মানুষ মারা থেকে মানুষ গড়া

কয়েক দিন পরই ভবনের গায়ের চিরচেনা নামটি বদলে যাবে।
কয়েক দিন পরই ভবনের গায়ের চিরচেনা নামটি বদলে যাবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারখানা; কিন্তু নামেই যদি প্রকাশ পায় উল্টো অর্থ, তাহলে তো বিপত্তি। তেমন ঘটনাই ঘটেছিল নীলফামারীর ‘মানুষ মারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’–এর  ক্ষেত্রে। ৩ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নতুন নামকরণ হয়েছে মানুষ গড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রুমি সরকার বলেন, ‘আমরা যখন কোনো প্রশিক্ষণে বা সভায় শহরে যাই, সেখানে পরিচয় দেওয়ার সময় বিদ্যালয়ের নাম বললেই কৌতূহলী হয়ে অনেকে তাকান। কেউ কেউ আবার জিজ্ঞেস করে, আমরা মানুষ মেরেছি কি না বা এমন নাম কেন?’ বেশ কয়েকবার রুমি সরকারকেও ভরা মজলিশে দাঁড়িয়ে নামকরণের ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এতে অনেক সময় বিব্রত বোধ করতাম। এখন নাম পরিবর্তন হওয়ায় আমরা আনন্দিত।’

আসলে গ্রামের নামটিই মানুষ মারা। সেখান থেকেই বিদ্যালয়ের নামকরণ। গ্রামের অশীতিপর বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার বাপ–দাদার কাছে শুনেছি, একসময় এ গ্রামে কলেরায় অনেক মানুষ মারা যায়। তখন থেকে গ্রামের নাম হয় মানুষ মারা।’

গ্রামের নাম অনুযায়ী ১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টির নামকরণ হয় মানুষ মারা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলেও ওই নাম থেকে যায়। মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পাশাপাশি আমাদের এই গ্রামের নামও পরিবর্তন করা গেলে আমরা আরও খুশি হব।’

নাম বদলানোয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও খুশি
নাম বদলানোয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও খুশি

গ্রামের নাম নিয়ে অধিবাসীদের দুঃখবোধও কিন্তু কম নয়। মো. সাকের আলী নামে একজন বাসিন্দা যেমন বলছিলেন, ‘আমরা বাইরে কোথাও গিয়ে গ্রামের নাম বললে মানুষজন চমকে ওঠেন। তাঁরা আমাদের ভালো চোখে দেখেন না। আমরা বিব্রত হই।’

সাকের আলী জানালেন, গ্রামের নামও পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের নামটি পরিবর্তন হওয়ায় অনেক খুশি তিনি।

সেই খুশির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, ‘নেগেটিভ থেকে আমরা পজিটিভে এসেছি। এতে গ্রামের বাসিন্দা, অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা সবাই খুশি।’

নীলফামারীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানালেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের জুন মাসে শ্রুতিকটু নাম থাকলে সংশোধনের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কমিটি সভা করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় গণ্যমান্য ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উপজেলা শিক্ষা কমিটির কাছে নাম পাঠান। উপজেলা থেকে জেলায় প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নাম পাঠানো হয়।

চলতি মাসের ৩ ফেব্রুয়ারি মানুষ গড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। নামটি জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী দিয়েছেন বলেও জানান তাজুল ইসলাম।