ভুলে ভূপাতিত

>দিন কয়েক আগেই ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটল ইরানে। দুনিয়াজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্রের এমন ভুল ব্যবহারে এর আগেও ঘটেছিল দুর্ঘটনা, প্রাণ হারিয়েছিল অসংখ্য মানুষ।

৩৩ বছর পর জানা গেল বিধ্বস্তের কারণ
ইতালির বোলোগনা থেকে পালের্মো যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি। উড্ডয়নের ২৯ মিনিট পর ইতালির উস্তিকা দ্বীপের কাছে ছিল ডিসি-৯ উড়োজাহাজটি। এরই পর জানা যায় বিধ্বস্ত হওয়ার খবর। ইতালির বিমান পরিবহন সংস্থা ইতাভিয়ার সেই আইএইচ–৮৭০ ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় ৮১ জন যাত্রী মারা যায়। ১৯৮০ সালের ২৭ জুনের সেই ঘটনা অনেক দিন রহস্যঘেরা ছিল। কেন, কীভাবে বিধ্বস্ত হলো তার প্রমাণ মিলছিল না। ৩৩ বছর পর, ২০১৩ সালে ইতালির একটি আদালতের রায়ে প্রমাণ হয় বিধ্বস্তের ঘটনা। আদালত জানান, ওই একই এলাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর একটি যৌথ বিমান মহড়া চলছিল। সে সময় লিবিয়ার একটি বিমানকে লক্ষ্য করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভুলে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিকে আঘাত করে। তাতেই তা ভূপাতিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রে ভূপাতিত ইরানের উড়োজাহাজ
অভিজ্ঞ পাইলট মোহসেন রেজাইয়ান ছিলেন উড়োজাহাজটির ককপিটে। ৩৭ বছর উড়োজাহাজ চালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে সেদিনও বন্দর আব্বাস ছেড়েছিলেন তিনি। কে জানত সেই শেষ যাত্রা। ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়কার কথা। ইরানের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ‘ইরান এয়ার ফ্লাইট ৬৫৫’কে এফ-১৪ যুদ্ধবিমান ভেবে বসল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর টহল জাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্স। সঙ্গে সঙ্গে ছুড়ল সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল রিম-৬৬। এয়ারবাস এ৩০০ উড়োজাহাজটি ২৯০ জন যাত্রী ও ক্রুসহ বিধ্বস্ত হলো পারস্য উপসাগর এলাকায়। উড়োজাহাজের অনেক যাত্রীই হজের জন্য মক্কা যাচ্ছিলেন, ঘটনাটি মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করল তখন।

ইউক্রেনের ভুলের শিকার সাইবেরিয়ার উড়োজাহাজ
ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে রাশিয়ার নভোসিবিরস্কে যাচ্ছিল সাইবেরিয়ান এয়ারলাইনসের একটি টুপোলেভ টু-১৫৪ উড়োজাহাজ। ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর কৃষ্ণসাগরের ওপর থেকে উড়ে যাওয়ার সময় তা বিধ্বস্ত হয় সেখানেই। ৯ দিন পর, ইউক্রেন সরকার স্বীকার করে নেয় যে ভুলক্রমে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার এস-২০০ থেকে ছোড়া সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ৬৬ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সেই ঘটনায় প্রাণ হারান।

বেলারুশের কার্গো উড়োজাহাজে সোমালিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র
২০০৭ সালের ২৩ মার্চের কথা। বেলারুশের কার্গো উড়োজাহাজ ইলিউশিন টু-৭৬ সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে মানবিক সাহায্য ও কিছু সরঞ্জাম নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। মোগাদিসু তখন রীতিমতো রণক্ষেত্র। এরই মধ্যে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয় উড়োজাহাজটি। যদিও সোমালিয়া সরকারের দাবি ছিল উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ভূপাতিত হয়। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষ্যমতে, বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিধ্বস্ত হয়েছিল। সে ঘটনায় মারা গিয়েছিল ১১ জন মানুষ।

ইউক্রেনের উড়োজাহাজ ভেবে মালয়েশীয় উড়োজাহাজে আঘাত
২৮৩ যাত্রী এবং ১৫ ক্রু নিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই নেদারল্যান্ডস থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যাচ্ছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং ৭৭৭। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল অতিক্রম করার সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয় ফ্লাইট ১৭ খ্যাত উড়োজাহাজটি। যাত্রীদের সবাই মৃত্যুবরণ করে ঘটনার পরপরই। ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট একদল ইউক্রেনীয় বিদ্রোহী ইউক্রেনের উড়োজাহাজ ভেবে ভুল করে ছুড়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে।