আমার ইচ্ছে-পূরণ

সাত দিনের জন্য যুক্তরাজ্যে শিক্ষাসফরে গিয়েছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রী হোমায়রা সানজানা (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি: সংগৃহীত
সাত দিনের জন্য যুক্তরাজ্যে শিক্ষাসফরে গিয়েছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রী হোমায়রা সানজানা (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি: সংগৃহীত

যদি প্রতিটি স্কুলের ক্লাসরুমেই শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা করানো যায়, কেমন হয়? তা–ও আবার খেলাচ্ছলে! ঠিক এমন এক চিন্তাধারা থেকেই ‘অ্যাকটিভ সিটিজেনস ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রাম’–এর ‘ইচ্ছে-পূরণ’ নামক সামাজিক কার্যক্রম প্রকল্পটির জন্ম হয়। তখন কে জানত, ছোট্ট পরিসরে শুরু করা এই প্রকল্পের সুবাদে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাব যুক্তরাজ্যে, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আমন্ত্রণে!

বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম ডেমোক্রেসিওয়াচ থেকে আমি, হাঙ্গার প্রজেক্ট থেকে তানজিলা ইয়াসমিন এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে আবদুল্লাহ আল সায়েদ। আমরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা থেকে আলাদা সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বিশ্বের যতগুলো দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অ্যাকটিভ সিটিজেনস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সব দেশ থেকেই প্রতিবছর তারা কয়েকটি দেশের তরুণ প্রতিনিধি নির্বাচন করে সাত দিনের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ভিজিটের জন্য। সারা বিশ্বের যেসব তরুণ মূলত বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রমের প্রকল্পে সফলভাবে কাজ করছেন, তাঁদের একসূত্রে গেঁথে মেলবন্ধন ঘটানোই এর উদ্দেশ্য। ১০ বছরে পা দেওয়া অ্যাকটিভ সিটিজেনস কার্যক্রমের মূল কথাই হলো ‘গ্লোবালি কানেক্টেড, লোকালি এনগেইজড’। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের জানুয়ারির ১৮-২৫ তারিখ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ভিজিটে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, সুদান, ইংল্যান্ড, ইজিপ্ট, পোল্যান্ড ও ফিলিস্তিনের ২২ জন তরুণ প্রতিনিধি। প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে তাঁদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখছেন।

১৮ জানুয়ারি সকালে হিথরো বিমানবন্দরে নামার পর সেলসডন স্টেটের ঐতিহাসিক ডি ভ্যারি হোটেলে পৌঁছাই আমরা। পনেরো শতকে নির্মিত প্রাসাদটি একসময় ছায়াসংসদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু প্রায় এক শ বছর হতে চলল, এটি এখন হোটেল হিসেবে সুপরিচিত। প্রথম দিন নানা দেশের তরুণদের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলাম, মতবিনিময় করলাম। পরদিন আমাদের কার্যক্রম নিয়ে একটি অধিবেশন হলো। সেদিন বিকেলেই আমরা গেলাম টেমস নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়ানো যুক্তরাজ্যের সংসদে। সেখানে কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টির এমপিদের সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক নানা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এবং সেসবের সমাধান নিয়ে আলোচনা করলাম। জানলাম তাঁদের দেশের নানা রকম নীতি ও কৌশলের কথা।

পরদিন ছিল যুক্তরাজ্যের মানুষের সঙ্গে আরওভাবে পরিচিত হওয়ার পালা। আমাদের ২২ জনকে পাঁচটি দলে ভাগ করে পাঠানো হলো যুক্তরাজ্যের নানা অঙ্গরাজ্যে। কেউ গেল ম্যানচেস্টারে, কেউ সেন্ট্রাল লন্ডনে, কেউ নিউক্যাসল আর কেউবা নর্দার্ন আইল্যান্ডে। আমি আর আমার দল গিয়েছিলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়া প্রাচীন এক শহর হ্যালিফ্যাক্সে। সেখানে আমরা গেলাম টাউন হলে, মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর উষ্ণ অভ্যর্থনায় খুব ভালো লাগল। আলোচনা হলো তাদের ‘অল ওয়ান কালেকশন’ সংস্থা নিয়ে, যেখানে তাঁরা জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন। পরের দুদিনে আমরা সেখানকার বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ঐতিহাসিক পিস হলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী, গৃহহীন মানুষের আবাসন, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন সেখানকার অ্যাকটিভ সিটিজেনরা।

কমিউনিটি ভিজিট শেষে প্রতিটি দল ফিরে এল সেলসডনে। পরদিন সবাই নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিলাম একে অপরের সঙ্গে। এই অভিজ্ঞতা ও নতুন শেখা কৌশলগুলো আমরা আমাদের সমাজ বদলানোর প্রচেষ্টায় কাজে লাগাব বলে কথা দিলাম। নিজেদের কাছে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

যুক্তরাজ্যে কাটানো এ সাতটি দিন আমাদের প্রত্যেকের কাছেই ছিল জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। চাইলে তোমরাও এই বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারো। অ্যাকটিভ সিটিজেনস কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখতে পারো এই ওয়েবসাইট: britishcouncil.org.bd/en/programmes/society/active-citizens 

হোমায়রা সানজানা: তৃতীয় বর্ষ, শিশু ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ঢাকা