সুগন্ধ দিবস

‘আমারো ইচ্ছে করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো/ গেলাসে গেলাসে পান করি’—প্রকৃতির রূপে-গন্ধে মাতাল কবি জীবনানন্দ দাশ এমনই অভিজাত শব্দে, রূপকে-উপমায় ঘ্রাণ বা সৌরভের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। সুগন্ধ-সৌরভের প্রতি মানুষের এই মুগ্ধতা সহজাত। সুগন্ধের যেমন হাজারটা রকম আছে, তেমনি মানুষের পছন্দেরও রয়েছে অদ্ভুত সব রকমফের। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ভালো লাগে কারও, কারও ভালো লাগে নতুন জুতার চামড়ার গন্ধ। ছেলেবেলায় মোটরসাইকেলের সাইলেন্সারের ধোঁয়ার গন্ধ কিংবা বৃষ্টি শেষে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ বুক ভরে টেনে নিয়েছি কত, তার ইয়ত্তা নেই। আলকাতরার গন্ধ কিংবা ব্লিচিং পাউডারের গন্ধও ভালো লাগে কতজনের! নানা রকম ফুলের সৌরভের স্তুতি তো সর্বজনীন। ছোটবেলার সেই ‘কাজলা দিদি’র পঙ্​ক্তি মনে আছে হয়তো, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই।’ সুঘ্রাণের প্রতি মানুষের এই আকর্ষণ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুগন্ধির। ধীরে ধীরে সুগন্ধি দ্রব্য হয়ে উঠেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। রুচি এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে গভীরভাবে। 

সুগন্ধ-সৌরভ নিয়ে এত সুরভিত আলোচনা কেন? আজ ২১ মার্চ, আন্তর্জাতিক সুগন্ধ দিবস। দিবসটির উদ্​যাপন কবে কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা অবশ্য ঠিক করে জানা যায় না। যেমন জানা যায় না পারফিউমের উৎপত্তির সর্বজনগ্রাহ্য ইতিহাস। উৎপত্তিস্থল হিসেবে মেসোপটেমিয়ার (বর্তমান ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরব) নামই পাওয়া যায় বেশি। বিশ্বের প্রথম নারী রসায়নবিদ তাপ্পুতীর কথা রয়েছে সুগন্ধির বিভিন্ন ইতিহাসে। তিনি মেসোপটেমিয়ায় ফুল, তেল, গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতেন সুগন্ধি। পরে রোমান ও পারসিয়ানরা সুগন্ধি বানানোর প্রক্রিয়া আরও আধুনিক করে তোলে। চার হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সুগন্ধির কারখানার সন্ধানও পাওয়া গেছে সাইপ্রাসে। এখানে ফল ও ফুলের ব্যবহার করা হতো সুঘ্রাণ তৈরিতে।

দিনটাকে একটু ভিন্ন আমেজে উদ্​যাপন করতেই পারেন। নতুন কোনো পারফিউম কিনে দিতে পারেন প্রিয় মানুষটিকে; কিংবা একগুচ্ছ সুগন্ধি ফুল। মনের মানুষের খোঁপায় জড়িয়ে দিতে পারেন সুগন্ধি বেলির মালা। নিজে হাতে রোপণ করতে পারেন ফুলের চারা। যা হয়তো দিন কতক পর আপনার বাড়িটাকে সুবাসিত করে তুলবে। 

ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে
কবীর হোসাইন