কোচিংয়ে ভর্তির টাকায় ক্রিকেট একাডেমিতে

ছেলে রাকিবুল হাসানের জন্য গর্ব করেন মা রোমেলা বেগম ও বাবা শহীদুল ইসলাম। ছবি: সুমন ইউসুফ
ছেলে রাকিবুল হাসানের জন্য গর্ব করেন মা রোমেলা বেগম ও বাবা শহীদুল ইসলাম। ছবি: সুমন ইউসুফ

২০১২ সালের কথা। কোচিং সেন্টারে ভর্তির জন্য বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ছেলে ভর্তি হয়ে যায় ধানমন্ডির ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অঙ্কুর একাডেমিতে। ছেলের এমন কাণ্ডে বাবার রাগ করার কথা থাকলেও ছোট মানুষ না বুঝে এমনটা করেছে ভেবে একদম রাগ করেননি।

বাবা সেদিন ছোট ভেবে রাগ না করলেও ছেলে আজ অনেক বড় হয়েছে। বয়স এখনো ১৯ পার না হলেও তাঁর নাম এখন সারা দেশের মানুষ জানে। সেই ছোট ছেলের নাম রাকিবুল হাসান। বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় তিনি।

রাকিবুল হাসানের বাবা শহীদুল ইসলাম। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাঁশাটি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তবে শহীদুল ইসলাম প্রায় ৪০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। পেশায় গাড়িচালক। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। বছরে কয়েকবার আসেন গ্রামের বাড়িতে।

শহীদুল ইসলাম জানান, তাঁর ছেলে যে ক্রিকেটপাগল সেটা শুরুতে তাঁরা বুঝতে পারেননি। বাবার স্বপ্ন ছিল রাকিবুল বড় হয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বড় সরকারি কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু রাকিবুল পড়াশোনার চেয়ে ক্রিকেট খেলায় বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন। কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার টাকা নিয়ে ভর্তি হন ক্রিকেট একাডেমিতে। অঙ্কুর একাডেমির কোচ ওয়াহেদুল গনিই রাকিবুল হাসানের ক্রিকেট অভিভাবক। রাকিবুল কোথায় খেলবেন, কীভাবে খেলবেন,
এসব ওয়াহেদুল গনিই নির্ধারণ করতেন।

দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে রাকিবুল দ্বিতীয়। বাবা শহীদুল ইসলামও একজন সংগ্রামী মানুষ। গ্রামের বাড়িতে ছিল অভাব। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি চাচার সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে আসেন। পরে আর গ্রামে ফিরে যাননি। ঢাকায় বাসচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা শহীদুল ইসলাম বর্তমানে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসের চালক। রাকিবুলের মা রোমেলা বেগম গৃহিণী।

গ্রামের বাড়ি ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে। সেখানে রাকিবুলের একজন ফুফা থাকেন। বিশ্বকাপ জয়ের দিনেও গ্রামের বাড়িতে ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগ। রাকিবুলের এমন
‍কৃতিত্বের খবরে গত বুধবার দুপুরে রাকিবুলদের গ্রামে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেয় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ
সমিতি-৩।