আমাদের আকবরনামা

রংপুরে বাড়ির পথে আকবর আলী এভাবেই হাত মেলালেন এক শিশুর সঙ্গে। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুরে বাড়ির পথে আকবর আলী এভাবেই হাত মেলালেন এক শিশুর সঙ্গে। ছবি: মঈনুল ইসলাম

আকবরের অদম্য ইচ্ছে ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু ব্যাট–প্যাড–গ্লাভস কেনার মতো সামর্থ্য নেই। পাঁচ ভাইবোনের পড়াশোনা ও সংসার চালাতে বাবার ত্রাহি অবস্থা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আকবর ছুটে যান রংপুরের অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন তখন। একাডেমির প্রশিক্ষক অঞ্জন সরকার আকবরের ইচ্ছার আঁচ পেলেন। পাশে এসে দাঁড়ালেন। ক্রিকেটের সব উপকরণ কিনে দিলেন। শুরু হলো সেখানেই ক্রিকেটের অনুশীলন। সেই অনুশীলন আর অঞ্জনের প্রশিক্ষণ থেকে আজ আকবর হয়ে উঠেছেন অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।

অঞ্জন সরকার জানালেন, আকবর যখন রংপুরের লায়ন্স স্কুল ও কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, ঠিক তখনই একদিন ছুটে আসে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে। ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হতে যে ১০০ টাকা দরকার, সেটাও আকবরের কাছে ছিল না। সেই টাকা দিয়েছিলেন তাঁরই নিকটাত্মীয় আলতাফ হোসেন। প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমি আকবরের কাছে কোনো টাকা নিত না। তিনি বলেন, জুম্মাপাড়ার বাড়ি থেকে হেঁটে জিলা স্কুল মাঠে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করত আকবর। সেই আকবর আজ বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছে। ভাবতেই বুকটা ভরে ওঠে

রংপুর নগরের পশ্চিম জুম্মাপাড়ায় আকবরের বাবার সাদামাটা পুরোনো বাড়ি। তিনটি ঘর। এখানেই মা-বাবা, আকবরসহ চার ভাইবানের বাস। আকবর আলীর বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা। শহরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ছোট একটি দোকান চালান। ছেলের বিশ্বজয়ের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আনন্দের ভাষা নেই। বাড়িতে দুঃখের ভেতর আনন্দের ঢেউ। পরিবারে শোকের ছায়ায় এ যেন এক অন্য
রকম আনন্দ।

আনন্দের মধ্যে শোক হচ্ছে আকবরের একমাত্র বোন খাদিজা খাতুনের মৃত্যু। দক্ষিণ আফ্রিকায় আকবর যখন খেলছেন, বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—ঠিক তখনই বোনের মৃত্যু সংবাদ। তারিখটা ২২ জানুয়ারি। বুকে দুঃখ চেপে ধরে আকবর মাঠে খেলে গেছেন। গৃহিণী মা সাহিদা বেগম বলেন, খাদিজা বেঁচে থাকলে ভাইয়ের এই খবরে কী যে খুশি হতো।

আকবর ২০১২ সালে দিনাজপুর বিকেএসপিতে ক্রিকেট ক্যাম্পে তিন দফায় অংশ নিয়ে তাঁর যোগ্যতা অক্ষুণ্ন রাখেন। ২০১৩ সালে ঢাকার বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান। বিকেএসপির হয়ে জাতীয় ক্রিকেটের অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭ ও ১৮ দলেও খেলেছেন। আকবর বিকেএসপিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন।