ছেলের জন্য ডাইনোসর মুশফিক

>জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের উদ্‌যাপনটা অনেকের মনে আছে। ডাইনোসরের মতো ভঙ্গি করে উদ্‌যাপনটা ছিল ছেলের জন্য। কেন ডাইনোসর? সেই গল্পও সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করা মুশফিক। সেই গল্পই সবিস্তার শোনালেন প্রথম আলোকে, ঘরে বসে মাঠের উদ্‌যাপনও করলেন বাবা-ছেলে! লিখেছেন শামসুল হক

রাজধানীর বনানীর ২৮ নম্বর সড়কের বাড়িতে যখন পৌঁছাই তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। এই বাড়ির একটি ফ্ল্যাটেই থাকেন মুশফিকুর রহিম। আগেই কথা হয়েছিল, তাই ঘরের দরজা খুলতে খুলতেই স্বভাবসুলভ সম্ভাষণ তাঁর। বসার ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন মুশফিক। পর্দায় দৃষ্টি রেখে যখন কথা শুরু করি, হুট করে চলে আসে শাহরুজ রহিম। মা–বাবার আদরের মায়ান। এই তো সেদিন পৃথিবীতে এল ছেলেটা। তার বয়স এখন দুই বছর।

শাহরুজ কাছে এলে আদর করে জিজ্ঞেস করি, ‘বাবা সেদিন কেমন করেছিল, দেখাও তো!’

ছেলে শাহরুজ রহিম ডাইনোসর পছন্দ করে বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পর বাবা মুশফিকুর রহিম উদ্‌যাপনটা করেছিলেন ডাইনোসরের মতো। সেই উদ্‌যাপনই বাবা–ছেলে নিজের ঘরে করলেন খেলার ছলে। ছবি: শামসুল হক
ছেলে শাহরুজ রহিম ডাইনোসর পছন্দ করে বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পর বাবা মুশফিকুর রহিম উদ্‌যাপনটা করেছিলেন ডাইনোসরের মতো। সেই উদ্‌যাপনই বাবা–ছেলে নিজের ঘরে করলেন খেলার ছলে। ছবি: শামসুল হক

বাবা মুশফিকের খেলা সে টিভির পর্দায় দেখে। বাবার চেহারাটা ভেসে উঠলে, সে ‘বাবা, বাবা’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরির সেই উল্লাসের সময়ও নিশ্চয়ই চিৎকার করে উঠেছে। তার বাবা যে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে সেটা উৎসর্গ করেছে তাকেই। কিন্তু আমার কথা শুনে শাহরুজ বাবা মুশফিকের দিকে চেয়ে থাকে। মুশফিক নিজেই তখন আবার সেই মাঠের মুশফিক হয়ে যান। ডাইনোসর উল্লাস দেখান ছেলেকে। তখন বাবার সঙ্গে তাল মেলায় ছেলেও।

ততক্ষণে চায়ের টেবিলে শাহরুজের খেলনাগুলো হাজির। ডাইনোসর, হাতি, মুরগি—কী নেই! মুশফিক বলেন, ‘ম্যাচ শেষে বাড়িতে ফিরেই ওকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। সেদিন হাতিটা কিনে নিয়েছে। খেলনা হাতিও ওর ভীষণ প্রিয়।’ এসব প্রাণহীন জীবজন্তু শাহরুজের খেলার সঙ্গী। সে বেশি পছন্দ করে ডাইনোসর। তাই ছোট–বড় অসংখ্য ডাইনোসর তার সংগ্রহে। কীভাবে ডাইনোসরের ভক্ত হলো সেই গল্প শোনান মুশফিক। একবার ব্যাটারিচালিত একটি ডাইনোসর এনে দিয়েছিলেন। সেটার আবার মুখ দিয়ে আগুন বের হতো (না, সেই আগুন ভয়ংকর কিছু নয়)। কিন্তু ছেলে শাহরুজ সেটাকে ভয় না পেয়ে নিল আপন করে। সেই থেকে তার ডাইনোসরপ্রীতি।

বাসার সময়টুকু ছেলে শাহরুজ রহিমের সঙ্গেই কাটে বাবা মুশফিকের। ছবি: লেখক
বাসার সময়টুকু ছেলে শাহরুজ রহিমের সঙ্গেই কাটে বাবা মুশফিকের। ছবি: লেখক

এক ফাঁকে এলেন মুশফিকের স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াত। ছেলের প্রাণীপ্রেম দেখে তিনিও কিছু গল্প শোনালেন। মুশফিকদের বাড়িতে গেলে কীভাবে দাদার সঙ্গে ছাগল, গরু-বাছুরের পিছে ছোটে শাহরুজ। কথা বলতে চায় ওদের সঙ্গে।

মা-বাবা যে তাকে নিয়েই কথা বলছেন, ছোট শাহরুজ যেন তা বুঝল। বুঝল বলেই কিনা মিটিমিটি হাসিতে তাকাল মায়ের মুখের দিকে, বাবার দিকে। তখনই ডাইনোসরটা নিয়ে বাবা-ছেলে উল্লাস করল। ক্যামেরা তৈরিই ছিল। কিছু ছবি তুলে ফেললাম টপাটপ।

স্মরণীয় ইনিংসের পর মুশফিকুর রহিমের সেই ডাইনোসর উদ্‌যাপন
স্মরণীয় ইনিংসের পর মুশফিকুর রহিমের সেই ডাইনোসর উদ্‌যাপন

২৪ ফেব্রুয়ারির মিরপুরের উল্লাস যেন ফিরে এল বনানীর ছোট ঘরটায়। মুশফিকের সেই উদ্‌যাপন নিয়ে শুরুতে কিন্তু কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে হলো সেই কৌতূহলের অবসান। অনেকেই তো দেখেছে সেই দৃশ্য—জিম্বাবুয়ের এন্দলোভুকে কাট শটে বাউন্ডারি মেরে দ্বিশতক নিশ্চিত করে হেলমেট, ব্যাট ছেড়ে দুই হাত আকাশে তুলে প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুশফিক। শূন্যে চুমু ছুড়ে দিয়েই চওড়া হাসিতে করলেন ব্যতিক্রম এক উদ্‌যাপন। সংবাদ সম্মেলনে খোলাসা করে বলেন তাঁর ডাবল সেঞ্চুরি উদ্‌যাপনের গল্প, ‘আগে থেকে ওভাবে চিন্তা করিনি। (ডাবল সেঞ্চুরি) করার পর এভাবে করতে হবে, সেটিও ভাবিনি। আমার ছেলে ডাইনোসর খুব পছন্দ করে। ও ডাইনোসর দেখলে খুব মজা পায়। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর সেটিই শুধু দেখাতে চেয়েছি। ডাবল সেঞ্চুরিটা আসলে ওর জন্য।’

২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেই ডাইনোসরের গল্প শুনতেই মুশফিকের বাসায় যাওয়া।