করোনার সময়ে জীবন যেমন

সন্তানের সঙ্গে লেখক
সন্তানের সঙ্গে লেখক

প্রথম ধাক্কাটা টের পেলাম ১৪ মার্চ শনিবার সকালে, যখন দ্বাদশ গ্রেডের (কে-১২) স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেল। প্রাক্​বিদ্যালয়গুলো অবশ্য এর আগেই বন্ধ করা হয়েছে। তবে তার চেয়েও বেশি বিপদে পড়ে গেলাম যখন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের স্কুলগুলোও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আমার দেবর এই স্কুলে পড়ে। তার বয়স ২০। কথা বলতে পারে না। অটিজম ও ডাউন সিনড্রোম—দুটিই তার আছে। দাঁত মাজা থেকে শুরু করে মুখ মুছে দেওয়া—সবকিছুর জন্যই তাকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। বুঝতেই পারছেন, আমাদের পরিবার তার স্কুলের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। তা ছাড়া এখন তো আমাদের শুধু বাচ্চাদের পড়ালেই হবে না, অফিসের কাজকর্মও বাসায় বসে ভালোভাবে সামলাতে হবে।

প্রথম দিন: ক্ষতি ও ভয়
সকালে জানতে পারলাম, রচেস্টার আইটি ইউনিভার্সিটিতে আমাকে ‘অত্যাবশ্যক কর্মী’ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। খুব খুশি হয়ে খবরটি মাকে জানানোর জন্য ফোন করতে যাচ্ছিলাম, আর ঠিক তখনই হঠাৎ উপলব্ধি করলাম, নতুন পদে যোগ দিলে তো আমাকে জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো সময় বাড়ির বাইরে যেতে হবে! কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হতে হবে সশরীর, যেটা এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়।

খাবারদাবার নিয়েও মনে একটা খচখচানি কাজ করতে লাগল। বাচ্চারা যেহেতু বাসাতেই থাকবে, বাড়তি অনেক খাবারের প্রয়োজন হবে। একটা কথাই মাথায় আসছে, আগামী দুই সপ্তাহ চালানোর মতো যথেষ্ট খাবার কি বাসায় আছে? টয়লেট পেপারের কথা না হয় বাদই দিলাম, বাজারে চিকেন নাগেটও তো চোখে পড়েনি।

প্রথম দিন: জয় করার গল্প
বাইরে কনকনে ঠান্ডা, তার মধ্যে উপভোগ করার মতো একচিলতে রোদও ছিল এদিন। আমাদের সন্তান ওয়ালি আর আরিক পরিত্যক্ত এক ওয়ার্কশপ থেকে বিস্তর বাতিল জিনিসপত্র জড়ো করে মজা করছে। সেগুলোর মধ্যে শেষমেশ তারা একটা মজার কাঠের দুরবিন আবিষ্কার করে ফেলল। তারপর লুকোচুরি খেলে আর কিছুক্ষণ স্কুটার চালাল দুজন। তারপর ছবি এঁকে, প্লেডো দিয়ে এটা-সেটা বানিয়ে, লিখে আর পড়ে বেশ ভালো সময়ই কাটালাম আমরা। অনেক দিন হলো আমার তিন বছর বয়সী বাচ্চাকে কোনো গল্পের বই পড়ে শোনানো হয়নি। কাজেই সেই সুযোগ পাওয়া একটা আনন্দের ঘটনা হয়ে উঠল।

ওয়ালি এই প্রথম অনলাইনে তায়কোয়ান্দোর ক্লাস করল। এখন এই বিচ্ছিন্ন দিনগুলোতে হয়তো এই একটা বিষয়ের প্রতি ওর আগ্রহটা অটুট আছে।

একটা লম্বা সময়ের জন্য হয়তো আমাদের সবাইকে এই বিচ্ছিন্নতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আশা করছি, এই দিনগুলো শেষে আমরা আরও বিনয়ী ও সহিষ্ণু হয়ে ফিরব।

নাফিসা আলম
ফিন্যান্সিয়াল বিজনেস অ্যানালিস্ট, ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্র
ইংরেজি থেকে অনূদিত
১৭ মার্চ ২০২০

নিজের বাড়িতে সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের শিক্ষক এহসান হক
নিজের বাড়িতে সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের শিক্ষক এহসান হক