বাবা কাজ করছিলেন অন্যের জমিতে

শাহিন আলমের মা সাতিনা বেগম ও বাবা সাহাদাৎ হোসেন। ছবি: লেখক
শাহিন আলমের মা সাতিনা বেগম ও বাবা সাহাদাৎ হোসেন। ছবি: লেখক

শাহিন আলমদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের যমুনা পাইকপাড়া গ্রামে। আগেও একবার বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম। সেদিন বেশ কষ্টে খুঁজে নিতে হয়েছিল বাড়িটি। ১১ ফেব্রুয়ারি সেই পথেই যখন শাহিনের বাড়ির কথা জানতে চাইলাম, লোকজন শুধু বাড়ির পথই দেখালেন না, সঙ্গেও এলেন বাড়ি পর্যন্ত।

বাড়িতে গিয়ে শাহিন আলমের বাবা সাহাদাৎ আলীকে পাওয়া গেল না। দূর দেশে বিজয়কেতন উড়িয়ে ছেলে যখন অভিনন্দন স্তুতিতে ভাসছেন, বাবা তখন কাজ করছিলেন মাঠে। শাহিন আলমের বাবা পেশায় দিনমজুর। গ্রামেরই একজনের জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন সেদিন।

শাহিন আলমের বাবার সাক্ষাৎ মিলল ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসেছেন। হাতে–পায়ে মাটি। চোখমুখও কেন যেন উচ্ছ্বাসহীন। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে যখন কথা বলতে এলেন, তখন ছেলের কথাই জানতে চাইলাম। বলছিলেন, ‘ওই তো বিদেশ গেইছে খেলবার। রাইতোত খেলা দেখছি। জিতছে। ভালো লাগছে।’ কিছুটা দম নিয়ে আবার বলেন, ‘আজ কামোত যাওয়ার সময় শুনি সবাই ছাওয়াক নিয়া কথা কবার নাগছে।’

পাশেই ছিলেন শাহিনের মা সাতিনা বেগম।  তাঁর মধ্যে কিছুটা উচ্ছ্বাসের আঁচ পাওয়া গেল। তিনি বলছিলেন, বাড়িতে গ্রামের লোকজন আসছেন। বাহবা দিচ্ছেন। যাঁরা আসছেন, তাঁদের সবার চোখেমুখে খুশির ঝলক। সেই ঝলক মুখে ফুটিয়ে তিনি বলেন ‘ছোট থাকি খেলাধুলার ঝোঁক উয়ার (ওর)। সউগ বাদ দিয়া সারা দিন খেলার পাছত নাগি থাকে। টেলিভিশনে খেলা হলে কোনো দিকে খেয়াল নাই। আমরা গরিব মানুষ, ছাওয়াক তেমন খাবার দিবার পাই নাই। অমনি কষ্ট করি বড় হইছে। একটা ছাওয়া। যেটা ভালো বোঝে করুক।’

ভিটেমাটি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই শাহিন আলমের পরিবারের। কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসান ও সংস্থার ক্রিকেট কোচ বিজন কুমার দাসের কাছে আগেই জেনেছি শাহিন আলমের ক্রিকেট দলে ভেড়ার কথা। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইয়ের সময় শাহিন কুড়িগ্রামে আসেন। নির্বাচিত হন। এরপর জেলা ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান।

শাহিন আলম ক্রিকেটযাত্রায় অভিভাবক হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন কুড়িগ্রামের ফিরোজ আলমকে। তিনি জানালেন, ২০১৭ সালে বিকেএসপি জেলাভিত্তিক নির্বাচক কমিটি শাহিনের বোলিং দেখে বাছাই পর্বে সুযোগ দেয়। এরপর বিকেএসপি থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমানে এইচএসসি পড়ছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ক্রিকেটের মতো ব্যয়বহুল খেলা চালিয়ে যেতে পারছিল না সে। একসময় পাশে দাঁড়াই
ভাইয়ের মতো। এরপর থেকে সুখেদুঃখে ওর সঙ্গে আছি। কুড়িগ্রামের জন্য অনেক সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে সে।’