শাহাদাতের মায়ের মতো খুশি আর কে

মা ফেরদৌস বেগম ও ভাই আবুল হোসেনের সঙ্গে শাহাদাত। ছবি: সৌরভ দাশ
মা ফেরদৌস বেগম ও ভাই আবুল হোসেনের সঙ্গে শাহাদাত। ছবি: সৌরভ দাশ

শাহাদাত হোসেনের বয়স তখন সাত বছর। পরিবারে নেমে এল দুঃসময়ের কালো মেঘ। শাহাদাতের বাবা আবদুস ছবুর ক্যানসারে আক্রান্ত। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। পেশায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক ছিলেন আবদুস ছবুর। সেই সুবাদে চট্টগ্রামে বসবাস তাঁদের। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহাদাত সবার ছোট। এই সময় সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠতে হলো। বাসাভাড়াসহ যাবতীয় খরচ চালাতে কূলকিনারা করতে পারছিল না পরিবারটি। শাহাদাতের বড় ভাই আবুল হোসেন কাঁধে তুলে নিলেন সংসারের দায়িত্ব। একটি ভাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালানো শুরু করলেন তিনি।

এগুলো ২০১০ সালের কথা। শাহাদাত তাই দারিদ্র্য বুঝেছেন ছোটবেলাতেই। একদিকে বেঁচে থাকার যুদ্ধ, অন্য দিকে নিজের শখের ক্রিকেটকে আগলে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা। দুটোই সামলে নিয়ে এগিয়েছেন। এ যাত্রায় পাশে ছিলেন তাঁর বড় ভাই আবুল হোসেন। শাহাদাতের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন জিইয়ে থাকে তাঁর একান্ত সহযোগিতায়।

শাহাদাতের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামে। তবে তাঁরা থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। শাহাদাত চট্টগ্রামের এমএস কলেজে প্রথম বর্ষ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়ছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতের মা ফেরদৌস বেগম মুঠোফোনে এসব কথা বলছিলেন। বলছিলেন, ‘শাহাদাত ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটপাগল। ব্যাট কিনে দেওয়ার মতো সংগতি আমাদের ছিল না। আমি নিজে
কাঠ জোগাড় করে ব্যাট বানিয়ে দিতাম।’ 

ছেলের কীর্তিতে কেমন লাগছে? ফেরদৌস বেগম বলেন, ‘আমার মতো খুশি আর কে হবে! ব্যাগের বোঝা কাঁধে নিয়ে অনুশীলন করার জন্য হেঁটে হেঁটে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যেত, হেঁটে হেঁটে শোলকবহরের বাসায় আসত। দীর্ঘ পথ নিয়মিত হেঁটে যাওয়া–আসার কারণে দুই পায়ে সাতটি ফোসকা পড়ে শক্ত হয়ে গিয়েছিল।’

মুঠোফোনের ওপাশে মায়ের পাশেই ছিলেন শাহাদাতের বড় ভাই আবুল হোসেন। ‘চার বছর বয়স থেকে শাহাদাতের হাতে ব্যাট-বল তুলে দিয়েছিল আব্বু। বারান্দায় খেলার সময় আব্বু বল করত, শাহাদাত ব্যাট করত, আমি থাকতাম উইকেট কিপার।’ অতীত স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে আবুল হোসেনের যেন গলা ধরে আসে। বলেন, ‘বাবার কথা মনে পড়লে আমার চোখে পানি চলে আসে।’ 

আবুল হোসেন জানালেন, ২০১২ সালে তাঁর ক্রিকেটার বন্ধু সুদীপ্ত দেব বলতেন, শাহাদাত ভালো খেলে। তাঁর সহযোগিতায় ছোট ভাই দীপুকে ইস্পাহানি একাডেমিতে ভর্তি করে দেন আবুল হোসেন। বললেন, ‘শাহাদাতের খেলার হাতেখড়ি সুদীপ্ত দেবের হাতে। একটা সময় ভাইকে টাকা দিতে পারতাম না। তখন সুদীপ্ত ব্যাগ পর্যন্ত দিয়েছে। সুদীপ্ত ও শাহাদাতের বন্ধুরা তাকে ব্যাট–বলসহ খেলার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করত।’