১০ সালে মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে আসনটি জিতেছিল লেবার পার্টি। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ আসন ধরে রাখার দায়িত্ব পড়ে টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর। সেবার জয় তো পানই, ব্যবধানও বাড়িয়ে নেন রক্ষণশীল দলের প্রার্থীর সঙ্গে। গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে টিউলিপ দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের জনি লাকের চেয়ে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হওয়া স্বাভাবিক কারণেই এক চমৎকার ব্যাপার। একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতার পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা টিউলিপকে সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রে রাখে।

২০১৬ সালের গণভোটে টিউলিপের আসনের ৭৫ শতাংশ ভোটার ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। টিউলিপ তাই ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সংসদ এবং সংসদের বাইরে ব্রেক্সিটবিরোধীদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন তিনি। ‘ওপেন ব্রিটেন’ এবং ‘বেস্ট ফর ব্রিটেন’ নামে ইইউপন্থী সংগঠন ২০১৭ সালের নির্বাচন থেকে টিউলিপকে সমর্থন দিয়ে আসছে।

শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের জন্ম লন্ডনে। ছোটবেলায় ঢাকায় স্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) ও কিংস কলেজ থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি লেবার দলের সদস্য। ২০১০ সালে লন্ডনের ক্যামডেন বারার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ। ২০১৩ সালে তিনি এমপি পদে লেবার পার্টির মনোনয়ন পান।

নবাগত হিসেবে ২০১৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া টিউলিপের ভাষণ সেরা সাতটি অভিষেক ভাষণের মধ্যে স্থান করে নেয়। নারী-পুরুষের সমান মজুরি, পাসপোর্টে মায়ের নাম যুক্ত করা এবং ইরানে আটক ব্রিটিশ নাগরিক নাজানিন জাগহারি রেডক্রিপের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের জানান দেন। টিউলিপের ভূমিকার কারণেই গত বছরের জানুয়ারি মাসে শত বছরের ঐতিহ্য বদলে সাংসদদের প্রক্সি ভোট দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ২০১৫ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই টিউলিপ সংসদীয় বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছিলেন লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভাতেও।

দুই সন্তানের মা টিউলিপ আবারও নির্বাচিত করায় তাঁর আসনের ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দলের জাতীয় ফলাফলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, সামনে কঠিন সময়। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বিরোধী দলের সদস্য হলেও নানা বিষয়ে রূপা হকের থাকে সরব উপস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত
বিরোধী দলের সদস্য হলেও নানা বিষয়ে রূপা হকের থাকে সরব উপস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী রূপা হক

রূপা হক
রূপা হক

টিউলিপের মতোই তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী হয়েছেন আরেক বাঙালি নারী রূপা হক। লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে এবার তিনি ১৩ হাজার ৩০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রূপা।

রূপার পুরো নাম রূপা আশা হক। জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনের ইলিং এলাকাতেই। তাঁর আদি বাড়ি বাংলাদেশের পাবনা জেলার মোকসেদপুরে। বাবা মোহাম্মদ হক এবং মা রওশন আরা হক ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

রূপা হক ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, সমাজবিদ্যা এবং আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি তরুণদের আচরণগত পার্থক্য নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালে রূপা হক ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারে শিক্ষকতা শুরু করেন। তখন শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি খণ্ডকালীন ডিজে (ডিস্ক জকি) হিসেবেও কাজ করতেন। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি কিংসটন ইউনিভার্সিটিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রেক্সিটবিরোধী রাজনীতিকদের মধ্যে রূপা হকও একজন। একই সঙ্গে শিক্ষক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তাঁর সরব উপস্থিতি।

মুঠোফোনে রূপা হক প্রথম আলোকে বলেন, কনজারভেটিভ দল আবার ক্ষমতায়—বিষয়টা মোটেই সুখের নয়। বিশেষ করে বরিস জনসন বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরায় ব্রেক্সিট ঠেকানো এখন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

লেবার পার্টি সংসদে বিরোধী দল থাকলেও তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় রূপা হকও বেশ খুশি। তিনি বললেন, ‘এ জন্য আমি আমার এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই। অনেক বাংলাদেশির মতো আমার বাবাও যুক্তরাজ্যে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। নিজের বাংলাদেশি ঐতিহ্য নিয়ে আমি সব সময়ই গর্ব বোধ করি।’ 

অনেকটা চমক জাগিয়ে জয় পেয়েছেন আফসানা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
অনেকটা চমক জাগিয়ে জয় পেয়েছেন আফসানা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারেই এমপি হলেন আফসানা বেগম

আফসানা বেগম
আফসানা বেগম

টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকারই আরেকটি আসন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস। এ আসন থেকেই ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নবাগত আফসানা বেগম। ২৮ হাজার ৯০৪ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন কনজারভেটিভ দলের শন ওককে।

পূর্ব লন্ডনের এই আসনও লেবার দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। প্রায় দুই দশক ধরে আসনটির এমপি ছিলেন লেবার পার্টির জিম ফিটজপেট্রিক। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নতুন প্রার্থীর খোঁজে নামে লেবার পার্টি। একপর্যায়ে এ আসনে নারী প্রার্থী দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় লেবার পার্টি। অনেকটা চমক জাগিয়ে দলের মনোনয়ন পান রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ আফসানা বেগম।

আফসানা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে চাকরি করেন। তিনি লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সহসভাপতি এবং লন্ডন আঞ্চলিক শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য। বাংলাদেশের এই নারীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।

‘ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে আনন্দের। তবে আমার দল ক্ষমতায় ফিরতে পারলে এ আনন্দ আরও বহু গুণ বাড়ত।’ প্রথম আলোকে এভাবেই বললেন আফসানা বেগম। নির্বাচন নিয়ে এ–ও জানালেন, লেবার পার্টি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের পরিকল্পনা তুলে ধরে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের যে ইশতেহার দিয়েছে, তা দেশের মানুষ পছন্দ করেছে। কিন্তু ব্রেক্সিট প্রসঙ্গটি মূল হয়ে ওঠার কারণে দল কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। 

বামপন্থী রাজনীতিক করবিনের অনুসারী আফসানা বেগম। লেবার নেতা হিসেবে করবিনের সফলতা অনেক বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর ভূমিকার কারণে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি, আয়বৈষম্য, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার মতো বিষয়গুলো চাইলেই উপেক্ষা করতে পারবে না ক্ষমতাসীনেরা। আফসানা বেগম বলেন, ‘লেবার পার্টির ইশতেহারগুলোকে সামনে রেখে সংসদে এবং সংসদের বাইরে লড়াই করে যাব।’