ছোট্ট অরণীর 'নীলা তুমি কি চাও না...'

নীলা তুমি কি চাও না/ হারাতে ওই নীলিমায়/ যেখানে দুটি মন এক হয়ে ছবির মতো জেগে রয়—নব্বইয়ের দশকে তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত মাইলসের গানটি। তুমুল জনপ্রিয় গানটি ওই সময়ের কিশোর ডিউক থিওটোনিয়াস কত শতবার নিজেও গেয়েছেন। গত বছর মাইলসের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভাবলেন তাঁর গিটারের সুরে মেয়ে অরণীকে দিয়ে ‘নীলা’ গানটি করাবেন। অরণীর বয়স মাত্র ৮ বছর। তাতে কী! বাবার সঙ্গে এর মধ্যে ‘বড়দের’ অনেক গান গেয়েছে সে।

‘বাপ-বেটি’ পিয়ানিকা আর গিটার নিয়ে বসে গেলেন। গানটি রেকর্ড করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলেন ডিউক। অরণীর ছোট্ট কণ্ঠে বড়দের ‘নীলা’ গান শুনে মুগ্ধ বন্ধু-স্বজনদের শুভেচ্ছায় ভাসলেন বাবা-মেয়ে।

মেয়ে অরণীর সঙ্গে মা–বাবা। ছবি: প্রথম আলো
মেয়ে অরণীর সঙ্গে মা–বাবা। ছবি: প্রথম আলো

ডিউক ও রেজুআন্না দম্পতির একমাত্র সন্তান অরণী ক্যাথলিন রাজধানীর মণিপুরী পাড়ায় বাংলাদেশ অলটারনেটিভ কোর্স ফর হিউম্যান অ্যাডভান্সমেন্ট (বাচা) ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তাঁরা মণিপুরী পাড়া এলাকাতেই থাকেন। ডিউক আর রেজুআন্না দুজনেরই বাড়ি দিনাজপুর শহরে। দুজনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ডিউক মনোবিজ্ঞান আর রেজুআন্না অর্থনীতিতে পড়েছেন। ডিউক রেডিও টুডে-তে প্রোডাকশন প্রধান হিসেবে কর্মরত। আর রেজুআন্না মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি সংগঠনে মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত।

মা-বাবাকে নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিল অরণী। গান গাইতে কেমন লাগে? মাথা ঝাঁকিয়ে মুহূর্তে উত্তর দিল, ‘খুব ভালো লাগে।’
স্কুলের অনুষ্ঠান বা পারিবারিক আসর—সবখানেই গান গাওয়ার ডাক পড়ে অরণীর। ‘তোমাকে দেখলেই সবাই গান গাইতে বলে, ভালো লাগে?’ এর জবাবেও একই উত্তর অরণীর ‘খুব ভালো লাগে।’
মা-বাবা বললেন, গান গাইতে খুব ভালোবাসে অরণী। গান গাইতে বললেন ওর কোনো ‘না’ নেই।

মা রেজুআন্না বলেন, ‘বড়দিন উৎসবে নিয়মিত দিনাজপুর যাওয়া হয়। ওর দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ সবাই ওর গান শোনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।’

মুখে বোল ফোটার আগেই অরণী ভাঙা ভাঙা শব্দে গান গাওয়া শুরু করে বলে জানালেন বাবা ডিউক। তিনি বলেন, ‘তখনো ঠিকভাবে কথা বলতে শেখেনি। সুরে সুরে ইংরেজি ছড়া বলত। একবার শুনেই ঠিকঠাক সুরে গাইতে পারত। তখনই বুঝেছিলাম, গান ও গাইতে পারবে।’

পারিবারিক আবহ অরণীকে গানে বেশি উৎসাহিত করেছে বলে মনে করেন ডিউক। তিনি জানান, তিনি নিজেও স্কুলে পড়ার সময় থেকে তবলা বাজাতেন, গান গাইতেন। কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে তুমুলভাবে গিটার বাজিয়েছেন ক্যাম্পাসে। দিনাজপুরের জনপ্রিয় স্ট্রেঞ্জার্স ব্যান্ডে গিটারিস্ট ছিলেন তিনি। তবে অরণী মামা জেভিয়ারের কাছ থেকে ব্যান্ডের গানে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছে। সেই তিন-চার বছর বয়সেই মামা গান ধরলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে বসে যেত অরণী। মামা আর বাবার সঙ্গে সে ব্যান্ডের বেশ কয়েকটি গান শিখে যায়। প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’, ‘সেই তুমি’ গানগুলো অরণীর কণ্ঠে বারবার শুনতে চান পরিচিতজনেরা।

প্রথম আলোতে বসে বাবার গিটারের সঙ্গে পিয়ানিকা বাজিয়ে মাইলসের ‘নীলা’র পাশাপাশি অরণী গেয়ে শোনাল শ্রেয়া ঘোষালের ‘যাও পাখি বলো হাওয়া ছলো ছলো/ আবছায়া জানালার কাচ...গানটি। কচিকণ্ঠে বড়দের গান শুনতে মিষ্টি লাগলেও অরণী যে শুধু ‘বড়দের’ গান গায়, বিষয়টি তা নয়। শিশুদেরই গান শেখানো উচিত এই ভেবে যাঁরা ভ্রুকুটি করছেন তাঁদের জন্য জানানো যাচ্ছে, অরণীকে গানের শিক্ষকের কাছে নিয়মিত তালিম দেওয়া হয়। চার বছর বয়স থেকে অরণীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখানো শুরু হয়। মণিপুরী পাড়ায় বিপ্লব দের গীতি শতদল অ্যাকাডেমিতে চার বছর ধরে সব ধরনের গান শিখছে সে। নৃত্যাঞ্চলে নাচও শেখে সে।

বাবা বললেন, ‘অরণী খুব দ্রুত সুর তুলতে পারে। নীলা গানটি শেখানোর আগের দিন পিয়ানিকা কিনে এনেছিলাম। কয়েকবার দেখেই সে বাজানো শিখে গেছে। সে শুধু গান গাইতে পারে তা নয়, গান সে বোঝে, জানে।’ বাবার স্বপ্ন অরণী যে পেশাতেই যাক, গান যেন ধরে রাখে।