অভিষেকের অনুপ্রেরণা মাশরাফি

বাবা, মা ও ভাইকে নিয়ে অভিষেকের পরিবার। ছবি: সংগৃহীত
বাবা, মা ও ভাইকে নিয়ে অভিষেকের পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

নড়াইল। চিত্রা নদী। ডানপিটে। নড়াইল এক্সপ্রেস। এই শব্দগুলোর সঙ্গে মিশে আছে খুব চেনা একটা নাম—মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেদিন অভিষেক দাসের গল্পেও এই শব্দগুলোই ঘুরেফিরে এল।

ছোট থেকেই ভীষণ ডানপিটে অভিষেক দাস। দল বেঁধে খেলাধুলা আর বাড়ির পাশে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা ছিল নিত্যদিনের কাজ। তাই প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতেন। এ নিয়ে শাসনও করতেন বাবা অসিত দাস। আর শাসন করলেই রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যেতেন পাশের জ্যাঠার বাড়ি আর নয়তো কোনো বন্ধুর বাড়িতে।

অসিত দাস বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলে আমার ছেলে খেলবে স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো। খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে যখন ট্রায়াল হয়, তখনো ভাবিনি অভিষেক ট্রায়ালে টিকে যাবে। চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুশীলনে যখন ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তখন মনে মনে ভাবতে শুরু করেছি ও একটা কিছু করে ফেলবে।’

অসিত দাসের বাড়ি নড়াইল পৌরসভার বাধাঘাট চত্বরে। অনূর্ধ্ব–১৯ দলে সুযোগ পাওয়াটা অভিষেকের জন্য সহজ ছিল না। পারিবারিক অসচ্ছলতার পাশাপাশি অনেক প্রতিবন্ধকতাও টপকাতে হয় তাঁকে। ২০১৭ সালে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে যখন বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রায়াল হয়, খেলা দেখে বিসিবির নির্বাচক রাশেদ ইকবাল অভিষেককে বাছাই করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে খুলনা থেকে তাঁর নাম বিসিবিতে পাঠানো হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাশরাফির বাবা
গোলাম মুর্তজাসহ খুলনার কিছু কর্মকর্তার উদ্যোগে অভিষেক ক্যাম্পে সুযোগ পান।

১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অভিষেকের বাড়িতে গেলে মা–বাবা দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। কুশলাদি জানতে চাইলে প্রথমেই প্রাণখুলে হাসি আর হাসি। অসিত দাস বলেন, ‘ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি, মানত করেছি বাংলাদেশ যেন যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। ঈশ্বর আমাদের ডাক শুনেছেন। আমাদের পরিবার আশা করে
অরণ্য যেন মাশরাফির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মাশরাফিসহ নড়াইল তথা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল
করতে পারে।’

অভিষেকের গৃহিণী মা করুণা দাসের মুখের হাসি যেন ফুরায় না। তিনি বলেন, ‘এত আনন্দ জীবনে কোনো দিন পাইনি। আমাদের
সন্তান সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের সন্তান। বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

অভিষেকদের পারিবারিক সচ্ছলতা ছিল না, এখনো নেই। বাবার একটি কাপড়ের দোকান ছিল। অর্থের টানাপোড়েনে দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা অভিষেক নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। ছোটবেলা থেকে অভিষেক ব্যাডমিন্টন খেলতেন। জেলা পর্যায়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। পরে মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্রিকেট খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হন। নড়াইল বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে বেসিক ক্রিকেট ক্লিনিকের ক্রিকেট কোচ সৈয়দ মঞ্জুর তৌহিদের কাছে অনুশীলন করেছেন। কখনো রাজীব বিশ্বাসের কাছে, আবার কখনো আতাউর রহমান ক্রিকেট একাডেমির কোচ ইমরুলের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমন প্রশিক্ষণেই তো গড়ে উঠেছেন অভিষেক, দিনে দিনে নিজের যোগ্যতা চিনিয়েছেন নড়াইল ছাপিয়ে বাংলাদেশ, দেশ ছাপিয়ে
বিশ্ব ক্রিকেটে।