মিলনমেলার প্রস্তুতি

প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেন আলাদা পূজামণ্ডপ
প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেন আলাদা পূজামণ্ডপ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপিত হলো গত বৃহস্পতিবার। ঐতিহ্যবাহী এই পূজায় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, সারা দেশ থেকেই হাজির হয় হাজারো মানুষ। এ যেন এক মিলনমেলা। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন ক্যাম্পাসে। ঢাকার বাইরে থেকেও এই মিলনমেলায় শামিল হতে আসেন অনেকেই। বাহারি পূজামণ্ডপ আর সুন্দর প্রতিমায় মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। আয়োজনটা এক দিনের হলেও ক্যাম্পাসের ছেলেমেয়েরা এর জন্য কাজ শুরু করেন এক মাস আগে থেকে। প্রস্তুতির মহাযজ্ঞটার কথাই আমরা আজ শুনব।

পূজার ১৫ দিন আগে জগন্নাথ হলে গেলে দেখবেন, বিভিন্ন বিভাগের পূজার ব্যানারে ছেয়ে গেছে জগন্নাথ হল। প্রতিটি বিভাগের আলাদা পূজা হয়। আবার প্রতিটি বিভাগের আলাদা ব্যাচ থাকে আয়োজনের দায়িত্বে। অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের সহায়তা করেন।

এক মাস আগেই নীলক্ষেতে ভিড় জমান জগন্নাথ হলের ছেলেরা। পূজার নিমন্ত্রণ কার্ড বানাতে হবে। প্রতিবারই থাকে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। কার্ড ও পূজামণ্ডপে থাকা চাই মৌলিকতা। প্রত্যাশা পূরণের চাপ তো আছেই। এসব কাজ করতে হয় ক্লাস আর পড়াশোনার ফাঁকে।

বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টির এক সুযোগ এই পূজা। তাঁদের কাছ থেকে পূজার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। দৌড়াতে হয় ঢাকার এ মাথা থেকে ও মাথা। ঢাকার বাইরে কুরিয়ার করে কার্ড পাঠানো হয়। বিরাট আয়োজন! পূজার আয়োজনের প্রস্তুতি যখন চলছে, তখন কথা হয় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র বরুণ বাগচীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে চাঁদা তুলতে বের হয়েছি। এখন সন্ধ্যা। দুপুরে খাওয়ার সময় পাইনি। তবু চাই, সবাই এসে যেন আনন্দ পায়।’

পরিকল্পনা সাজানোর পর, দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয় আগেই। দায়িত্ব ভাগাভাগির পর আবার দেখা যায়, সেদিনই ঘোষণা করা হয়েছে মিডটার্ম পরীক্ষার তারিখ। তবু সব সামলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। পূজা উপলক্ষে অনেক বিভাগ ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। তখন আবার ছুটতে হয় পৃষ্ঠপোষকদের (স্পনসর) কাছে। তবে এ ক্ষেত্রে একটা বড় ভরসার জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-আপুরা। বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানে গিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিলে অনেক দরজা খুলে যায়।

চারুকলা অনুষদের প্রতিমা গড়া হয় হলেই। শিক্ষার্থীরা কয়েক দিন রাতভর সেখানে কাজ করেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজ অনুষদের প্রতিমা নিজেরাই গড়েন তাঁরা। পূজার আগের দিন এই অনুষদের প্রতিমা স্থাপন করা হয় পুকুরের মধ্যে। পূজা শেষেও এটা থাকে। আগের দিন সন্ধ্যায় ছুটে আসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নিজেদের বিভাগের পূজার প্রস্তুতি দেখে যান। পূজার দিন এলেই হয়, কিন্তু মন যে মানে না! প্রাণের টানে এই ছুটে আসা।

পূজার আগের দিনগুলোতে হলে রাত ১০টার পর চোখে পড়বে, এখানে-সেখানে চলছে মিটিং। নিজেদের বিভাগের পূজাটাই যে সেরা করা চাই! আগের রাত পর্যন্তও দম ফেলার ফুরসত নেই। শুধু তো পূজামণ্ডপ আর প্রতিমা নয়, সারা দিন প্রসাদের ব্যবস্থাও থাকে। ক্যানটিনে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। হলের আবাসিক শিক্ষকের অনেকে রাত ১টা-২টা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন।

কথা হলো অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রাঞ্জল পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এর আগে তো কেবল মজাই করেছি। এবার পূজার দায়িত্ব পড়েছে আমাদের ওপর। মজা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি!’